ছোট্ট বালক বিবেককে বাঁচাতে এই চিকিৎসকদের মধ্যে বাজলো বিবেকের বাঁশি!!!

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  এক মাস ধরে এক বালকের বুকের ভেতর থেকে ক্রমাগত বাঁশির আওয়াজ বেরিয়ে আসছিলো।সকাল বিকাল রাত যখনই শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছিল সেই বালক বাজছিলো ফুসফুসের ভিতরে আটকে থাকা বাঁশি। এভাবে চলতে থাকলে সেই বালকের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু সমাজে এমন অনেক ভালো চিকিৎসক আছেন যাঁরা অসামান্য কাজ করে চলেছেন।উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগের প্রধান তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতোর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক, আনাসথেসিস্ট,নার্স অপারেশন থিয়েটারে টানা পঁচিশ মিনিট ধরে অপারেশনের পর ফুসফুসের ভিতরে আটকে থাকা সেই বাঁশি বের করলেন বৃহস্পতিবার। সেই বালক এখন ভালো আছে। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগের ওই কাজে বেশ খুশি সেই বালকের বাবা বিপ্লব রায় সহ মেডিকেলের অন্য রোগীরাও।
সেই বালকের নাম বিবেক রায়।বয়স প্রায় ন’বছর। চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে।বাড়ি শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ির শিমুলগুড়িতে।প্রায় এক মাস আগে একটি খেলনা বাঁশি বাজতে থাকে বিবেক।কিন্তু আচমকা ঘটে যায় দুর্ঘটনা।খেলনা থেকে বাঁশিটি শ্বাসনালী দিয়ে চলে যায় ফুসফুসে। প্রথম প্রথম এরজন্য সামান্য সর্দিকাশির সমস্যা হয় বিবেকের। কোনো ব্যথা যন্ত্রণা কিছু ছিলো না। কিন্তু সমস্যা হলো শ্বাস নিলেই বিবেকের ফুসফুসের ভিতর থেকে বাঁশিটি বেজে যাচ্ছিল।ফলে তাঁরা বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়েন। সকাল বিকেল রাত বাঁশির আওয়াজ আসছে বুকের ভেতর থেকে। বিবেকের বাবা বিপ্লব রায় স্থানীয় গ্রামীন হাসপাতালে যোগাযোগ করেন।সেখানকার চিকিৎসক বলেন,চিন্তার কিছু নেই। গোটা ভাত গিলে খেতো বলো, আর আমি নাকের মধ্যে এক ধরনের টিকা দিয়ে দেবো। সব ঠিক হয়ে যাবে।ওই বাঁশি মলের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে।গ্রামীন চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিবেককে কদিন ধরে গোটা গোটা ভাত না চিবিয়ে গিলে খাওয়ানো হয়। কিন্তু কিছুই হয় না।বাঁশি বেজে চলে তার নিজের ঢঙে।ফলে চিন্তা বাড়তে থাকে বিবেকের বাবা ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। স্থানীয় গ্রামীন চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁরা আবারও যোগাযোগ করে বলেন,রোগীকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? গ্রামীণ চিকিৎসক তখন উল্টো তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন।কিন্তু আর কারও কথা না শুনে বিবেকের বাবা বিপ্লব রায় গত ১৬ মে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ই এন টি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতোর নেতৃত্বে ডাঃ গৌতম দাস,ডাঃ ধ্রুপদ রায়,ডাঃ সন্দীপ ঘোষ,ডাঃ তুহিন শাসমল,ডাঃ অজিতাভ সরকার, ডাঃ শুভম গুপ্ত, ডাঃ শেখ আজহারউদ্দীন, ডাঃ সন্দীপ মন্ডল, অ্যানাসথেসিস্ট ডাঃ সুব্রত মন্ডল, ডাঃ ওয়াসিম প্রমুখ মিলে পরীক্ষা করে জানতে পারেন,বিবেকের ফুসফুসের একদম ভিতরে আটকে আছে দুই সেন্টিমিটার আকারের সেই বাঁশি। প্লাস্টিক ও তামা দিয়ে সেই বাঁশি একটি খেলনার মধ্যে লাগানো ছিলো।খেলনা আকারের বাঁশি বাজাতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন,এই বাঁশি আর কিছু দিন বিবেকের ফুসফুসের ভিতরে আটকে থাকলে ইনফেকশন বা ঘা তৈরি হতে পারতো।আর তা থেকে ওর জীবন ধীরে ধীরে সঙ্কটাপন্ন হতে পারতো। ই এন টি বিভাগের ওই সব চিকিৎসকের মধ্যে একত্রিতভাবে বিবেকের বাঁশি বাজতে থাকে যে,বিবেকে বাঁচাতেই হবে। নার্স শবনম,শালিনী সহ ই এন টি বিভাগের সব কর্মীর মধ্যে বেজে ওঠে বিবেকের বাঁশি। বিবেককে সুস্থ করে তুলতেই হব।বৃহস্পতিবার টানা পঁচিশ মিনিট ধরে অপারেশন হয়। শেষমেষ ফরসেপ দিয়ে সেই বাঁশি বের করে বিবেককে বিপদমুক্ত করা হয়।এখন সে ভালো আছে। আর এক দুদিন মেডিকেলের ই এন টি ওয়ার্ডে তাঁকে পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা করে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে। বিবেকের বাবা বিপ্লব রায় বলছেন, মেডিকেলের ই এন টি বিভাগের এইসব ডাক্তারের সত্যি বড় বিবেক রয়েছে, এঁরা ভগবান। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সতর্ক করছেন,শিশুরা যখন খেলনা বাঁশি বাজাবে, একটু দেখবেন — সাবধান থাকবেন।দেখবেন যেন বাঁশি গলার মধ্যে চলে না যায়।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন–