সনাতন ধর্ম : পালি সাহিত্যের দৃষ্টিতে

পলি মল্লিক( পি এইচ ডি স্কলার, পালি এবং বৌদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগ,বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, বারানসি):যে মহামানবের চিরমধুনিসৃত অমৃতময় বাণী দ্বারা ধরণীতল সিক্ত হয়েছে, সেই পদ্মপ্রেমরূপ ভগবান বুদ্ধের প্রদর্শিত পথ সত্য ও শান্তির পথ। মৈত্রী করুণা মুদিতা ও উপেক্ষা যার  মূলমন্ত্র। প্রেমময় বাণী, করুনা ভাব, মুদিতা এবং উপেক্ষা এই চার আর্যসত্য হল একজন মানুষের প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভের আদর্শস্বরূপ। ভগবান বুদ্ধ তাঁর  মঙ্গলময় বাণী যে ভাষায় প্রচার করেছেন তা সর্বসাধারণের ভাষা পালিভাষা। এবং এই ভাষাতেই ভগবান বুদ্ধতার অধিকাংশ বাণী প্রচার করে গিয়েছেন। পালি সাহিত্যের বহু আলোচিত এবং নৈতিক মূল্যবোধের অমূল্যরত্নস্বরূপ গ্রন্থ হল ‘ধম্মপদ’। ধর্মপদের যমক বগ্গের ৫ নং গাথায় ভগবান বুদ্ধ বলেছেন- ‘না হি বেড়েনা বেড়ানি’। অর্থাৎ হিংসার দ্বারা হিংসাকে প্রশমিত করা যায় না। মলিন জল যেমন ময়লা বস্ত্রকে পূর্বের স্বরূপ দানে অসমর্থ্য, তেমনি হিংসার দ্বারা কৃত কর্মের সমাধান সম্ভব নয়। বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষার বাণীর দাঁড়াই এই হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীর বুকে শান্তি স্থাপন সম্ভব। ‘বেড় নয় অবেড়’ অর্থাৎ অহিংসাই একমাত্র মার্গ, যার দ্বারা রাগ, দ্বেষ, তৃষ্ণা, ঘৃণা, আকাঙ্ক্ষা, লোভ, মোহ প্রভৃতি বিরূপ স্বভাবগুলিকে পরিত্যাগ করে বুদ্ধ প্রবর্তিত আদর্শে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন- লোভ, তৃষ্ণা, মোহ মনুষ্যের বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি প্রধান অন্তরায়। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা এবং উপেক্ষা এই চার আর্যসত্যকেই বুদ্ধ সনাতন ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাইতো ধম্মপদে  উল্লেখিত হয়েছে- ” এসো ধম্মো সননন্তনো”।