জলপাইগুড়িতে ঐতিহ্যমন্ডিত বাগচিবাড়ির পুজোয় সংস্কৃতির আড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ সে পুজোয় বহু কিছু হারিয়ে গিয়েছে। আবার অনেককিছু হারিয়ে যায়নি।সে পুজোয় জৌলুস অনেক কমে গিয়েছে, তবে নিষ্ঠা এতটুকুও কমেনি। সে পুজোয় পুরনো ধারা মেনে আজও সংস্কৃতির আসর বসে।
জলপাইগুড়ি উকিলপাড়ায় রয়েছে বাগচিবাড়ি।সে বাড়ির প্রানপুরুষ রিদয়নাথ বাগচির আগ্রহে শুরু হয় পুজো।১৮৫৭ সালে হয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহ। সেসময়ই পাবনার বিশাল জমিদারি ফেলে জলপাইগুড়ি চলে আসেন রিদয়নাথ বাগচি। পাবনার বাড়িতে যে পুজো হোত সে পুজোই তিনি এখানে শুরু করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনও তিনি যুক্ত ছিলেন। কোচবিহারের রাজা তাকে আইনি উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। ইংরেজের বিরুদ্ধে কোচবিহার রাজা অনেকগুলো মামলা করেছিলেন, তার অনেকগুলোতে অংশ নিয়ে তিনি কোচবিহার রাজাকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত রিদয়নাথ বাগচি শুধু পাবনাতে জমিদার ছিলেন না, তিনি নাম করা ব্যারিস্টারও ছিলেন।ঢাকা কোর্টেে প্র্যাকটিস করতেন।
ইংরেজের সঙ্গে আইনি যুদ্ধের পাশাপাশি চা বাগান নিয়েও তিনি যুদ্ধ করেছিলেন।ডুয়ার্সে প্রথম বাঙালি চা বাগান তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। মোগলকাটা চা বাগান। এই একটি বাগান খোলার পর আরও ১৬ টি বাগান খোলেন তিনি। তারই দুই ছেলে গঙ্গানাথ বাগচি ও লোকেন বাগচি। গঙ্গানাথ বাগচি ৩২ বছর বয়সে মারা যান। লোকেন বাগচি জলপাইগুড়িতে প্রথম ধ্রুপদী সঙ্গীত প্রচলন করেন। গঙ্গানাথ বাগচির চার ছেলেমেয়ের মধ্যে একজন হলেন ধীরেন্দ্রনাথ বাগচি। এই বাগচি বাড়িরই নীরেন্দ্রনাথ বাগচি এবং ধীরেন্দ্রনাথ বাগচি সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
একসময় এই পুজোয় মোষ ও পাঠা বলি হোত। সপ্তমীতে সাত অষ্টমীতে আট আর নবমীতে নটি পাঠা বলি হোত। বর্তমানে এসব বলি বন্ধ। তবে ভোগ আয়োজনে থাকে দুতিন রকমের মাছ। আগে ১০৮ টি পদ্ম লাগতো এখন নিবেদন হয় ২৮ টি পদ্ম। পুজোয় আগেও সাংস্কৃতিক আসর বসতো, আজও বসে তা।এ বাড়িরই কন্যা সংহিতা বিশ্বাসবাগচি এখন তার সঙ্গীত কন্ঠ দিয়ে শিলিগুড়ি সহ কলকাতায় বহু মানুষের মন জয় করছেন। ধীরেন্দ্রনাথ বাগচি ছিলেন সংহিতাদেবীর দাদু।নিষ্ঠার সঙ্গে সে বাড়িতে বাগচি পরিবারের উত্তরসূরীরা আজ পুজো করছেন।