৩৩ বছরে পাঁচ হাজার দৃষ্টিহীনকে চোখ দান

( গোটা রাজ্যে চোখ দান আন্দোলনেে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হুগলির শ্রীরামপুরের দিলীপ চ্যাটার্জী।খবরের ঘন্টাকে তিনি চোখ দান আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা জানিয়েছেন। তা এখানে তার কথাতেই মেলে ধরা হল।)
দিলীপ চ্যাটার্জী,শ্রীরামপুরঃ আমাদের রাজ্যে চোখ দান আন্দোলনে প্রথম কলকাতায় ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কর্ণিয়া সংগ্রহ শুরু হয়।তারপর হুগলির শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র ও চোখ ব্যাঙ্ক তৈরি হয়।আমার বয়স এখন ৭৭। ১৯৮৫ সালে আমাদের কেন্দ্র তৈরি হয়।শুরু থেকেই আমি এর সাধারণ সম্পাদক। বিগত নবছর ধরে আমরা গোটা বাংলাতো বটেই গোটা পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কর্ণিয়া সংগ্রহ করছি।বছরে ৪০০ থেকে ৬০০। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী ছেলেরা হুগলি জেলা ও তার আশপাশে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনাসভা আয়োজন করে চলেছে। আমরা যা কর্ণিয়া সংগ্রহ করি তা রিজিওনাল মেডিকেল কলেজের অপথালমোলজি বিভাগে পাঠিয়ে দিই। গত বছর এভাবে ৫৩৮ টি কর্ণিয়া সংগ্রহ করে দিয়েছি।আর চলতি বছরে এই সংখ্যা ৩০০। বিগত ৩৩ বছরে ৫ হাজার কর্ণিয়া সংগ্রহ করে তা জমা করেছি।আর সেসব কাজে লাগিয়ে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফিরেছে। মানুষের মৃত্যুর পর ৬ ঘন্টার মধ্যে কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখন কারও মৃত্যুর পর ডাক্তারেরা চার ঘন্টার আগে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চান না। কিন্তু যারা মরনোত্তর চোখ দান করে রেখেছেন তাদের ক্ষেত্রে এক ঘন্টার মধ্যে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার নিয়ম আছে। একজনের আই বল ৪৮ ঘন্টা আর কর্ণিয়া ৯৬ ঘন্টা পর্যন্ত সাধারন ফ্রীজের তাপমাত্রা বা চার ডিগ্রী সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।কোনও পরিবারে চোখ দানের প্রবণতা বা পরিবারে চোখ দানের অঙ্গীকার থাকলে মৃত্যুর পর সে ব্যক্তির চোখ দানের অঙ্গীকার কাগজপত্র না থাকলেও চলে।যেটা মরনোত্তর দেহদানের সময় সম্ভব নয়।মরনোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার যদি মৃত ব্যক্তি করে যান তবেই তার দেহ নেওয়া হয়।
সম্প্রতি শিলিগুড়ির মল্লিকা মজুমদারের ব্রেন ডেথের পর তার কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়।এরপর এনিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।আমরা বলবো রাজ্যে জেলায় জেলায় সরকারি হাসপাতালের তেমন পরিকাঠামো তৈরি হোক। যাতে কারও ব্রেন ডেথ হলে তাদের পরিবারের ইচ্ছা অনুসারে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হতে পারে। কেননা এর জন্য চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা সময় পাওয়া যায়।আর জেলা বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে কারও ব্রেন ডেথ হলে চার ঘন্টার মধ্যে তাকে কলকাতায় এনে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। এবারে আরও বলি,উত্তরবঙ্গে সরকারিভাবে কোনও হাসপাতালে চোখ প্রতিস্থাপন করাহয় না।আগে হোত উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে।এখন তা বন্ধ। এখন শিলিগুড়ি গ্রেটার লায়ন্স আই হাসপাতালে চোখ প্রতিস্থাপন করা হয়। আমরা লাগাতর প্রচার চালিয়ে এই চোখ দানের ওপর প্রচলিত অনেক কুসংস্কার বন্ধ করতে পেরেছি। আশি শতাংশ মানুষ এখন আমাদের সঙ্গে সরাসরি চোখ দানের জন্য যোগাযোগ করছেন।এটা আগে ছিল না। তবে আর একটি কথা বলবো,দানতো দানই। কিন্তু কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতাল কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য পরিকাঠামোর কথা বলে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিচ্ছে। এটা কেন নেবে? যেখানে ভারত সরকার তাদের কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের কাজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়। ( শিলিগুড়িতে মরনোত্তর চোখ ও দেহদান আন্দোলনের কর্মী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তারা এনিয়ে আরও প্রচার চান আর সব সরকারি হাসপাতালে চোখ ও অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো চান।)