পৃথিবীতে ওদের অস্তিত্ব বিপন্ন, ওদের বাঁচান

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ওরা এখন গোটা পৃথিবীতে দুহাজারের বেশি নেই। ওদের অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মহানন্দা নদীর ধারে পোড়াঝাড় অঞ্চলে ওরা গত বছরও ২৫ জন মিলে ডানা মেলে উড়ে এসেছিলো সুদূর মঙ্গোলিয়া থেকে। কিন্তু এখানেও ওদের বাসস্থান ঝোপঝাড় আমরা নষ্ট করতে থাকায় ওদের অস্তিত্ব আরও বিপন্ন হয়ে উঠছে।

আসলে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে থাকা ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং পাখির কথা বলা হচ্ছে। ওরা ঠিক চড়ুই নয়, তবে দেখতে অনেকটা চড়ুইয়ের মতো। মহানন্দার পাশে পোড়াঝাড়ের গায়ে অনেক ঘাস, গুল্ম রয়েছে। সেই ঘাস, জলজ হোগলা বা ঝোপঝাড়ের টানে বহু পাখি সেখানে আসে। এরমধ্যে অন্যতম ইয়েলো ব্রেস্টেড বার্ড। এখানকার পরিবেশ, এখানকার ঝোপঝাড় বেশ পছন্দ এই পাখিগুলোর। অনেক দিন ধরে ওরা সুদূর মঙ্গোলিয়া থেকে এখানে আসে। আসলে ওরা কি করবে। ওদেরওতো সুন্দর প্রকৃতির কোলে সুন্দর বাড়ি চাই। বাড়ি বলতে মানুষের মতে কংক্রীটের জঙ্গল নয়, ওদের চাই প্রকৃতির দেওয়া সবুজ ঝোপঝাড় যেখানে ওরা ওদের স্বাভাবিক ঢঙে একটু কিচিরমিচির করে সুস্থ থাকতে পারে। নিজেরা নিজেদের মতো করে খেলতে পারে!
ওরাতো মানুষের অনিষ্ট করতে আসে না। বরঞ্চ ওরা আসায় মানুষের উপকারই হয়। প্রকৃৃতির ভারসাম্য স্বাভাবিকই থাকে। কিন্তু একদল অবুঝ মানুষ কিছু না বুঝেই ওদের নিরাপদ বাসস্থান ঝোপঝাড় কেটে ফেলছে। মহানন্দার ধারে বিরাট ঘাস, যে ঘাসও ওরা খায়, চাষাবাদের জন্য কিছু মানুষ সেসব ঘাস কেটে ফেলছে। জ্বালানির জন্য ঝোপঝাড় কেটে ফেলছে। ফলে বিষয়টি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমীদের কাছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অপটোপিক তাই রবিবার পোড়াঝাড় এলাকায় এক সচেতনতা শিবির আয়োজন করে। তাতে ফাসিদেওয়ার বিডিও সঞ্জু গুহ, সেচ দপ্তরের আশিস প্রামাণিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ বসির, গ্রাম পঞ্চায়েত পরিমল রায়, স্থানীয় ক্লাব সদস্যরা সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় ওই পাখিগুলোকে ঝোপঝাড় বাঁচিয়ে কিভাবে সবসময় স্বাগত জানানো যায় তার আলোচনা হয়। অপটোপিকের সভাপতি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং শিলিগুড়ি শহরের পাশে এভাবে মঙ্গোলিয়া থেকে উড়ে আসে যে তা ভাবা যায় না। এটা এই এলাকার মানুষের পক্ষেও একটি খুশির খবর। তাই তারা চান, অতিথি পাখিগুলো একবার ফিরে গিয়ে আবারও যেন ফিরে আসে। আর তাদের ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে পোড়াঝাড় ও আশপাশের মানুষদের। সুন্দর করে ওদের জন্য প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে ওঠা ঝোপঝাড় স্বাভাবিক রেখে দিতে হবে। একইসঙ্গে মহানন্দার ওই এলাকায় চাষবাসের সুবিধার জন্য যাতে কীটনাশক ব্যবহার না হয় সেদিকেও সকলকে নজর দিতে হবে। কীটনাশক থেকে অনেক মাছ মরছে। অনেক পোকামাকড় যা উপকারী, সেটাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে বাস্ত তন্ত্রের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।আমরা এখনই এসব নিয়ে না ভাবলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।