শিল্প জগতে উত্তরবঙ্গে উল্লেখযোগ্য নাম দীপক রঞ্জন সেন

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ উত্তরবঙ্গ শিল্প জগতে অনেকটাই পিছিয়ে।আর এই শিল্প জগতে কিন্তু উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে উঠছেন শিল্পোদ্যোগী দীপক রঞ্জন সেন।তার মতে,উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার পরিবেশ তৈরির জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহন করছেন,এটা ভালো উদ্যোগ।সামনে আরও উদ্যোগ গ্রহন জরুরি। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হলে উত্তরবঙ্গ থেকে বহু ছেলেমেয়ে কাজের জন্য বাইরে চলে যাবে।যা কখনই শুভ হবে না।
১৯৪০ সালের ডিসেম্বর মাসে দীপকবাবুর জন্ম মায়ানমারে।স্কুল ফাইনাল পাস রেঙ্গুনে।পরে কলকাতায় কেমেস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তর উত্তীর্ণ করেন।তার বাবা প্রয়াত বিভূতিভূষন সেন আর মা প্রয়াত সুশীলা সেন। রেঙ্গুন থেকে এসে দীপকবাবু ১৯৬৩ সালে প্রথমে কলকাতার বেলঘরিয়াতে বসবাস শুরু করেন। উত্তরবঙ্গে তার আসা ১৯৭২ সালে।শিল্প কারখানা খোলার আগে দীপকবাবু প্রথমে চাকরি করতেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।প্রথমে কেমিস্ট,তারপর সিনিয়র কেমিস্ট পরে চিফ কেমিস্ট।পরে চাকরি ছেড়ি দিয়ে নিজে শিল্প কারখানা খোলার জন্য প্রয়াস নেন।প্রথমে ক্যাফিন ফ্যাক্টরি।ডব্লু বিএফসি এবং স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে ঋন নিয়ে শিলিগুড়ি দুই মাইলে কেনেন তিন বিঘা জমি।চা পাতা থেকে ক্যাফিন বের করতে কারখানা।সেটা ১৯৭৩ সালের ঘটনা। নাম দেওয়া হয় পিক কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রি।১৯৭৬ সালে সেখানে প্রথম উৎপাদন শুরু হয়। শিল্প কারখানা,তাও আবার বাঙালি করবে,এই ভাবে একসময় অনেকে পিছন থেকে হাসিতামাশা করেছে। কিন্তু না,তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন।প্রথমে চা পাতা থেকে ন্যাচারাল কফি,পরে সিন্থেটিক ক্যাফিন।কিন্তু পরে অলাভজনক হওয়ায় এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।কিন্ত তিনি শিল্প করবেনই।শেষে জৈব সার তৈরিতে তার নজর পড়ে।জৈব চাষের জন্য দেশের প্রথম অর্গাথিয়া জৈব সার তারাই তৈরি করেন বলে পিক কেমিক্যালের কর্নধার দীপকবাবু জানিয়েছেন। বিভিন্ন চা বাগান এবং কৃষি জমিতে এই জৈব সার ব্যবহার করে দারুন ফল আসে।পরে তারা দুটি পণ্য তৈরিতে মন দেন।প্রগতি এবং স্পুটনিক সেভেন। গাছের পুষ্টি, গাছের বৃদ্ধির জন্য এসব পণ্য বা সার দীপকবাবুরা তাদের ল্যাবরেটরিতে রীতিমতো গবেষণা করে বের করেন।তারপর জীবানুসার এবং জীবানু কীটনাশক নতুন পদ্ধতিতে তৈরির জন্য নতুন প্ল্যান্ট তারা তৈরি করেন।বর্তমানে গোটা রাজ্যে সবচেয়ে বড় এরকম বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান আর নেই।দীপকবাবুদের দুই মাইল জ্যোতিনগরের কারখানায় অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি আছে।সেখানে জৈব ও জীবানু সার তৈরির অনেক উন্নত কাজ হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক রসায়ন ও কৃষি বিষয়ক ছাত্রছাত্রীরা সেখানে আসছেন ল্যাবরেটরির কাজ দেখতে।দীপকবাবু জানালেন,তাদের প্রযুক্তি পণ্যের সুনাম গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
চার লাখ টাকা ঋন নিয়ে দীপকবাবু তার যাত্রা শুরু করেন। আজ তার প্রতিষ্ঠানেে ১০০ জন কাজ করছেন।সরকারও আজ তাদের উৎপাদিত কিছু কিছু পণ্য কিনে নিচ্ছে।রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যেও তাদের শিলিগুড়ি কারখানার উৎপাদিত পণ্য কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।দীপকবাবু এই বৃদ্ধ বয়সেও তার কারখানাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।তিনি বলেন,বেকারত্ব দূর করতে ব্যাপক শিল্প কারখানা দরকার। তবে এখান থেকে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।
ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স, ইন্দো জার্মান চেম্বার অফ কমার্স দীপকবাবুকে স্বীকৃতি বা সংবর্ধনা জানিয়েছে।