শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন কেন

নিজস্ব প্রতিবেদন,শিলিগুড়িঃ সমানে বাড়ছে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন। আর এই যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া এবং নির্যাতিত শিশুর সুরক্ষার জন্য ২০১২ সালে আমাদের দেশে পক্সো আইন লাগু হয়েছে। পক্সো মানে প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস। শিশুদের যৌন লাঞ্ছনার দেওয়ার বিরোধী আইন নিয়ে শুক্রবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ হল ঘরে এক আলোচনা সভা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি এবং জেলা আইনি পরিষেবা কতৃপক্ষ এই সভার আয়োজন করে। সেখান থেকে একটি যা তথ্য বেরিয়ে আসে তা উদ্বেগজনক।
বিগত এক বছরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার ২৬০ টি মামলায় আঠারো বছরের কম বয়সী মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতন অভিযোগের শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ শতাংশই দু থেকে দশ বছরের শিশু। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে যে কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন সমাজকর্মীরা সেগুলো হল, এক) সামাজিক অবক্ষয় ,দুই) নৈতিক শিক্ষার অভাব, তিন) লিঙ্গ বৈষম্য, চার) জীবনশৈলী বা জীবনমুখী শিক্ষার অভাব। এইসব শিক্ষা চালু করে যেমন ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন তেমন আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা দরকার । আইন প্রয়োগ করা এবং বিচার, এর জন্য পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, মেডিকেল, শিশু সুরক্ষা কমিটি, জেলা আইনি পরিষেবা কতৃপক্ষ ,বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সকলে মিলে যাতে একসঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করতে পারে তার জন্য প্রশ্নউত্তরের মাধ্যমে আলোচনা হয় শুক্রবারের সেই সভায়। সভায় শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলা বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ, মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রুবি মৈত্র, জেলা আইনি পরিষেবা কতৃপক্ষের সম্পাদক জয়িতা সাহা ছাড়া আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সিনির কোঅরডিনেটর শেখর সাহা জানিয়েছেন, আইনে বলা আছে এক বছরের মধ্যে এই অপরাধের বিচার করতে হবে। এর সব্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তাছাড়া সাত থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড। নির্যাতিত শিশুদের কথা ভেবেই আইনটি এসেছে। নির্যাতিত শিশু যদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারককে তার ওপর নির্যাতনের গোপন কথা বলতে চায় তবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। আবার নির্যাতিত শিশু যদি আদালতে গিয়ে বলতে না চায়, সে যদি তার বাড়িতে বসেই বিচারককে তার জবানবন্দী দিতে চায় তবে প্রয়োজন হলে বিচারককে সেই শিশুর বাড়িতে গিয়ে জবানবন্দী নথিভুক্ত করতে হবে। বিচারে প্রয়োজন হলে ডি এন এ টেস্টের কথাও বলা আছে। আইনটি সেই অর্থে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি। আবার যদি প্রমান হয় সেই শিশু সত্যি যৌন নির্যাতনের শিকার তবে তার ওপর নির্যাতনের ধরন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান আইনে বলা আছে।
কোথাও শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন হলে সঙ্গে সঙ্গে তার অভিভাবক অথবা পাড়াপড়শি বা শিশু সুরক্ষা কমিটিকে বিষয়টি পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশ অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত শুরু করবে আর নির্যাতিতার মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। সেই নির্যাতিতা শিশু নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু আতঙ্কে থাকলে তার কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।