হতদরিদ্র অনগ্রসর পরিবারগুলো থেকে একের পর এক ডাক্তার তৈরির অসামান্য নেশা চলছে!!!

বাপি ঘোষ  ঃ  বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন”। বিশ্ব কবি আর এক স্থানে বলেছেন, ” সত্যকার আদর্শ লোক সংসারে পাওয়া দুঃসাধ্য। ভালোবাসার একটি মহান গুন এই যে সে প্রত্যেককে নিদেন একজনের নিকটেও আদর্শ করিয়া তুলে।এইরুপে সংসারে আদর্শ ভাবের চর্চা হইতে থাকে। ” বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ” গাহি সাম্যের গান,মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,নহে কিছু মহীয়ান “।স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ” যখন আমাদের মধ্যে অহঙ্কার থাকে না, তখনই আমরা সবথেকে ভালো কাজ করতে পারি,অপরকে আমাদের ভাবে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করতে পারি।” কবি-মনিষীদের এইসব উদ্ধৃতি এই প্রতিবেদন উল্লেখ করা এজন্যই যে সমাজে এমন অনেক মানুষ থাকে যাদের কাজকে একবার নয়, বারবার স্যালুট বা কুর্নিশ জানাতে হয়। সমাজে এমন কিছু বিরল মানুষ আছেন যাঁরা দেশ ও সমাজের জন্য অসামান্য কাজ করেন নিঃশব্দে অথচ প্রচারের আলোর আসতে চান না। সমাজে এমন কিছু বিরল মানুষ আছেন যাঁরা কাজে করেন অসাধারণ কিন্তু জীবনযাপন অতি সাধারণ। হাই থিঙ্কিং সিম্পল লিভিং। এরকমই একজন বিরল ব্যক্তিত্ব হলেন কোচবিহার জেলার জামালদহ নিবাসী মৃন্ময় ঘোষ। তিনি এবং তাঁর সংস্থা পঞ্চপান্ডবের সদস্যরা লোকচক্ষুর অন্তরালে সমাজের জন্য অসামান্য বহু কাজ করে চলেছেন।তাদের এমনই একটি কাজের নমুনা হলো আর্থিকভাবে অনগ্রসর বা হতদরিদ্র ঘরের মেধাবী ছেলেমেয়েদের ডাক্তার হিসাবে তৈরি করা।বিগত কয়েকবছরে তাঁরা এমনই ১৪ জন মেধাবী ছাত্রকে ডাক্তারি পড়ার জন্য পিছন থেকে সবরকম সহযোগিতা করেছেন যাঁরা এখন ডাক্তার হিসাবে চাকরি করছেন।আর এই মুহুর্তে তাদের সহযোগিতায় ৭১ জন ডাক্তারি পড়ছেন রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।এদের মধ্যে সুফল মন্ডল,কমল বর্মন,হাসান আলি ব্রজেশ্বর রায়,ইন্দ্রজিৎ রায়ের নাম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে হয়। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি সেভক রোড দুই মাইলে লায়ন্স ক্লাব অফ শিলিগুড়ি গ্রেটার ওই পাঁচ জন মেধাবী ডাক্তারি পড়ুয়াকে একটি করে ট্যাব উপহার দিয়েছে। তার সঙ্গে একজন চিকিৎসক ওদের হাতে কিছু চিকিৎসা শাস্ত্রের বই তুলে দিয়েছেন। শিলিগুড়ি গ্রেটার লায়ন্স আই হাসপাতালের হল ঘরে অনুষ্ঠিত সেই ছোট্ট অনুষ্ঠানে লায়ন মহেন্দ্র বনশাল,লায়ন বিকাশ বনশাল,সভাপতি লায়ন বজরং আগরওয়ালা, সি ই ও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পড়াশোনার জন্য ট্যাব এবং বই উপহার পেয়ে বেশ খুশি এই ডাক্তারি পড়ুয়ারা। তাঁরা লায়ন্স ক্লাব অফ শিলিগুড়ি গ্রেটার ছাড়াও দেবতাতুল্য মৃন্ময় ঘোষের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানান। ডাক্তার হিসাবে চাকরি শুরু করলে সমাজের দরিদ্র অনগ্রসরদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া ছাড়াও সমাজের জন্য সেবা প্রদান তাঁরা করতে চান বলে ওই মেধাবী পড়ুয়ারা জানিয়েছেন।
জামালদহে সামান্য একটি মিস্টির দোকান চালান মৃন্ময়বাবু। আর সেখান থেকেই ৩৬৫ দিন রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন,ফুটপাতবাসীদের তিনি দুপুরের খাবার পৌঁছে দেন টোটো করে। বহু বছর আগে তারা পাঁচ বন্ধু মিলে বাড়ির পুরনো জামাকাপড় সাইকেলে তুলে হতদরিদ্রদের মধ্যে বিলি করতে যান। তখন তাদের মাথায় আসে এই সব হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিনাপয়সায় টিউশন দিলে কেমন হয়? যেমন ভাবনা তেমন কাজ।পাঁচ বন্ধু মিলে টিউশন শুরু করতে করতেই তাঁরা দেখতে পান,একটি দুটি করে ছেলেমেয়ে ডাক্তারিতে সুযোগ পাচ্ছে। তাঁরা দেখলেন,এভাবেতো তবে হতদরিদ্র পরিবারের সম্ভাবনাময় প্রতিভাগুলোকে বাছাই করে ডাক্তার তৈরি করা যায়!! ওই ভাবনা থেকেই তাদের পঞ্চপান্ডব শুরু এবং ডাক্তার তৈরির যুদ্ধ শুরু। তার সঙ্গে অন্যান্য অসামাজিক কাজতো আছেই। মঙ্গলবার মৃন্ময়বাবু বলেন,” কাজ করার সদিচ্ছা চাই। সদিচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। ”
আজ গোটা রাজ্য এবং দেশে মৃন্ময়বাবুদের সুনাম রয়েছে। কিন্তু তাঁরা পুরস্কার, সংবর্ধনা, প্রচারের আলোর বাইরে। বহু পুরস্কার তাদের পিছনে ছুটেছে কিন্তু তারা সেসব থেকে দূরে। তবে বহু ভালো মানুষও তাদের পাশে থাকেন,তাদেরকে অকৃত্রিম ভালোবাসা দেন।এটাই তাদের আত্মার তৃপ্তি। শিলিগুড়ি রাজবংশী রিপ মিনিস্ট্রির বিশিষ্ট সমাজসেবী কৌস্তভ দত্তও মঙ্গলবার মৃন্ময়বাবুদের অসাধারণ সব কাজের তারিফ করেন। বহু ভালো মানুষ, স্বেচ্ছাসেবী এবং সমাজসেবীদের কাছে মৃন্ময়বাবুরা তাই এখন নতুন অনুপ্রেরণার বিষয়।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—