ইংরেজরা ভারত ছাড়লেও জলপাইগুড়ির যে চার্চের চাবি নিয়ে যায়নি

বাপি ঘোষ ঃ স্বাধীনতার মুক্তি যোদ্ধা সব দেশপ্রেমিকের আন্দোলনের জেরে ইংরেজ ভারত ছেড়েছিলো, কিন্তু ইংরেজরা ভারত ছাড়লেও জলপাইগুড়ির একটি চার্চের চাবি নিয়ে তাদের দেশে চলে যায়নি। ১৮৬৮ সালে তৈরি হওয়া জলপাইগুড়ির সেই সেন্ট মাইকেল অলেঞ্জেস চার্চকে আজ তাই হেরিটেজ তকমা দেওয়ার দাবি উঠেছে। ঐতিহ্যমন্ডিত সেই চার্চের রেভারেন্ড ডেভিড হাঁসদা এবং চার্চ কমিটির সম্পাদক ভোলা মন্ডল সরকারের কাছে সেই চার্চকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন।
১৮৬৮ সাল। তার ঠিক আগে ইংরেজদের সঙ্গে ভুটান রাজের যুদ্ধ চলছিল। সেই সময় ইংরেজরা জলপাইগুড়ির রেসকোর্সে তাদের একটি ছাউনি তৈরি করে। সেখানে ইংরেজ সৈন্যরা এসে থাকতো।আর ইংরেজ সেনাপতিরাা এই এলাকায় একটি চার্চ তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলো। তখন জলপাইগুড়ির পাশ দিয়ে অনেক চা বাগান তৈরি হচ্ছিল। সেইসব চা বাগানের অধিকাংশ ম্যানেজার ছিলো ইংরেজ। তারা নৌকাযোগে বাগান থেকে এই এলাকায় আসতো আর ইউরোপিয়ান ক্লাবে খেলাধূলা করে বিকালে চার্চে প্রার্থনা সেরে বাগানে ফিরে যেতো। জলপাইগুড়ির সেই ঐতিহাসিক চার্চের বর্তমান সম্পাদক ভোলাবাবু বলেন, ইংরেজদের সময় এই চার্চে শুধু ইংরেজ ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার ছিলো না। স্থানীয় খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন না। ইংরেজ যখম আন্দোলনের চাপে ভারত ছাড়ে সেই সময় তারা এই চার্চের চাবি বাংলাদেশের এক ক্রিস্টোফারের কাছে দিয়ে যায়। সেই ক্রিস্টোফার থেকে চার্চের চাবি যায় ব্যারাকপুরের ডায়াসেশনে। পরে দেশ স্বাধীন হলে সে চার্চের সদস্য নবকুমার মন্ডল ব্যারাকপুর থেকে চাবি এনে চার্চ খুলে দেন। এরপর সেখানে প্রার্থনায় বসার জন্য প্রথম অধিকার পান স্থানীয় বাঙালি, আদিবাসী, নেপালি, বিহারী সহ বিভিন্ন জাতির খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। আজ সেই চার্চ সকলের মিলন ক্ষেত্র। এবারও বড় দিনের অনুষ্ঠানে জলপাইগুড়ির এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই চার্চে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে শান্তি সম্প্রীতির প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন।
রেভারেন্ড ডেভিড হাঁসদা বলেন, এবারে ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজ্য পর্যটন দপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভা বিশেষভাবে চার্চটিকে আলোর মালায় সাজিয়েছে। পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত সেই আলোকসজ্জা থাকবে। জলপাইগুড়ির সাতটি চার্চ, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন রাস্তা আলোর মালায় সাজিয়ে তোলার সরকারি কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে এই ঐতিহাসিক চার্চটি। সেজন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানায় এই চার্চ কমিটি। ৩১ ডিসেম্বর রাতে এই চার্চ বন ফায়ার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, প্রীতিভোজ,সমবেত গান, ক্যুইজ, ইনডোর গেমসের আয়োজন করেছে। সেই সময় প্রভু যীশুর কাছে নতুন বছরের জন্য শান্তি ও সকলের মঙ্গল প্রার্থনা করা হবে।
তবে এত কিছুর পরও চার্চের রেভারেন্ড ডেভিড হাঁসদার আক্ষেপ,ঐতিহাসিক এই চার্চে আজ ১০০ জনের ওপর সদস্য। এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ৩২ টি পরিবার। এখনই চার্চটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে এর সংস্কার প্রয়োজন। নয়তো কালের নিয়মে হয়তো একদিন শুধুই ইতিহাসের পাতায় জায়গা নেবে এই চার্চ।