হিমালয় পাহাড় কেমন প্রভাব ফেলেছে বিশ্ব কবির জীবনে, একের পর এক বই প্রকাশ করে চলেছেন এই গবেষক

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ  রবীন্দ্র সাহিত্যে পার্বত্য ভ্রমণের প্রভাব নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন।আর বিশ্ব কবি পাহাড়ে কোথায় কোথায় গিয়েছেন—শিলং থেকে কাশ্মীর,দার্জিলিং থেকে কালিম্পং, মংপু কিভাবে বারবার কবিকে আকর্ষণ করেছে তা নিয়ে তিনি বই-ই লিখেছেন। শিলিগুড়ি হাকিমপাড়া নিবাসী গবেষক ডঃ রতন বিশ্বাসের সে বইয়ের দুটি সংস্করণ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি সংস্করণই বেশ ভালো ভাবে নিয়েছেন পাঠকরা।এবারে রতনবাবু তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের প্রয়াস নিচ্ছেন। রতনবাবু বলেন,বিশ্ব কবির জীবনে হিমালয় পাহাড় কিভাবে প্রভাব ফেলেছে সেটাই তিনি বইতে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন।বিশ্বকবির লেখালেখি বা সাহিত্য রচনা,চিঠিপত্র, কবিতা,সঙ্গীতে পাহাড় প্রকৃতি কিভাবে প্রভাব ফেলেছে তা তিনি বহু দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে মেলে ধরেছেন। রতনবাবু বলেন,বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২ বার দার্জিলিং এসেছেন। তিনধারিয়াতে কবি গিয়েছেন দুবার,কার্শিয়াংয়ে দুবার,মংপুতে চার বার এবং কালিম্পংয়ে চার বার।১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ কবি ঘনঘন যাতায়াত করেছেন মংপু এবং কালিম্পং। তবে দার্জিলিংয়ে কবির প্রথম যাতায়াত শুরু ১৮৮২ সালে।শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে এসে কবি দার্জিলিং মেলে নামতেন।তারপর গাড়ি ভাড়া করে সড়ক যোগে পাহাড়ে যেতেন।মাত্র দুবার টয়ট্রেনে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন থেকে কবি পাহাড়ে গিয়েছেন।তখন মংপু থেকে গেলিখোলা পর্যন্ত টয়ট্রেন চলতো।১৯৫০ সালে বন্যার সময় গেলিখোলার সেই ট্রেন লাইন ধসে যায়।
রতনবাবুর বয়স এখন ৭৯ বছর।এই বয়সে এসেও তিনি এখনো সবসময় লেখালেখি করে চলেছেন।পাহাড়ে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ভাষা ও স্থান নাম,উত্তরবঙ্গের লোকগান,উত্তরবঙ্গের মেলা ও উৎসব, বাংলার ভাওয়াইয়া, শিলিগুড়ি তরাইয়ের ইতিবৃত্ত ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর ১৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
ছেলেবেলায় যখন তিনি সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন সেই সময় স্কুলের ম্যাগাজিনে তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন।বিষয়টি ছিলো গরমের দিন।সেই কবিতা তাঁর নামে প্রকাশিত হওয়ায় তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন।তারপর তাঁর আরও কিছু লেখা প্রকাশিত হয় স্কুলের ম্যাগাজিনে।সেই যে লেখালেখির নেশা রক্তের মধ্যে প্রবেশ করলো তা আজও ছাড়তে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পুরস্কার তিনি পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার জন্য। তবে চলতি বছরেই গত ১১ জানুয়ারি কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে তাঁকে বিশেষভাবে সন্মানিত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর হাতে পুরস্কার হিসাবে স্মারক তুলে দেন।
পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এরপর এই প্রতিভাবান লেখক উত্তরবঙ্গের আদিম জনজাতিদের ভাষা ও শব্দ কোষের ওপর কাজ করছেন।তার ওপর একটি বই প্রকাশ করবেন।তিন হাজার করে চারটে জনজাতির ১২ হাজার শব্দ কোষ তিনি সংগ্রহ করেছেন।তিনি বলেন,সময়ের নিয়মে আদিবাসীদের কিছু শব্দ, কিছু ভাষা হারিয়ে গেলে তাঁর নতুন বই নতুন প্রজন্মকে অনেক তথ্য দিতে পারবে।
বাংলাদেশের সাতখিরা জেলার তারালি গ্রামে এই বিশিষ্ট গবেষকের জন্ম ১৯৪৪ সালে।তাঁরা বাবা প্রয়াত অবনী মোহন বিশ্বাস ছিলেন প্রয়াত রাজ্যপাল তথা শিক্ষা মন্ত্রী তথা জমিদার হরেন্দ্র নাথ রায়চৌধুরীর নায়েব।আর মায়ের নাম ছিলো আশালতা বিশ্বাস। সাত আট বছরে দেশ ভাগাভাগির সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে আসেন বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার টাকি শহরে। সেই টাকি শহরেই তার শৈশবের পড়াশোনা। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগের কর্মসূত্রে তাঁর শিলিগুড়ি চলে আসা।

বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —