দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে হিংসার জেরে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামির রাস্তায় মৃৎ শিল্পী

নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে বারবার হিংসা আর হুমকির মধ্যে পড়েছেন শিলিগুড়ির এক মৃৎ শিল্পী।তাই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ একপ্রকার ছেড়ে দিয়ে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামির রাস্তায় হাটলেন ওই শিল্পী। শিলিগুড়ি কুমারটুলির ওই মৃৎ শিল্পীর নাম অধীর পাল।সিকিম,ভুটান থেকে শুরু করে মায়ানমার পর্যন্ত এখন তার বুদ্ধ মূর্তির ছড়াছড়ি।
ছেলেবেলায় অবিভক্ত বাংলাদেশে থাকার সময় একবার স্কুলে যেতে গিয়ে রাস্তায় মাংস কাটা দেখেছিলেন অধীরবাবু। তারপর সারারাত ঘুমোননি। মাংস কাটার সেই নৃশংসতা এবং রক্তপাত তার মনে রেখাপাত ঘটায়। পরদিন সকালে বই নিয়ে বসার সময় ভগবান বুদ্ধের একটি অংশ পড়ছিলেন।তাতে অহিংস পরম ধর্ম খুব মন দিয়ে পড়ছিলেন। সেই ভাবনা আজ এই ৬৪ বছর বয়সে তাকে আরও বেশি করে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। শিলিগুড়ি কুমার টুলির মৃৎ শিল্পী অধীর পাল বছর পাঁচেক আগেও ২৮ টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। এখন এবারে সেই সংখ্যা মাত্র দুটিতে ঠেকেছে। পুজোর ঠিক আগে এই সময় তিনি দিনরাত দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে মেতে উঠতেন। এখন দুর্গা প্রতিমা নির্মান ছেড়ে বুদ্ধ মূর্তি নিয়েই আছেন। মাটি দিয়ে বিভিন্ন আকারের বুদ্ধ মূর্তি তৈরি করে তাতে ফাইবার গ্লাসের কাজ করছেন তিনি। সিকিমের বিভিন্ন স্থানে তার হাতে তৈরি তিবেতিয়ান আর্টের ওপর মূর্তি পর্যটকদের খুশি করছে।সিকিমের রাবাংলা ছাড়া পেলিং ইত্যাদি স্থানে তার হাতে তৈরি মূর্তিগুলো শোভা পাচ্ছে।কিন্তু কেন দুর্গা প্রতিমা নির্মান ছেড়ে বুদ্ধ মূর্তি নির্মানে তিনি,প্রশ্ন করলে অধীরবাবু বলেন, শিলিগুড়িতে দুর্গা প্রতিমা নির্মান করতে গিয়ে দেখেছি অনেক ক্লাব সঠিক সময়ে পারিশ্রমিক দেয় না। বা দিলেও তা খুব কম।তারা মন্ডপ বা আলোকসজ্জার পিছনে যত খরচ করে প্রতিমার পিছনে সেভাবে গুরুত্বই দিতে চায় না। তাদের পিছনে পয়সার জন্য মৃৎ শিল্পীদের কুকুরের মতো ঘুরতে হয়। অনেক সময় প্রতিমা নির্মানের পারিশ্রমিক চাওয়াতে রিভলভার দেখিয়ে হুমকি দেখানো হয়েছে।কখনওবা মারধর পর্যন্ত হয়েছে। তাই প্রতিমা নির্মানকে বিদায় জানিয়ে বুদ্ধ মূর্তি নির্মানে তিনি ঝুকেছেন বলে অধীরবাবু জানালেন। তার কথায়, প্রতিমা শিল্পীদের শিল্পকলা যেভাবে উপেক্ষার শিকার হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতেে বাংলার এই ঐতিহ্যমন্ডিত শিল্পের কি হবে তা নিয়ে এখন থেকেই একটু একটু করে প্রশ্ন আসছে।নতুন প্রজন্মও মাটি ঘেঁটে আর প্রতিমা নির্মানে তেমন আগ্রহী নয়। তাছাড়া তেমন শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।