বেহালা শিক্ষন কেন্দ্রের মাধ্যমে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা দিয়ে চলেছেন সুজিত বিশ্বাস

শিল্পী পালিতঃ আজকের আত্মকথা বিভাগে বেহালা সঙ্গীত শিল্পী সুজিত বিশ্বাসের কথা মেলে ধরা হচ্ছে।আপনারা সবাই খবরের ঘন্টা ওয়েবপোর্টাল এবং ফেস বুক পেজকে শেয়ার ও লাইক করে এগিয়ে যেতে সহায়তা করুন।

আমার নাম সুজিত বিশ্বাস।এখন আমার বাড়ি শিলিগুড়ি দেশবন্ধুপাড়ার ইনডোর স্টেডিয়ামের বিপরীতে। তৃপ্তি কুঞ্জ।আমার শৈশব শুরু হয়েছিল তখনকার গ্রাম্য শহর হলদিবাড়িতে। ঠাকুমার কাছে আমার ছেলেবেলা কেটেছে। একটু বড় হয়ে শিলিগুড়িতে বাবা মায়ের কাছে চলে আসি ও হাইস্কুলের পাঠ শুরু হয়, শুরু হলো নতুন অধ্যায় ।
হলদিবাড়ি থাকতেই ঠাকুমার উৎসাহে বাঁশের বাঁশির প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। হুজুর সাহেবের মেলা থেকে প্রত্যেকবার একটি করে বাঁশি কিনে দিতেন, সেটা বাজাতে বাজাতে দেখলাম একটু আধটু গানের সুর বাজাতে পারি। সেই আমার সংগীতের প্রথম পাঠ।হলদিবাড়ির সবুজ মাঠেঘাটে বন্ধুদের নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে বেড়াতাম। তবে তা প্রথাগতভাবে শেখা হয়ে ওঠেনি।
মনের ভিতরে সংগীত গুনগুন করছে কিছু তো চাই, একটা মাউথ অর্গান জোগাড় করে শুরু হলো চেষ্টা। কিছু দিনের অভ্যাসে গান বাজাতে লাগলাম। প্রথম হাতেখড়ি হলো স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে, সে এক উত্তেজনাময় মুহূর্ত। মনে আছে বাজিয়েছিলাম দুটো গান । আর সেই থেকে পাড়ায় পাড়ায় বাজিয়ে বেড়াতাম সেইসময়কার সব ফিল্মি গান। কিন্তু এক অস্থিরতা আমাকে তাড়া করে বেড়াতো যে এমন কিছু বাজাতে চাই যে গুরুর শিক্ষা ছাড়া হবেনা। হঠাৎ একটি ছেলেকে দেখলাম বেহালায় সুন্দর সুন্দর গান বাজাচ্ছে একটি অনুষ্ঠানে, সেই আমার সামনে থেকে বেহালা দর্শন আর দেখেই প্রেমে পড়ে গেলাম। যেভাবেই হোক এটা শিখতেই হবে। অতএব বেহালা কিনে শিখতে শুরু করলাম শ্রদ্ধেয় শ্রী বৃন্দাবন সাহার কাছে তবে আমার পরবর্তী গুরু শ্রী বিকাশ ভৌমিকের সাহচর্যে এসে নতুন ধারায় গায়কী অঙ্গে শিখতে শুরু করি। 1986 সালে আকাশবাণী শিলিগুড়ি থেকে অডিশনে পাস করে একক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন কনসার্টে সঙ্গত করার সুযোগ পাই।
শিলিগুড়ি আদালতে বিচার বিভাগে দীর্ঘ কর্মজীবনের ব্যস্ততায় সংগীতচর্চায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এখন কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে সম্পূর্ণ সংগীত নিয়ে মেতে আছি। পুরোপুরি শাস্ত্রীয় সংগীত আমার চর্চার বিষয় নয়, রাগসঙ্গীতকে নির্ভর করে বাংলার স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি শিল্পীরা যে সংগীত সৃষ্টি করে গেছেন, যেমন সলিল চৌধুরি, মান্না দে প্রমুখ, এঁদের গান নিয়ে চর্চা করা ও তাঁদের গায়কীকে বেহালায় তুলে ধরা। জানিনা কতখানি সফল হবো তবে চেষ্টা চালিয়ে যাব।
আমার ছোটছেলে আবির বিএ দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র, সেও এখন বেহালা চর্চা করছে ও অনুষ্ঠানে বাজাচ্ছে, তবে ও এই প্রজন্মের ছেলে তাই এসময়ের গানের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। আবির ম্যান্ডলীন চর্চাও করে থাকে ও কিছু অনুষ্ঠানে বাজিয়েছে। ওকে সাথে নিয়েই আমার চর্চা চলছে।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে স্বর্ণযুগের এই সৃষ্টি গুলোকে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পরে, কারণ ওরাই তো সেই ধারাকে বইয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষকরে বাঙালি ঐতিহ্য আর বাংলা গান যখন পাশ্চাত্য সংগীতের দ্বারা বিপর্যস্ত ও হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমার বাসভবনে একটি বেহালা শিক্ষনকেন্দ্র আছে যেখানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা দেওয়া হয়। আমি মনে করি বর্তমানে এই অস্থিরতার সময় এই প্রজন্মকে সঠিক দিশা দেখাতে পারে একমাত্র সংগীত, বিশেষকরে মনোসংযোগের ক্ষেত্রে বেহালা শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য বলে মনে করি।