বহু ভাষাভাষীর মানুষের বন্ধনে একাকার দিল্লীর পুজো

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিলিগুড়ি) ঃ বহু ভাষাভাষীর মানুষের বন্ধনে একাকার দিল্লীর পুজো।দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষেরা আসেন দিল্লীতে।কেও বাঙালি, কেউ বিহারি,কেওবা নেপালি বা অন্য ভাষাভাষীর মানুষ।পুজোর ভিড়ে এখানে পা মেলাতে গিয়ে বহু মানুষের বহু ভাষা শুনতে পাচ্ছি।
মঙ্গলবার মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায় আমরা দক্ষিন দিল্লীর চিত্তরঞ্জন পার্ক,গোবিন্দপুরী এলাকায় ঘুরি। চিত্তরঞ্জন পার্কের মেলার মাঠ যেন মিলন মেলা। দেখলাম সুন্দর প্রতিমা, বিরাট প্যান্ডেল। তার গায়েই খাবারের অনেক স্টল। এর বাইরে আরও অনেক স্টল।এখানে সপ্তমী, অষ্টমীতে ছুটি নেই অফিসে। নবমীতে কিছুটা ছুটি ছুটি ভাব থাকে। দশমীতে পুরো ছুটি। তবে যারা বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা আছেন তারা একটু ছাড় পান।অন্যান্যদিন যতটা আগে কাজের ছুটি হয় এই সময় তার একটু আগে। আমার মেয়ে অনন্যা অন্যদিন সাতটায় কাজ থেকে ফেরে। এখন ফিরছে ছটাতেই। মেয়ে- জামাই অরুনাভতো আর একটু আগেই কাজ থেকে ফিরছে।
সি আর পার্কের কালি বাড়িতে নিষ্ঠা সহকারে পুজো হচ্ছে। প্রচুর ভক্তের ভিড়,দীর্ঘ লাইন। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা লাইন। পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ জোরদার। যানবাহন যাতায়াতেও কড়াকড়ি। বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তার স্বেচ্ছাসেবকরা বেশ সক্রিয়। দক্ষিন দিল্লীর পুজো দেখার সময় আমাদের মেটাল ডিটেক্টর এর মধ্যে দিয়ে যেতে হলো। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সি আর পার্কের পুজোগুলোয় বাঙালিয়ানার চা এর আড্ডাও দেখছিলাম। কালিবাড়ির পুজোর সামনে গ্রুপে গ্রুপে বাঙালিদের চা এর আড্ডা দেখে ভালো লাগছিলো। মিস করছিলাম শিলিগুড়িকে।
মেলাতে বিভিন্ন পণ্য সম্ভার। শাড়ির দোকান। খাবারের স্টল। বহু ভাষার কন্ঠ সব এক, এ এক জাতীয় মিলন ক্ষেত্র। সব জাতি, সব ধর্মের মেলবন্ধন।
কোঅপারেটিভের পুজোও দেখলাম। মন্ডপগুলোয় দেখলাম, ভি আই পিদের প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। অনেক পুজোতেই বাংলা গান বাজাতে শুনলাম। বাংলা গানের সঙ্গে সুন্দর নাচ। গোবিন্দপুরীতে একটি বস্তি অঞ্চলের পুজোয় রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজতে শুনলাম । শুনে ভালো লাগলো।
শিলিগুড়ির মতো এখানে যেখানে সেখানে পার্কিং হয় না। শিলিগুড়ির মতো যানজটও নেই। আমি আমার স্ত্রী ব্রততী, বড় মেয়ে অনন্যা, মেয়েজামাই অরুনাভ আর ছোট মেয়ে অঙ্কনাকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম।মহা ষষ্ঠী, মহাসপ্তমী সি আর পার্ক, গোবিন্দপুরী ঘুরে জিকেটু এলাকার পুজোও দেখলাম। জি কে টুর পুজো উদ্যোক্তারা বেশিরভাগই হিন্দি ভাষাভাষী। প্রতিমা সেখানে ডাকের সাজের। অদ্ভুত সুন্দর শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। সি আর পার্কে মিলন সমিতির পুজো বেশ ছিমছাম, সাদামাটা বাজেট। তবে যেখানেই বাংলা কথার আড্ডা দেখছিলাম,কান পেতে শোনার চেষ্টা করছিলাম,কি আলোচনা হচ্ছে।খুঁজছিলাম আমার বাংলাকে। দারুন অনুভূতি। সকলকে শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো।