লড়াইয়ের আর এক নাম টাপুর টুপুর, ৩৫ জনের মুখে স্বনির্ভরতার হাসি

শিল্পী পালিতঃ আজ আমাদের খবরের ঘন্টার আত্মকথা বিভাগে দেবযানী সেন তার বান্ধবী বা বোনের এক অসামান্য লড়াইয়ের কথা লিখে পাঠিয়েছেন। সত্যি এই লেখা অন্যরকম। এই লেখা বহু নারীকে আরও লড়াইয়ে উদ্দীপ্ত করুক —-
আমি দেবযানী সেন।মানে কবিতা কবিতা। নারী শক্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমার কাছে, আমার দেখা সহোদরা থেকেও প্রিয় টাপুর টুপুর (পম্পা মজুমদার)।
মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মেয়ে হয়ে জন্মানোটা কোনওকালেই খুব আনন্দের নয়, সেটা বলাই বাহুল্য । টাপুর টুপুরের জীবনও সেদিক থেকে আলাদা ছিল না। বাধ সাধলো পাঁচ বছর বয়সে হঠাৎ মাতৃ বিয়োগ। অগত্যা মামার বাড়িতে দিদিমার আদরে আর ভালোবাসায় শৈশব কাটছিল কিন্তু এখানেও ভাগ্য অন্তরায় দিদিমার মৃত্যু টাপুর টুপুরের জীবনে ঘোর অমানিশা নিয়ে এলো। শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের আশায় বিমাতার সংসারে জুটলো অকথ্য মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার । চোদ্দ কি পনেরো হবে তখন ফের মামাবাড়িতে শরণার্থীর মতো একটু আশ্রয়ের খোঁজে ফিরে আসা । মামা মামি পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে পাত্র খোঁজা শুরু করেন। মাত্র ষোলো বছর বয়সে কন্যাদায় থেকে মুক্ত হন। উনিশ বছরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম, দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় ।
সংসারের নানান কাজ সামলে শুধুমাত্র নিজের একক প্রচেষ্টায় একটি কোম্পানীতে মার্কেটিং এ জব পেয়ে নতুন করে জীবনে আলো দেখতে শুরু করে। কিন্তু 2015 সালের 15 ই জুলাই এই ভয়ঙ্কর দিনটিতে একটি দুর্ঘটনায় শরীরের প্রায় 60% পুড়ে যায় । দুমাস হসপিটালের বেডে যমে মানুষে টানাটানি চলে।
জীবনটা যখনই নিজের মতো করে সাজাতে গেছে টাপুর টুপুর সব ওলটপালট হয়ে গেছে। জীবনটা আটকে গেল ওষুধ, বিছানা, সার্জারি আর জ্বালা যন্ত্রণায় । রূপের সাথে সাথে আত্ম বিশ্বাসটাও যেন উবে গেল। প্রায় এক বছর গৃহবন্দি জীবন কাটানো ও নিজের সাথে আপোসহীন চলছিল। কিন্তু জীবনতো থেমে থাকেনা । একটাই জীবন তাও ঈশ্বরের দান। ঈশ্বর নাকি তার সবথেকে প্রিয় সন্তানটিকেই বেশি দুঃখ কষ্ট দিতে ভালোবাসেন।
নিজের অদ্যম জেদ, হার না মানা মানসিকতা আর আত্ম বিশ্বাসের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে টাপুর টুপুর সংসারের ফেলে দেওয়া, অব্যবহৃত জিনিসপত্র গুলোল দিয়ে ঘর সাজানোর জিনিসপত্র বানানো শুরু করে । এরপর সম্পূর্ণ নিজস্ব গুণে ও বুদ্ধিতে Artificial Jewellery making এর মাধ্যমে পাট, পোড়ামাটি, চাটাই প্রভৃতি দিয়ে একের পর এক গহনা তৈরি করতে থাকে।
টাপুর টুপুরের এই পথচলা আর থেমে থাকেনি সংসার, সন্তান স্বামী সব কিছু সামলে আর অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও আশীর্বাদে পাথেয় করে শুরু হলো গহনার বুটিক “কারুকৃৎ”। সরকারি মেলা ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেলা গুলিতে #কারুকৃৎ এখন খুবই জনপ্রিয় একটি নাম।
কনসেপ্ট ও সৌন্দর্যের বিচারেও কারুকৃৎ এর গহনা অনেক এগিয়ে । শুধু নিজের পায়েই দাঁড়ানো নয় সঙ্গে প্রায় পঁয়ত্রিশ জন মেয়েকে jewllery making শিখিয়ে স্বনির্ভর করেছে #টাপুর টুপুর ।ওর তৈরি গহনার ডিমান্ড এখন অনলাইনেও । আপনারাও যদি ওর গহনা কিনতে আগ্রহী হন তাহলে #কারুকৃৎ পেজটি ফলো করুন।
হার না মানা এই মানসিকতাকে আমার অর্থাৎ কবিতা কবিতা, বীণাপাণি শিল্পী ও খবরের ঘন্টার পক্ষ থেকে কুর্ণিশ।।