চারণকবি মুকুন্দ দাস স্মৃতি বিজড়িত শিলিগুড়ি আনন্দময়ী কালিবাড়ির দুর্গা পুজো

ভাস্কর বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদকঃশিলিগুড়িতে পুরানো কালিবাড়ি বলে সবাই যে কালিবাড়িকে জানেন সেই আনন্দময়ী কালিবাড়ির দুর্গা পুজো এবছর ৮৭ বছরে পা দিচ্ছে।শিলিগুড়ির প্রাচীন পুজোগুলোর মধ্যে এটি একটি। দেবী প্রতিমা এখানে এক চালা,ডাকের সাজের। রথ যাত্রার দিন থেকে এখানে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে নিয়ম মেনে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। অন্নপূর্ণা শিল্পালয়ের মৃৎ শিল্পী শিশির পাল মন্দির চত্বরেই প্রতিমা তৈরি করছেন।
এই কালিবাড়ির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। পরাধীন ভারতে চারণ কবি মুকুন্দ দাস চারন গান করতে এখানে আসতেন।তিনি তার চারন গানের মাধ্যমে সাহায্য তুলে এই মন্দিরে কালী প্রতিমার বিগ্রহ এবং মন্দির তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। পুরনো দিনের লোকজনের কাছে শুনেছি,পরাধীন ভারতে অনেক বিপ্লবী মনের শক্তি সংগ্রহের জন্য এই মন্দিরে এসে প্রার্থনা করতেন। এখানকার মা খুব জাগ্রত। এই মন্দিরেই নিষ্ঠা সহকারে এবারও দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্রতী হয়েছি আমরা। আগে এখনে অনেক পশু বলি হোত যায়।এখন সেসব হয় না। তবে আখ,কুমড়ো বলি হয়।
আগামী বছর থেকে আমরা আশা করছি নতুন দুর্গা মন্দিরে পুজো করতে পারবো। রাজস্থান থেকে শ্বেত পাথরের দুর্গা মূর্তি আসছে। তার উচ্চতা ১১ ফুট। এই মূর্তি তৈরিতে খরচ পড়ছে ১৫ লাখ টাকা। রাজস্থান থেকে সব মার্বেল এনে দুর্গা মূর্তি তৈরি হচ্ছে। সবমিলিয়ে এই মন্দির তৈরির বাজেট এক কোটি ছাড়াবে। উত্তরবঙ্গে এই রকম দুর্গা মূর্তি আর দ্বিতীয়টি নেই।
তবে এবছর যেহেতু দুর্গা মূর্তি নির্মানের কাজ চলছে তাই অন্যবার যেভাবে মাটির মূর্তি দিয়ে পুজো হয়ে আসছে সেভাবেই পুজো হবে।পুজোর সঙ্গে মানুষের সেবাকে আমরা বিশেষ প্রাধান্য দিই। মহা ষষ্ঠীতে বিলি হবে শাড়ি।পুজোর কদিন সাত থেকে আট ক্যুইন্টাল ভোগের প্রসাদ বিলি হবে।সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত এখানকার ভোগের প্রসাদ নেওয়ার জন্য বহু মানুষ ভিড় করেন।মহালয়াতে আগমনীর ওপর বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। বিজয়া সম্মিলনীতে আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান রয়েছে। পুজোর পাশাপাশি আমরা আনন্দময়ী কালিবাড়ি সমিতির তরফে সারাবছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করি। মন্দির চত্বরে আমাদের কালিবাড়ি সমিতি নবম ও দশম শ্রেণীর দুঃস্থ এবং মেধাবীদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং ক্লাসের বন্দোবস্ত করেছে। এখানে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। প্রায়ই এখানে রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া বিনামূল্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চোখ পরীক্ষার জন্য শিবির বসে প্রায়ই। মা ও শিশুদের নিয়ে যোগাসন চর্চার ব্যবস্থাও আছে এখানে।আগামীদিনে আমরা সকলের আরও সহযোগিতা চাই। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি সামাজিক কাজ আমরা আরও ছড়িয়ে দিতে চাই। মানুষের সেবা বিশেষ করে অসহায় দুঃস্থদের পাশে দাড়ানোই আমাদের বড় মন্ত্র। শারদীয়া উৎসবে সকলের প্রতি আমন্ত্রণ