লাইগেশন মানে পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করা !মাল ব্লকের আদিবাসী গ্রামে এখনও বাড়িতেই প্রসব

বাপী ঘোষ, শিলিগুড়িঃ সে গ্রামে মায়েরা কেও গর্ভবতী হলে সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতেন না। ওরা পিছিয়ে পড়া আদিবাসী। নদীর ধারে পাথর ভেঙ্গে তাদের সংসার চলে। সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করাতে হয় তা তাদের অনেকেই জানে না। আবার জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য অপারেশন করাতে হয়, তা তারা অনেকেই জানে না। আবার জানলেও ভীতি ও কুসংস্কারের কারনে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রনের অপারেশন থেকে দূরে থাকে। উত্তরবঙ্গের ডুআরসের মালবাজার ব্লকের পূর্ব তেসিমিলার প্রত্যন্ত গ্রাম আদর্শপাড়ায় এখন এই কুসংস্কার ভাঙতে কাজে নেমেছেন দুই একজন আশা কর্মী । তার সঙ্গে আই সি ডি এস কর্মীরাও আছেন। আর এরফলে ফুলমনি ওরাও ,শান্তি মাঝি,চিন্তামনি ওরাওরা তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনছে ।
প্রকৃতপক্ষে সেই গ্রামে কোন আশা কর্মী নেই। কিন্তু মাল ব্লকের তেসিমিলা অঞ্চলের আশা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিশেষ ভাবে সেখানে কর্মী পাঠিয়ে বাড়িতে প্রসবের বিরুদ্ধে আলোচনা চলছে। এলাকার গ্রাম প্রধান মীনারা পারভিন বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রধান বলেছেন, পিছিয়ে পড়া পূর্ব তেসিমিলায় এখনও বাড়িতে প্রসব করানোর রীতি চলছে। তারা সেখানে সচেতনতা চাইছেন। কিন্তু এলাকায় কোন আশা কর্মী নেই। স্থানীয় আশা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের থেকে বিশেষভাবে একদুজনকে ওই গ্রামে পাঠিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
তেসিমিলায় রয়েছে আশা কর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার আশা কর্মীদের সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়েস্টবেঙ্গল ভলানটারি হেলথ এসোসিয়েশনের পরিচালনায় সেই প্রশিক্ষণ চলছে। আর সেখান থেকে বিশেষ ভাবে কর্মী পাঠিয়ে ওই গ্রামে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে প্রসব করানোর কাউন্সেলিং চলছে বলে সেখানকার বেসিক হেলথ কেয়ার সাপোর্ট প্রোগ্রামের কোঅরডিনেটর সান্তনা দেবনাথ জানিয়েছেন। তিনি জানালেন, ওই গ্রামে জন্ম নিয়ন্ত্রনের লাইগেশন অপারেশন নিয়ে এখনও যে ধারনা আছে তা হল, এই অপারেশনে মায়েদের পেট কেটে পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করা হয়। কিন্তু আসলে যে তা নয় তা তাদের বোঝালেও তারা বোঝে না। এমনও নজির আছে যে লাইগেশন হবে বলে হাসপাতালের অপারেশন টেবিল পর্যন্ত পৌঁছেও নাড়িভুঁড়ি বের করা হতে পারে ভয়ে অপারেশন ঘর থেকে সেই মা সোজা হাসপাতাল থেকে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে। তাই তারা যারা লাইগেশন করিয়েছেন তাদেরকে কাউন্সেলিংএ নামিয়ে চলেছেন। একইভাবে বাড়িতে প্রসব না করিয়ে হাসপাতালে প্রসব করানোর প্রচার চলছে।আর এতে অনেকটা ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে সান্তনা জানিয়েছেন।