বাপি ঘোষ,শিলিগুড়িঃ পাঁচ বছর আগে সে মহিলার কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে।তার চিকিৎসা করছেন বটে।কিন্তু হার স্বীকার করেননি নো অ্যানসারের কাছে।উল্টে হাসি মুখে প্রসব যন্ত্রনা কাতর মহিলাদের রাত বারোটাতেও হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন। জলপাইগুড়ি পাহাড়পুরের এই প্রণম্য আশা কর্মীর নাম রানু রায়রাজবংশী।মঙ্গলবার মাল ব্লকের তেশিমিলা গ্রামের এক অনুষ্ঠানে এই মহিলাকে সংবর্ধনা দেওয়া হল।তার সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত আর এক আশা কর্মী জলপাইগুড়ি ভগতসিং কলোনির সরস্বতী বিশ্বাসকেও সংবর্ধনা দেওয়া হল।ক্যান্সারের মতো মারনব্যাধি শরীরে থাকা সত্বেও কিভাবে হাসি মুখে তারা দিনরাত অসুস্থ গর্ভবতী মা এবং শিশুদের জন্য কাজ করছেন তা অন্য সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।পদ্মশ্রী করিমূল হকও এদিন এই আশা কর্মীদের কাজকে সেলাম করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়েস্টবেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ এসোসিয়েশন মাল ব্লকের ওই গ্রামে আশা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।সমাজসেবী তরুন মাইতি এর পুরোভাগে থেকে প্রশিক্ষণ পর্ব সহ অন্য কাজ পরিচালনা করছেন। এদিন তরুনবাবুরা এই দুই আশা কর্মী ছাড়াও ফালাকাটার ব্যতিক্রমী আশা কর্মী টুকটুকি বর্মনকেও সংবর্ধনা জানান।প্রসূতি মায়েদের রক্ত সংগ্রহ করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টুকটুকি।স্থানীয় গ্রামের প্রধান মিনারা পারভিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নাগরাকাটার সিপচু গ্রামের ২৪ বছরের যুবতী প্রেরনা সুনওয়ারকেও সেখানে সম্মান জানানো হয়। সিপচুর ওই প্রত্যন্ত জঙ্গল গ্রামে কোনও আশা কর্মী নেই। বাড়িতে প্রসব করানো সেখানকার প্রথা।স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে ১২ কিলোমিটার দূরে। ঝাড়ফুঁক আর ওঝাদের রমরমা গোটা এলাকা জুড়ে। মাধ্যমিক পাশ করা প্রেরনা এখন ওই গ্রামের আলো।মেয়ে হয়েও সবার থেকে চাঁদা তুলে গর্ভবতী মা-দের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে রানুদেবীর।তার বয়স ৪০। স্বামী তুষ্ট রায় গাড়ি চালক।ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ভেবেছিলেন মারা যাবেন। কিন্তু আজও লড়ছেন।আর একদিকে সেবা করছেন হাসি মুখে। রাত বারোটাতেও যদি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কোনও প্রসব বেদনা নিয়ে মহিলার ফোন আসে,মুখ ফিরিয়ে নেন না।স্বামীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের দিকে।স্বামী চালায় সাইকেল,সে সাইকেলে বসেন তিনি। আর শরীরের বাইরে থাকা প্রস্রাবপায়খানার পলি ব্যাগটা কোমরে ভালো করে বেঁধেই দে ছুট।যন্ত্রনা আছে কিন্তু প্রসব বেদনায় মা হতে যাওয়া মহিলাকে হাসপাতালে পৌছে দেওয়ার তৃপ্তি তার ক্যান্সার যন্ত্রনাকে হার মানায়। রানুদেবী বলেন, সবাই উৎসাহ দেন।সবাই পাশে আছেন।তাই ক্যান্সারকে দুমড়েমুচড়ে দিতে পারি ইচ্ছাশক্তিতে। মা ও শিশুর ভালো করার মতো তৃপ্তির কাজ আর নেই। কান্না ছিল ভিতরে কিন্তু কান্না চেপে হাসি মুখেই সব কথা জানাচ্ছিলেন রানুদেবী।আবার ক্যান্সার আক্রান্ত সরস্বতীদেবী কেদেই দিলেন। তার স্বামী কিছুদিন আগে মারা যান।ঘরে দুই সন্তান। তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু মরতেতো একদিন হবেই তবে মানুষের কল্যান করে কেন মরবো না? তাই যত পারা যায় মা ও শিশু কল্যানে কাজ করে যাও, বললেন সরস্বতীদেবী। মঙ্গলবারের সেই অনুষ্ঠানে বীনাপানি শিল্পীর গলায় গাওয়া কন্যা ভ্রুন হত্যা, শৌচালয় নির্মাণ, গাছ লাগাও প্রান বাচাও এবং ডেঙ্গু সচেতনতার গানগুলো শোনানো হয় সকলকে। সকলেই সামাজিক সচেতনতার সেসব গানের প্রশংসা করেন।