সুমিত্রা, রিতু আর পৃথ্বীরাজের মুখে হাসি —- পাশে খবরের ঘন্টা

নিজস্ব প্রতিবেদন,শিলিগুড়ি ঃঃ সুমিত্রা পোদ্দার, রিতু সূত্রধর আর পৃথ্বীরাজ গাঙ্গুলির মুখে হাসি ফুটলো। শিলিগুড়ি কলেজে সুমিত্রা ভর্তি হলো ভুগোল অনার্স নিয়ে। রিতু শিলিগুড়ি কলেজে ভর্তি হল ইংরেজি অনার্স নিয়ে। আর শিলিগুড়ি কলেজে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হলো পৃথ্বীরাজ ভৌমিক। এদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে খবরের ঘন্টা বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরে। খবরের ঘন্টা ওয়েবপোর্টাল ও পত্রিকা সম্পাদক বাপি ঘোষ পিছিয়ে পড়া এইসব ছাত্রছাত্রীর জন্য সৌমীর মিলি সিনহা, সম্প্রীতির জয়ন্ত কর এবং স্বামীজি ক্লাবের সভাপতি রতন সাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা কেও মুখ ফিরিয়ে নেননি। ফলে হাসি ফুটেছে ওই তিন মেধাবী ছাত্রছাত্রীর মুখে।

অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র পৃথ্বীরাজ গাঙ্গুলি। শিলিগুড়ি বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠ থেকে এবছর ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। তার বাবা সামান্য পুরোহিত। তিনি আবার অসুস্থও। পৃথ্বীরাজ এর মা-ও অসুস্থ। সংসারে অভাব আছে। অভাবের মধ্যেই পৃথ্বীরাজ পড়াশোনার পাশাপাশি বিজ্ঞান চেতনায় তার উদ্ভাবনী দিক মেলে ধরছে। কদিন আগে পানীয় জলের অপচয় রুখতে প্যাডল ট্যাপ আবিষ্কার করে পৃথ্বীরাজ। সেখবর প্রথম খবরের ঘন্টা মেলে ধরে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে তার দুর্দান্ত ফলাফলও বিশদে মেলে ধরে খবরের ঘন্টা। আর তারপরই খবরের ঘন্টার মাধ্যমে পৃথ্বীরাজের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শিলিগুড়ি আশ্রমপাড়ার স্বামীজি ক্লাবের সভাপতি রতন সাহার। রতনবাবুরা পৃথ্বীরাজের বিষয়ে তাদের ক্লাবে আলোচনা করেন। তারপর সিদ্ধান্ত হয়, পৃথ্বীরাজকে আগামী দিনগুলোয় পড়াশোনার সবরকম সহায়তা করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার ক্লাব সভাপতি রতনবাবু, সম্পাদক সঞ্জয় সাহা সহ অন্যরা পৃথ্বীরাজের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন। রতনবাবু জানান, তারা এরকম বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছেন। এরপর তারা একটি টীম তৈরি করছেন যারা রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা বা অসহায় অবস্থায় কেও পড়ে থাকলে তাদের পাশে থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।
শিলিগুড়ি চয়নপাড়ার রিতু সূত্রধরের বাবা নেই। মা লোকের বাড়ি কাজ করে। এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে রিতু। পড়াশোনা চালাতে রিতুকে অবসর সময়ে জামাকাপড় সেলাই করতে হয়েছে। কিন্তু কলেজে কিভাবে ভর্তি হবে সে, টাকা নেই বলে তার বাড়ি থেকে উচ্চ শিক্ষা বন্ধ করতে বলা হয়— এই অবস্থায় খবরের ঘন্টা সংবাদ পরিবেশন করে। খবরের ঘন্টার সম্পাদক সৌমীর মিলি সিনহা এবং সম্প্রীতির জয়ন্ত করের নজরে আনেন বিষয়টি। মিলি সিনহা এবং জয়ন্ত কর তাদের সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন। শেষে শিলিগুড়ি কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে রিতু। রবিবার শিলিগুড়ি দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিতুর হাতে শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেয় সৌমী। সেখানে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ঘোঘোমালি হাইস্কুল এর ছাত্রী সুমিত্রা পোদ্দারের হাতেও শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেয় সৌমী। অনুষ্ঠানে সৌমীর মিলি সিনহা,শ্রাবণী চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। চিত্র শিল্পী বিপদ ভঞ্জন শিকদার তাদের হাতে ওইসব সামগ্রী তুলে দেন।
এদিন দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবে দুটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেও সকলের নজর কাড়ে সৌমী। প্রথমত পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে রক্তদান শিবির। আর যারা রক্ত দান করে তাদের সকলের হাতে একটি করে গাছের চারা তুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়। পরিবেশ রক্ষা,একটি গাছ একটি প্রান এবং জলের অপচয় বন্ধ করার আবেদন নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়। ওই একই বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাও হয়। মিলি সিনহা সকলের কাছে পরিবেশ রক্ষা ও জলের অপচয় বন্ধ করতে এগিয়ে আসার আবেদন করেন।