নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ মারন রোগের কাছে হেরে যাওয়া নয়,তাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ৭২ শতাংশ নাম্বার পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রায়গঞ্জের কৈলাশচন্দ্র রাধারানী বিদ্যাপীঠের ছাত্রী জয়শ্রী গুহ। দুরারোগ্য অসুখের সাথে লড়াই করার পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার অদম্য ইচ্ছেতে ভর করেই জয়শ্রী সার্বিকযুদ্ধে আজ জয়লাভ করেছে।
আজ থেকে প্রায় দুবছর আগেকার কথা। রায়গঞ্জের বীরনগরের একটি আবাসনের বাসিন্দা জয়শ্রী গুহ তখন দশম শ্রেনীর ছাত্রী। গলায় একটা ব্যাথা অনুভব হওয়ায় বাবা সঞ্জয় গুহ এবং মা শাশ্বতী গুহ তাকে নিয়ে শহরের এক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সেই চিকিৎসকের পরামর্শে পাড়ি দেন মুম্বাই ক্যান্সার হাসপাতালে। সেখানেই নানা চিকিৎসার মধ্য দিয়ে জানতে পারে যে তার গলায় বাসা বেঁধেছে মারন রোগ ক্যান্সার। মুম্বাইয়ের মায়া নগরীর আকাশে যেন আচমকাই দূর্যোগের ঘনঘটা। একদিকে মারন রোগ অন্যদিকে পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন। এরপর দীর্ঘ সংগ্রামের কাহিনী। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই পড়ার বইয়ের মধ্যে নিজের স্বপ্নগুলোকে আগলে রাখার প্রবল প্রচেষ্টা। তারপর আরব সাগর অথবা কুলিকের জলে অনেক ঢেউ বয়ে গেছে। ক্যান্সারের মতো দানবকে পরাজিত করে জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে এখন আনন্দের ঢেউ জয়শ্রীর জীবনে।
জয়শ্রী জানালো, মাধ্যমিকে প্রায় ৭২ শতাংশ (৫০৯) নাম্বার পেয়ে উত্তির্ন হয়েছে সে। রায়গঞ্জ দেবীনগর রাধারাণী বিদ্যাপীঠের ছাত্রী হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত এবং সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রাখি বিশ্বাসের প্রচন্ড সহযোগিতা পেয়েছে এই দুই বছরে। বাবা,মা,বোন এবং মামার পাশাপাশি বন্ধুরাও এগিয়ে এসেছিল জয়শ্রীর জীবনযুদ্ধে সামিল হতে। প্রত্যেকের সাহস বিন্দুবিন্দু করে সাফল্যের সিঁড়ি তৈরি করেছে ওর জীবনে। আগামীতে তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নিতে চায় জয়শ্রী। মেয়ের এই সাফল্যে খুশি শাশ্বতী দেবী জানালেন, ২০১৮ সাল থেকে থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে প্রায় ১৬ বার মুম্বাইয়ের টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য। মুল চিকিৎসার শেষে মেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ। এরমধ্যে স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকেরা, বন্ধু বান্ধব কখন মোবাইলের মাধ্যমে, কখনো ক্লাসের পড়াশোনার কপি জেরক্স দিয়ে অনেক সহযোগিতা করেছে। জয়শ্রীর বাবা সঞ্জয় গুহ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে ইসলামপুরে কর্মরত। পরিবারের পাশাপাশি মেয়ের এই দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ তাঁকে একাই বহন করতে হচ্ছে৷ কোন সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে মেয়ের চিকিৎসার পাশাপাশি পড়াশোনায় করানোতে অনেকটাই সুবিধা হবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুখে জয়শ্রীর সাফল্যের খবর পেয়ে তার বাড়িতে দেখা করতে যান রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত। ফুলের স্তবক ও উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন কথা বলেন জয়শ্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে। মোহিতবাবু জানান, স্কুলের শিক্ষকদের কাছে জয়শ্রীর যুদ্ধজয়ের কাহিনী শুনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ৭২ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পাশ করার ঘটনা নিঃসন্দেহে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদেরও উৎসাহিত করবে। আগামীদিনে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জয়শ্রীর পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন মোহিতবাবু। দেবীনগর কৈলাসচন্দ্র রাধারাণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত জানালেন, জয়শ্রী গুহর এই সাফল্য বিদ্যালয়ের অন্যান্য সকল ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করবে।