নেতাজির আদর্শ এই মেধাবীকে দুঃখযন্ত্রনায় ঘুরে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  বাড়িতে ছোট ভাইটির ব্রেন টিউমার রয়েছে। ছোট ভাইটির আরও অনেক রোগ ব্যাধি রয়েছে। ফলে তাঁর চিকিৎসার জন্য তাঁর বাবা-মাকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়।তারমধ্যে ঘরের আর্থিক পরিস্থিতি একদম ভালো নয়।নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়াংশুর মনে মাঝেমধ্যে একটু অবসাদ এসে যাচ্ছিলো ।তারপর অসুস্থ এবং চঞ্চল অবুঝ সেই ভাইয়ের সবসময় বিব্রত করে তোলার সমস্যাতো রয়েইছে।কিন্তু সেসব অবসাদকে মনে জায়গা দিলেতো তাঁর পড়াশোনা পিছিয়ে যাবে।জীবনে তাঁর লক্ষ্যতো ডাক্তার হয়ে সমাজের জন্য কিছু কাজ করা।কিন্তু অবসাদকে লাথি মারার উপায় কি? হ্যা,প্রিয়াংশু সেসব অবসাদকে লাথি মারার জন্য প্রায়ই আঁকড়ে ধরে রাখতো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসকে।নেতাজির জীবন সংগ্রাম, দুঃখ কষ্টে ভেঙে না পড়ে মনকে শক্ত করার লড়াই এবং সর্বোপরি নেতাজির আদর্শ বুকে করে নিয়েই অবসাদকে দূরে ঠেলে দিয়েছে ১৭ বছরের এই কিশোর প্রিয়াংশু দে। অপরদিকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সব কষ্ট একা নিজের কাঁধে নিয়ে সামলে নিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়। আনন্দধারা সঙ্গীত একাডেমির তিনি কর্নধার। প্রিয়াংশু যখন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে সেই সময় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত তাঁর ছোট ভাই সোহন পালকে সাহায্য করতে যান অনিন্দিতাদেবী।সেই সাহায্য করতে গিয়ে অনিন্দিতাদেবী জানতে পারেন,প্রিয়াংশু অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র এবং ঘরে ছোট ভাইয়ের ব্রেন টিউমার ও তীব্র আর্থিক সঙ্কটেের কারনে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ। সমাজসেবী অনিন্দিতাদেবীর বিবেকে প্রশ্ন জাগে,টাকার অভাবে একটি মেধাবী ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে? না, না— এ কিছুতেই হতে পারে না, নিজের ভেতর থেকে সেই এক টান অনুভব করেন অনিন্দিতাদেবী। এরপর প্রথমে সপ্তম থেকে দশম শ্রেনী,আইসিএসই বোর্ডের জন্য প্রিয়াংশুর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করেন অনিন্দিতাদেবী। টিউশন ফি থেকে বই কিনে দেওয়া, স্কুলের পোশাক সহ অন্য সব খরচ বহন করেন তিনি।এরপর একাদশ দ্বাদশে সি বি এস ই বোর্ডের তত্বাবধানে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে প্রিয়াংশু।সেই পর্বেও যাবতীয় খরচ বহন করেন অনিন্দিতাদেবী। এসবের জের,শুক্রবার ১২ মে সি বি এস ইর দ্বাদশ শ্রেনীর ফলাফল বের হলে দেখা যায়, প্রিয়াংশু মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪০৫ পেয়েছে। দার্জিলিং পাব্লিক স্কুলের তত্বাবধানে সে পড়েছে। যদিও করোনা লকডাউনের সময় স্কুলে ভর্তির জন্য এগিয়ে আসেন লিভ লাইফ হ্যাপিলি অর্গানাইজেশনের সমাজসেবী অনির্বাণ নন্দী ও পৌলমী চাকি নন্দী।এর বাইরে অ্যাপের সাহায্যে টিউশন নেওয়া,বই খাতা কলম সহ অন্য সমস্ত খরচ বহন করেন অনিন্দিতাদেবী। শুক্রবার প্রিয়াংশুর রেজাল্ট জানাচ্ছে, ৮২ শতাংশ নম্বর।কেমিস্ট্রি ৯১,ফিজিক্স ৭৭,ইংরেজি ৭৯,বায়োলজি ৭৮, ইনফরমেটিক্স প্র্যাকটিসেস ৮৮। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতেই হয়,অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা দুদিক থেকেই প্রিয়াংশুর বাবা মা অনগ্রসর। সেই জায়গায় অনিন্দিতাদেবীর অকৃত্রিম সহযোগিতা এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের লড়াইয়ের মানসিকতা পড়ার দিকে বেশি করে উদ্দীপ্ত করে প্রিয়াংশুকে।
নেতাজি দেশের জন্য বিরাট আত্মত্যাগ করেছিলেন।প্রিয়াংশুও অনেকটা সেই ভাবে দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। ডাক্তার হয়ে গ্রামে গিয়ে সে গরিবদুঃখীদের সেবা করতে চায়। তবে অনিন্দিতাদেবীর সেবার ঋন প্রিয়াংশু পরিশোধ করতে চায় তাঁর সঙ্গে গরিবদুঃখীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে। ডাক্তারি পড়ার জন্যও পরীক্ষা দিয়েছে মেধাবী প্রিয়াংশু। অবসর সময়ে বিজ্ঞান মডেল তৈরি করে ও।কিছু বিজ্ঞান মডেলও তৈরি করেছে। আলট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষা সংক্রান্ত যন্ত্র বা মডেল তৈরির জন্যও এখন কাজ করে চলেছে প্রিয়াংশু।এই ধরনের মেধাবী ও প্রতিভাবান ছেলে যাতে ভবিষ্যতে একজন সফল চিকিৎসক হতে পারে তারজন্য অনিন্দিতাদেবীর মতো মহৎ ভাবনা সবার মধ্যে জাগরিত হলে প্রিয়াংশুর কাছে ডাক্তার হওয়ার মতো আর্থিক প্রতিবন্ধকতা বড় হয়ে দেখা দেবে না।খবরের ঘন্টা আগামী দিনে প্রিয়াংশুর আরও সাফল্য কামনা করে। দেশনায়ক নেতাজির মতো মহামানবের আদর্শ প্রিয়াংশুর জীবনে যেভাবে প্রভাব ফেলেছে তা অন্য ছেলেমেয়েদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ুক এটাই থাকলো খবরের ঘন্টার প্রার্থনা।

বিস্তারিত দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—