করোনা লকডাউন নিয়ে খবরের ঘন্টাকে কি বললেন পদ্মশ্রী করিমুল হক,জানতে পড়ুন

করিমূল হক ঃঃ করোনা লকডাউন নিয়ে কিছু কথা খবরের ঘন্টার মাধ্যমে জানাচ্ছি। আমি লেখাপড়া বিশেষ কিছু জানি না। গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষ। তবু কিছু কথা বলছি।

জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও করোনা পজিটিভ রোগী ধরা পড়েনি। তবু কেন এই জেলা রেড জোনে পড়লো বুঝতে পারছি না। অনেককে দেখছি লকডাউন মেনে চলছেন। অনেকে আবার মানছেন না। হয়তো বেশি সংখ্যক লোক লকডাউন মেনে চলছেন বলেই আমাদের এখানে করোনা প্রবেশ করতে পারেনি। এখন বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসা শুরু করবেন। ঘরের লোক ঘরে ফিরবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মতে, যারা বাইরে থেকে আসছেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোয়ারান্টাইনে রাখা হোক কিছুদিন।
এবারে বলি আমার ওপর সিনেমা তৈরির কাজ নিয়ে। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন প্রখ্যাত অভিনেতা ইরফান খান। এই অভিনেতা বিদ বিদেশ থেকে ফিরেও আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। এরমধ্যেই শুরু হওয়ার কথা ছিলো আমার ওপর সিনেমা তৈরির কাজ। আমি মুম্বাই যাবো স্থির করেছিলাম। আর তার মধ্যেই শুরু হয়ে গেলো লকডাউন। আর এই লকডাউনের মধ্যেই এলো দুঃসংবাদ। মুম্বাই থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক বিনয় মুদগেল ফোন করে ইরফান খানের মৃত্যু সংবাদ দিলেন। আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। পরিচালক বিনয় মুদগেল আমাকে ফোনে সান্ত্বনা দিলেন। বললেন, কি আর করা যাবে। ওনার সময় হয়ে গিয়েছে তাই চলে গিয়েছেন। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি ইরফান খানের চলে যাওয়াতে। তবে চলচ্চিত্র পরিচালক বিনয় মুদগেল আমাকে আরও জানালেন, আপনার জীবনের ওপর সিনেমা তৈরি হবে। আর একজন নায়ক স্থির হয়েছে। লকডাউন উঠুক। তারপর হয় আপনাকে মুম্বাই আসতে হবে অথবা আমরাও আপনার ডুয়ার্সের গ্রামে যেতে পারি।
এখন লকডাউনের সময় আমি আমার ক্রান্তি অঞ্চলের গ্রাম থেকে এদিক ওদিক ছুটছি। কারও ওষুধ প্রয়োজন, ওষুধের ব্যবস্থা হচ্ছে। আবার কোনও অভুক্ত মানুষের ত্রান প্রয়োজন, লোকের থেকে ত্রান সংগ্রহ করছি। আমার গ্রামে প্রেসার, সুগার মাপার ব্যবস্থা হয়েছে। আমি অতি সাধারণ মানুষ। আমি বুঝি না রাজনীতি, আমি বুঝি না ধর্ম। আমি ধর্ম বলতে বুঝি মানব ধর্ম। মানুষের সেবা করাই হল বড় ধর্ম। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আর মানুষের ভালোবাসাতেই কাজ করতে পারছি।
সোমবার জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের গ্রামে ফিরছিলাম। রাস্তায় দেখলাম, মদের দোকানের সামনে বিরাট লাইন, ভিড়। একজনকে বললাম, এত ভিড় কেন? জবাব পেলাম, মদ কেনার ভিড়। মনে কষ্ট হলো। এখনও আমাদের পরিবর্তন হয়নি। কত মানুষ খেতে পারছে না, আর কিছু মানুষ মদ মানে জল খাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করছে। এরা বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে খেতে দিতে পারে না অথচ মদ কিনতে পারে। বাবা-মা কত কষ্ট করে সন্তানকে বড় করেছে শুধু মদ কেনার জন্য? করোনা আমাদের কি শিক্ষা দিচ্ছে, আমরা কতটা ভালো হতে পারলাম তার কি মূল্যায়ন আমরা করছি?
রবিবার আমার শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা। আমি গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করছি। সেই হাসপাতালের জন্য অনেকেই সাহায্য করছেন। সমাজে খারাপ যেমন আছে, ভালোও আছে। শিলিগুড়ি অরবিন্দ পল্লীতে বাপন ঘোষ আমার হাসপাতালের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এরজন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার হাসপাতালের জন্য যে যা দেবেন আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে সাদরে তা গ্রহণ করবো। সবাই ভালো থাকুন, ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন।
( লেখক করিমূল হক দেশের গর্ব। তাঁর অসাধারণ কাজের জন্য তাঁকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মান জানিয়েছে। বাইক এম্বুলেন্স দাদা হিসাবেও তিনি বেশ জনপ্রিয় বিভিন্ন এলাকায়। পড়ালেখার ডিগ্রী না থাকলেও তাঁর সমাজসেবা, মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ এবং গরিবের প্রতি ভালোবাসা গোটা দেশে তাঁকে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসাবে চিহ্নিত করেছে।)