মৃত মাটির জীবন ফিরিয়ে মানুষ বাঁচাতে অন্যরকম প্রয়াস অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষি জমিগুলোতে একনাগাড়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে। আর লাগাতর রাসায়নিক ব্যবহারের জেরে বহু জমি মরে গিয়েছে। চাষ যোগ্য জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বহু জমিতে অনেক উপকারী জীবানু হারিয়ে গিয়েছে। তাই সেই সব মৃত জমিতে জীবানু জৈব সার প্রয়োগ করে মাটির প্রাণ ফিরিয়ে আনার প্রয়াস শুরু হয়েছে। আর এক্ষেত্রে শিলিগুড়ি দুই মাইল জ্যোতিনগরের বাসিন্দা তথা শিল্প পতি দীপক রঞ্জন সেন গোটা দেশে এক পথিকৃৎ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছেন। রবিবার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফুলবাড়ির ইকো পার্ক রিসর্ট সোয়াসতিকাতে এই বিষয়ে এক সভার আয়োজন করেন দীপকবাবু। সেখানে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জৈব সার বিক্রেতারা দীপকবাবুর মৌলিক উদ্যোগের তারিফ করেন।

জমিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে চাষবাস আজকের দিনে বিরাট এক সমস্যা। রাসায়নিক সারের ব্যবহার শুধু যে মাটিকে মেরে ফেলছে তা কিন্তু নয়, রাসায়নিক সার মানুষের জীবনেও সঙ্কট ডেকে আনছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের পর উৎপাদিত কৃষি পণ্য খেয়ে মানুষের ক্যান্সার থেকে শুরু করে অন্য রোগব্যাধি বাড়ছে। দিনকে দিন মানুষের রোগ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, রাসায়নিক সার। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে ধ্বংস করে দিচ্ছে অনেক উপকারী জীবানু। এই অবস্থায় মাটি বা চাষের জমি বাঁচাতে জৈব কৃষির ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জমিতে জৈব জীবানু সার প্রয়োগ করে জমিকে পুনর্জীবন দেওয়া যায়। আর এই কাজে গোটা দেশে কার্যত পথিকৃৎ হয়ে উঠেছেন শিলিগুড়ির বিশিষ্ট শিল্পপতি দীপক রঞ্জন সেন।
শিলিগুড়ি দুই মাইল জ্যোতিনগরে রয়েছে দীপকবাবুর ল্যাবরেটরি। ফুলবাড়িতে রয়েছে কারখানা। নাম পিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সেখানেই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন জৈব সার। ১৯৭৬ সাল থেকে পিক কেমিক্যালের পণ্য উৎপাদন শুরু। জৈব পদ্ধতিতে চাষবাস করার জন্য জীবানু সার থেকে শুরু করে অনু খাদ্য সব কিছু পিক কেমিক্যালে উৎপাদিত হয়। গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পিকের বায়োটেক পণ্য সরবরাহ হচ্ছে। বিভিন্ন চা বাগানগুলোও এখন বুঝতে শুরু করেছে যে, কেমিক্যাল বা কীটনাশক ব্যবহার না করে সব জৈব পদ্ধতির পণ্য ব্যবহার করতে হবে। দীপক রঞ্জন সেন জানিয়েছেন, তাদের সব পণই আন্তর্জাতিক সংস্থার সার্টিফায়েড করা। পঞ্চাশ ষাট রকম জীবানু আছে যেমন রাইজোবিয়াম, এজোস ফিরিডিয়াস প্রভৃতি। এসব উপকারী জীবানু তারা পিক কেমিক্যালের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করছেন। এগুলো জমিতে ব্যবহারের পর জমি আবার পুর্নজীবিত হয়ে উঠছে। আধুনিক সব যন্ত্রপাতি, বায়োটেকনলোজিতে ডক্টরেট করা লোকজন দীপকবাবুর কারখানায় ওই মৌলিক কাজে নেমেছেন।
রবিবার ফুলবাড়ির ইকো পার্ক রিসর্ট সোয়াসতিকাতে ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, হলদিবাড়ি থেকে সার বিক্রেতারা উপস্থিত হলে দীপকবাবু তাদের সামনে জৈব কৃষির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। দীপকবাবু বলেন, তিনি যখন বহু দিন আগে প্রথম জৈব সার অরগাথিয়া তৈরি করেন তখন অনেকে তা নিয়ে হাসাহাসি করতেন। এখন সেইসব লোকেরাই জৈব কৃষির উপকারিতা বুঝে অরগাথিয়া সহ অন্য জৈব জীবন সারের খোঁজ করছেন।