বাংলা ভাষার চর্চা বাড়াতে মা-দের আরও সক্রিয় হতে হবে

ডঃগৌরমোহন রায়, শিলিগুড়িঃ বৃহস্পতিবার ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ঠিক এই মুহূর্তে খবরের ঘন্টার জন্য কয়েকটি কথা বলছি। বাংলা ভাষা নিয়ে কিছু আন্দোলন সাম্প্রতিককালে গড়ে উঠেছে। কিছু রাজনৈতিক সূত্রে, কিছু আবার রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে। সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতার ভিত্তিতে। এই চেতনা ক্রমবর্ধমান। নিজেকে নিয়ে নয়, ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে কিছু ভাবছেন কিছু মানুষ। এখানে বলে রাখা ভালো ১৯৫২ সালে ঢাকার ভাষা আন্দোলন, ১৯৬১ সালে বরাক উপত্যকায় ১১ জনের শহীদ হওয়া এবং ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ঘোষণা– এই হলো ভাষা দিবসের প্রসঙ্গে ইতিহাসভিত্তিক কয়েকটি ঘটনা। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে মানুষ ভাষা নিয়ে আরো বেশি করে ভাবতে শুরু করেছেন। ভাষার বিবর্তন নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখা হচ্ছে। চিন্তাবিদরা তাদের ভাবনা প্রকাশ করছেন। কিছু চিন্তা ইতিবাচক এবং কিছু আবার নেতিবাচক। বুদ্ধিজীবীরা এক্ষেত্রে দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ বলছেন, বাংলা ভাষা বিপন্ন। কারণ,তারা বলছেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই ভাষার প্রতি ভালবাসা কমে আসছে। ইংরেজি ও হিন্দির প্রসার বাড়ছে। এটা ঠিক যে হিন্দি ইংরেজির প্রসারে বাংলা ভাষা কমছে। অন্য অংশ বলছেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলা ভাষা এখন পৃথিবীর পঞ্চম স্থানে রয়েছে। পৃথিবীতে ৬০০০ ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম। এই ভাষা গৌরবের ভাষা। কাজেই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই ভাষা ৩০ কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা। এই ভাষায় বিশ্বমানের সব সাহিত্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। সেগুলো খুবই উচ্চ মানের,সন্দেহ নেই। তাহলে এত হতাশা কেন? এই ভাষা নিয়ে এখনো অনেক গবেষণামূলক কাজ হয়ে চলেছে। আর পাঠকের সংখ্যা যে কমছে তা বলবো না। পাঠক বাড়ছে তবে যে অনুপাতে লোক সংখ্যা বেড়েছে সেই অনুপাতে কিন্তু পাঠক বাড়ছে না। কলকাতা বইমেলাতে গত বছর বই বিক্রি হয়েছে ১৮ কোটি টাকার। এবছর তা কমে হয়েছে ১৫ কোটি টাকার। আমি ভেবেছিলাম ২১ কোটি টাকার বই বিক্রি হবে। কিন্তু তা হয়নি। তার কারণ, আমার মনে হয় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটু বাংলা বই কেনার আগ্রহ কমেছে। তাই এই মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে আমি কয়েকটি সমাধান সূত্র বলতে চাই- এক) বাংলা ভাষা ও বাংলা বই সম্পর্কে অনবরত প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। আর চালিয়ে যেতে হবে আন্দোলন দুই) শিক্ষিত মানুষকে আর একটু বেশি করে বাংলা বই কিনতে হবে তিন)সিলেবাস একটু পরিবর্তন করতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় যেখানে বাংলা আছে সেখানে বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে চার)শিক্ষিত বাবা-মাকে আরেকটু ভাষা সাহিত্য সচেতন হতে হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে বাংলা ভাষার জন্য। পাঁ) মায়েদের আরো বেশি করে সচেতন হতে হবে। ছেলেমেয়েকে শৈশব অবস্থাতেই বাংলা ভাষায় কবিতা, গল্প পাঠ করে শুনাতে হবে যেকাজটা আগে ঠাকুমা দিদিমারা করতেন। এর বাইরে বলবো, প্রত্যেক পরিবারে বাংলা বইয়ের একটা সংগ্রহ গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে অন্তত দশ বারোটা হলেও ভালো বাংলা বই থাকুক যাতে ছেলেমেয়েরা তা দেখতে পায়। আর বাংলা ক্লাসিক্যাল সাহিত্য চর্চা বাড়াতে হবে। যেমন বিদ্যাসাগর, রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজশেখর বসু,ভূদেব মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ চৌধুরী, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখর লেখা পড়াতে হবে ছেলেমেয়েদের।( লেখক একজন গবেষক ও সাহিত্যিক,তিনি দার্জিলিং কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।তার বাড়ি শিলিগুড়ি সুকান্তনগরে।)