লেখালেখিতেই শান্তি খোঁজেন গোয়ার নন্দিতা সোম

শিল্পী পালিতঃ আজকের আত্মকথায় গোয়ার নন্দিতা সোমের কথা মেলে ধরা হলো। তিনি নাটক, লেখালেখি, গাছের পরিচর্যায় সময় পার করে দেন—

” আমার কথা ”
*****************
বাবা স্বাধীনতা-সংগ্রামী ছিলেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় জেলেই কাটিয়েছেন। ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাবার ঠিকানা ছিলো– ঢাকা, রাজশাহী, হিজলী আর বক্সা র জেল। বাবার সাথী ছিলো কলম আর কাগজ। রাজবন্দী হওয়ার কারনে বাবাকে তদানীন্তন সরকার দয়া করে ওগুলো দিতেন। বাবা ছাড়া পান ১৯৪৭ সালে। জেলের থেকে লেখা পাঠাতেন নানা কাগজে— বিশেষ করে আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকায়। পত্রিকা দপ্তর থেকে বাবাকে বলাই ছিলো জেল থেকে বেরিয়ে বাবা যেনো দেখা করেন। শুরু হলো আনন্দবাজারে কর্ম জীবন । তারপর বিবাহ ও ১৯৫১ তে আমার জন্ম।

১৯৫৮ তে বেথুন স্কুলে ক্লাস থ্রি তে ভর্তি হলাম। গরমের ছুটিতে বাবা হাতে তুলে দিলেন কুলদা-কিশোর গল্প চতুষ্টয়। আমার গল্পের বই পড়ার ঘোড়া ছুটলো। নাটক করতে খুব ভালোবাসতাম। নাটকের ওপর খুব ঝোঁক ছিলো। পাড়ায় স্কুলে বহু নাটক করেছি। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত করে প্রশংসা পেয়েছিলাম। স্বপনবুড়োর লেখা ” মাটির প্রদীপ” করে স্কুলে নাম কিনেছিলাম😊😊। মাঝে মাঝে আবৃত্তিও করতাম।

কিন্তু লেখার ধারে কাছে যেতাম না। বাবা চাইতেন আমি লিখি। খুব অলস ছিলাম। পরীক্ষার খাতায় রচনাতে ভাষা মন উজাড় করে লিখতাম।ক্লাস সিক্সে রবীন্দ্র জন্ম শত বার্ষিকীতে স্কুলের রবীন্দ্র- শতায়ন ম্যাগাজিনে ইংরেজিতে একটি লেখা দিই। ” Way To Shantiniketn”। বাংলা লিখিনি বলে বাবা একটু ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। বাবার খুব ইচ্ছে আমি লিখি। অনেক সাহিত্যিকের মাঝে আমি বড়ো হয়েছি। আমাদের পাইকপাড়ায় বহু সাহিত্যিক থাকতেন। বাবার কর্মসূত্রের যোগাযোগে অনেকে আমাদের বাড়িতেও আসতেন।

১৯৭৩ সনে আমার বিয়ে হয়ে যায় ১৯৭৬ সালে গোয়ায় চলে আসি। সংসার , ছেলে মেয়ে সামলাতাম। গোয়ার দুর্গা পুজোয় নাটক করতাম। গোয়ার প্রসিদ্ধ কলা আকাডেমীতে নাটক করেছি।
কিন্তু মনের কোথায় যেনো এক অপূর্ণতা থেকে যেতো। কাগজ কলম নিয়ে বসতে শুরু করলাম। বুঝলাম অবচেতন মনে বাবার ইচ্ছে আমাকে তাগাদা দিচ্ছে। বাবার আশির্বাদ মাথায় নিয়ে এগোতে শুরু করলাম। গোয়ার পুজোবার্ষিকীতে আমার লেখা ছাপা হলো। পাটনা কালিবাড়ির ম্যাগাজিনেও আমার লেখা ওঁরা ছাপালেন।

এখন ফেসবুকে নিয়মিত লিখি। নানা লেখার গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে গেছি। মনের অপূর্ণতা দূর করতে পেরেছি। নাটক, লেখা, গাছের পরিচর্যায় বেশ কেটে যায় সময়। সেলাই করতে ভালোবাসি, প্রচুর সেলাই করেছি। বর্তমানে চোখের অসুবিধায় সেলাই বন্ধ রেখেছি। এখন লেখাই আমার ধ্যান জ্ঞান। শুধু একটাই দুঃখ– বাবা জেনে যেতে পারলেন না যে — আমি লিখতে শুরু করেছি , লিখছি। লেখায় যে এতো শান্তি আগে বুঝিনি।

এই আমার সাংস্কৃতিক জীবনের কাহিনী।।
Mrs. Nandita Som.
Near Pai_Hospital
Vaddem
Vasco_Da_Gama, Goa