শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্ম তিথিতে তার জন্ম, কালী সাধনায় শিলিগুড়ির কলেজ ছাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্ম তিথিতেই জন্ম শিলিগুড়ি সূর্যসেন কলেজের ছাত্র সঞ্জীব সাহার। পড়াশোনার পাশাপাশি সে সময় পেলেই মা কালীর পুজো ও ধ্যান সাধনায় মগ্ন হয়ে পড়ছে।শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ার বাসিন্দা এই কলেজ ছাত্রের কালী সাধনা ওই এলাকায় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

নিজে হাতেই কালী প্রতিমা গড়েন সঞ্জীব। আবার নিজেই মন্ত্র পাঠ করে মায়ের পুজো করেন। মা এর সাধনায় সে প্রায়ই এতটা মগ্ন হয়ে পড়ে যে চোখ দিয়ে অঝোরে বেয়ে আসে অশ্রুধারা। যে ঘরে মা এর প্রতিমা গড়ে পুজো করেছে সঞ্জীব সে ঘরেই মেঝের মধ্যে সামান্য একটু বিছানা করে মাকে ডাকতে ডাকতে শুয়ে পড়ে সঞ্জীব। আজকের দিনে আজকের সংসারে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এরকম আধ্যাত্মিক মানসিকতা কতজনের রয়েছে তা নিয়ে কিন্ত চর্চা হতে পারে বলে এলাকার লোকজন মন্তব্য করছেন।
কিন্তু নিজে হাতে প্রতিমা গড়ে আবার নিজেই পুজো কেন, প্রশ্ন করলে সঞ্জীব বলে, মা এর পুজোয় সকলের অধিকার। মা সর্বত্র বিরাজ করছেন। তাই মুচি, মেথর, চন্ডাল সকলেই মা এর পুজো করতে পারেন। পুজো করতে শুধুই ব্রাহ্মনেরই কেন প্রয়োজন হবে?
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কলেজ ছাত্রের মধ্যে কাজ করছে সংস্কার মুক্ত এক অন্য মন। সে বলে, আমি পৈতাও গ্রহণ করবো। তবে ধ্যান সাধনা করে সে মনের মধ্যে অনেক শান্তি অনুভব করে বলে সঞ্জীব জানায়। তার কথায়, ভক্তি যোগ ও ধ্যান সাধনা অনেক নেতিবাচক ভাবনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
মহালয়ার অমাবস্যায় রীতিমতো উপোস করে নিষ্ঠা সহকারে বাড়িতে কালী পুজো করে সঞ্জীব। তারপর প্রতিদিন চলে তার মা কালীর পুজো, আরতি ও ধ্যান সাধনা। দীপান্বিতা অমাবস্যাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। এবারে মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে তার কালী পুজো হলে পরদিন সকালে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব তার বাড়িতে যান। প্রসাদ গ্রহণ করেন। মন্ত্রী তার প্রতিমা তৈরির তারিফ করেন।
সঞ্জীবের বাবা স্বপন সাহা সামান্য একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। আর মা দীপালি সাহা গৃহবধূ। ওর দিদি স্বর্ণালিকা সাহা শিলিগুড়ি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সঞ্জীব সূর্যসেন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট থেকেই ও দেবদেবীর বিভিন্ন মূর্তি খেলার ছলে তৈরি করতে থাকে। একসময় ওর এই নেশা দেখে বাড়ির লোকেরাও বিরক্ত হয়ে পড়েন। তারা সবাই সঞ্জীবকে বকাঝকা শুরু করেন। কিন্তু তারপরও সঞ্জীব দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করার কাজ থেকে পিছু হটেনি। সঞ্জীবের মা দীপালিদেবী বলেন, সঞ্জীবের জন্ম তিথি আর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এর জন্ম তিথি একই। ১৮ ফেব্রুয়ারী, রাত ২টা ৩৫ মিনিটে। তারা সঞ্জীবকে তাই ঠাকুরের জন্মস্থান কামারপুকুরেও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত স্বামীজিরা সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছিলেন, ওকে বকাঝকা করবেন না। ওকে নিয়ে অত চিন্তাও করবেন না। ও মায়েরই সন্তান। তারপর থেকে দীপালিদেবীরা সঞ্জীবকে বকাঝকা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন।
কালী মায়ের মূর্তি গড়ে পুজো করা ছাড়াও শিব রাত্রিতে শিবের মূর্তি গড়ে পুজো কর এবং মনসাদেবীর মূর্তি গড়েও পুজো করেছে সঞ্জীব। তার ঘরে মা কালীর মূর্তির পাশেই শিব মূর্তি এবং মনসাদেবীর মূর্তিও রয়েছে।
আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর সঞ্জীব। মূর্তি গড়ার খরচ তুলতে তাকে কুমোরটুলিতে গিয়ে হাতের কাজ দেখিয়ে কিছু অর্থও তুলতে হয়। কারও কাছে না শিখেও ভালো শ্যামা সঙ্গীত গাইতে পারে সে। ভবিষ্যতে গরিব দুঃখীদের পাশে দাড়ানোর খুব ইচ্ছে তার। সঞ্জীবদের প্রতিবেশী সংস্কৃতি কর্মী নন্দিতা ভৌমিক সঞ্জীবের প্রতিভার প্রশংসা করেন। সঞ্জীব আগামী দিনে আই টি আই নিয়ে পড়ে হাতের কাজের ওপরও কিছু করতে আগ্রহী।