নাটকের মাধ্যমেই সামাজিকতায় বিশিষ্ট নাট্যকার

বাপী ঘোষ ,শিলিগুড়ি ঃ চারদিকে বাড়ছে শপিং মল সংস্কৃতি। তার সঙ্গে মোবাইল ব্যবহারের প্রবনতা বেড়েছে। এই অবস্থায় সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গ হিসাবে নাটককে আরও বেশি করে তারা ছড়িয়ে দিতে চান। একের পর এক প্রস্তুতি তারা শুরু করেছেন। কলকাতায় যখন গ্রুপ থিয়েটার হারিয়ে গিয়ে কর্পোরেটে পৌঁছেছে তখন জেলায় তারা গ্রুপ থিয়েটার নিয়েই আরও বেশি করে লড়াই চালাতে চান। শিলিগুড়িতে এই সব কথা জানালেন রাজ্য নাট্য অকাদেমির সদস্য তথা বিশিষ্ট নাট্যকার পার্থ চৌধুরী।
শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে নাট্য আন্দোলনে যতজন ব্যক্তিত্ব আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন পার্থবাবু। ছোট থেকেই তিনি নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ছোটবেলায় তিনি খুব যাত্রা দেখতেন। অনেক রাতে বন্ধুদের সঙ্গে যাত্রা দেখে ফেরার সময় যাত্রার বিভিন্ন ডায়ালগ অভিনয় করতে করতে ফিরতেন। সেই অভ্যাস পরবর্তীতে তাকে নাটকের সঙ্গে বেশি করে সম্পৃক্ত করে তোলে। শিলিগুড়িতে দামামা নামে যে নাটকের দল আছে মূলত তারই হাতে তৈরি। নাটকের এত নেশা যে কলকাতায় একসময় রাশিয়ার মস্কো স্পারটাকাস নাটকের দল এলে তা দেখতেই কলকাতায় পৌঁছে যান। রবীন্দ্র সদনে চিনের পিকিং অপেরার নাটক, শম্ভু মিত্রের নাটক কোনটাই তিনি বাদ রাখতেন না। কলকাতায় এই সব নাটক দেখার জন্য টিকিটের ব্যাপক চাহিদা হলেও তিনি টিকিট কোনভাবে যোগার করে হল ঘরে হাজির থাকতেন। আর সেই সুত্রে তাপস সেন, খালেদ চৌধুরী, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ,বিভাস চক্রবর্তীর মতো নাট্য ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ ঘটে। একসময় কলকাতা দূরদর্শনের সিরিয়াল জন্মভুমিতে তিনি নিয়মিত অভিনয় করেছেন। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, মাধবি মুখোপাধ্যায়দের মতো অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন আকাশবাণীর বিভিন্ন নাটকেও। এখন পর্যন্ত ৭০-৮০ টি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে নাটকে অভিনয় করার জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন। তার নাটকের দল নিয়ে বাংলাদেশও ঘুরে এসেছেন। আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে হিন্দি নাটকের সন্ধ্যায় তিনি যোগ দিচ্ছেন। মুন্সি প্রেমচাঁদের গল্পের নাট্য রুপ আখরি ইনামে তিনি যোগ দিচ্ছেন। পার্থবাবু বলেন, নাটক দিয়ে তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করতে চান। সমাজে ধর্ষণ হচ্ছে। মানুষকে নিঃসঙ্গতা গ্রাস করছে। শপিং মল, মোবাইল সংস্কৃতি মানুষকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করছেন এই সময়েও নাটকের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। নাটক হল সব থেকে শক্তিশালী মাধ্যম। কলকাতায় নাটক কর্পোরেট জায়গায় যাচ্ছে। জেলাগুলোতে গ্রুপ থিয়েটার এখন আছে। তারা তাই নতুনদের টানতে চান আরও বেশি করে। স্কুলগুলোতে পাঠ্য সুচিতে তারা চান, নাটক অন্তর্ভুক্ত হোক। কিছু ছেলেমেয়ে নাটকে আসছে কিন্তু সংখ্যা কম। তাই নাটকে বেশি বেশি করে ছেলেমেয়েদের যুক্ত করতে প্রচারে নামতে চান।