ছোট থেকে রং তুলি নিয়ে বসে যাওয়াই নেশা শ্রীময়ী গুহের

শিল্পী পালিতঃছবি আঁকতে ভালোবাসেন শ্রীময়ী গুহ। পড়ুন তাঁর লেখায়–

আমি শ্রীময়ী গুহ।বাবা. – স্বর্গীয় মহাসমর রায়।মা – স্বর্গীয় দীপ্তি রায়

খুউব সাধারণ মানুষ আমি, দুই পুত্র কন্যার মা এবং পুত্রবধূরও মা! সংসার, যৌথ পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, বাগান, পড়াশোনা নিয়েই থেকেছি চিরকাল। ভালোবাসি সবকিছুই। রান্না বা ঘর গোছানো, বাগান বা সারমেয়দের যত্ন, তাদের খাবার দেওয়া, স্নান করানো, ওষুধ দেওয়া! যদিও এই সন্তানরা এখন সবাই পথকুকুর। বিদেশী দেশী সবরকম কুকুর আমার সন্তান।

খুউব ছোট্ট থেকে রঙ তুলি নিয়ে বসে যাওয়া আমার নেশা। মা ছোট বেলায় রঙ তুলির জগতে আমার বিচরণ দেখেই খাতা পেন্সিল ধরিয়েছিলেন। সেই অর্থে কোনো শিক্ষক ছিলেন না আমার আঁকার জন্য। শৈশবে মাতৃহারা হওয়ার পরেও, বাবার উৎসাহেই আমার কথক নাচ, ক্লাসিকাল গান, মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা, ক্যালকাটা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনে সাঁতার শেখা এবং প্রতিযোগী হয়ে ওঠা সাইকেল চালিয়ে নিজের জগতে ছুটে বেড়ানো এবং ইজেল ক্যানভাস নিয়ে আঁকা, সবকিছুই চলতে থাকে।বরাবরই লেখা এবং আঁকার দিকে আমি খুঁজে পেয়েছি একাকীত্বকেই নতুন করে আবিষ্কার করতে। হারানো মাকেও যেন ছুঁয়ে যাই এই সবকিছুর মধ্যে দিয়েই।তাই কম বয়সে বিয়ের পরেও বিশাল যৌথ পরিবারে, দীঘি থেকে সাগরে এসে পড়ার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েও ছাড়িনি আঁকা, নাচ, লেখা এবং পড়াশোনা।পাশে পেয়েছি আমার স্বর্গীয় শাশুড়ি মা কে! ছেলে মেয়েদের বড় করা, অসুস্থ শ্বশুরমশাই শাশুড়ি মায়ের সেবা যত্ন আরও অনেক আত্মীয় নিয়ে।ভোর থেকে রাত, দায়িত্ব পালন এবং হাসি ঠাট্টা মনোমালিন্যের মাঝেও রাত জেগে নতুন করে পড়াশোনা করেছি, ছবি এঁকেছি।

খুউব ছোট্ট থেকেই বাবা আমাকে নিয়ে যেতেন নানান অঙ্কন প্রতিযোগীতায়,…. “বসে আঁকো প্রতিযোগিতায়” । প্রত্যেক বার আমি হয় প্রথম, নয়ত দ্বিতীয় স্থান পেয়ে বাপির হাতেই তুলে দিতাম প্রশংসা পত্র এবং পুরস্কার।
কারণ এসবের জন্য বাপিই যোগ্যতম মানুষ! 🙏আমার দেখা সেরা মানুষ।🙏।আনন্দমেলার শিশু বিভাগে নিয়মিত প্রকাশ পেত আমার আঁকা ছবি এবং ছোট্ট ছোট্ট লেখা ছড়া। সেটাও বাপির উৎসাহে।পনেরো বছর বয়সের সময় একটি এক্সিবিশনে, আমার আঁকা ছবি শ্রদ্ধেয় শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যেঠুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।এর আগেও অবশ্য অনেক এক্সিবিশনে আমার ছবি দিয়েছিলাম।এর পরেই রামানন্দ জ্যেঠু আমাকে নিয়ে যান ওনার কাছে এবং ওনার সান্নিধ্যে বেশ কিছু বছর কাজ করেছি আমি। বাচ্চাদের আঁকা শেখানোর কাজ উনিই দেন এবং আজও যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন।

আমার মনভার, আমার আনন্দ, আমার একাকীত্বের সবটুকুই আমি উজার করে দিই আঁকা এবং লেখার মধ্যে দিয়ে।একলা ছাতের ঘরে ইজেল রঙে ডুবে কত যে দিন রাত্রি কেটেছে নিউআলিপুরের বাপের বাড়িতে তা লিখে বোঝানো যাবে না।সব আঁকার সময়েই মনে হয় সবটুকুই দিলাম ঢেলে আমার সাধ্যমত,… কিন্তু শেষ হওয়ার পরেই মন বলে, কিচ্ছু হল না,…. কিচ্ছু বলা হল না,…. কিচ্ছু সম্পূর্ণ হল না,… বাকি থেকে গেল আজও সবই। কিচ্ছু শেখা হয় নি আমার। এ আঁকা এ লেখা সবই অসম্পূর্ণ। খুঁতে ভরা,.. ভুলে ভরা।তাই আবার আবার তুলে নিই রঙ তুলি, কালি কলম।এরাই আমার সহস্র ব্যস্ততাতেও চিলতে খুঁজে নেওয়া অবসর, সে হোক রাত দেড়টা বা ভোর তিনটে।আমি ভাগ্যবান যে আমার পরিবার, আমার আত্মীয় স্বজন, আমার সন্তানরা এবং স্বামী …. শ্বশুরবাড়ির সব্বাই…. আমার এই পাগলামির বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কখনো। বরং নীরবে আমার এইসব অকাজকেই উৎসাহ জুগিয়ে এসেছেন। আমি কৃতজ্ঞ সব্বার প্রতি,…. যাঁরা আমার সাথে ছিলেন আছেন এবং থাকবেন।

I/23 baishnabghata patuli township
Kolkata 94