চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের করোনা দাওয়াই, লাঠি নয়, ত্রাণ

বাপি ঘোষ ঃ লাঠি বা চোখ রাঙানি নয়, চুরি ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের করোনা দাওয়াই হল ত্রান বা খাদ্য সামগ্রী পৌছানো। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ভক্তিনগর থানা অন্তত তেমন দাওয়াই দিয়ে দারুন সুফলও পাচ্ছে।

করোনার এই দুর্যোগের সময় বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রমী কাজে নেমেছে পুলিশ। বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়াররা এখন সমাজসেবীর ভূমিকায়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের বিভিন্ন থানা এই কাজে নেমেছে। অন্তত ভক্তিনগর থানা সূত্রে খবর, তাদের কাছে আপাতত চুরি ছিনতাই ঠেকানোর বড় দাওয়াই হলো খাদ্য পৌছানো।
করোনা পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন এলাকায় বহু দুষ্কৃতী আপাতত জামিনে মুক্তি পেয়েছে আদালত থেকে। তাছাড়া পুলিশের খাতায় চুরি, ছিনতাই সহ অন্যান্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের অনেক তালিকা রয়েছে। ভক্তিনগর থানার পুলিশ কর্মীরা সেই সব অভিযুক্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন দিনরাতে। তারা সেসব অভিযুক্ত-অপরাধীদের ভালো করে বুঝিয়ে বলছেন, পেটের দায়ে যেন আর চুরি ছিনতাই একদম না হয়, চিন্তা করবি না, ঘর বন্দি থাকবি। দুবেলা বাড়িতে খাবার পৌঁছে যাবে। বাইরে বের হলে করোনা ধরবে!!পুলিশের কাছে রোজ বাড়িতে বসে দুবেলা খাবার পেয়ে সেই সব দুষ্কৃতীরাও সোনা ছেলের মতো মাথা নেড়ে সন্মতি জানাচ্ছে, না, না কোনও চুরি ছিনতাই হবে না। আর বাইরে বেরিয়ে অদৃশ্য করোনার ছোঁবল কে খাবে? পুলিশের লাঠির বাড়ির চেয়েও বড় দাওয়াই করোনা ভাইরাসের বিষ।
ক্ষুধার কি জ্বালা! কেও কেও আশঙ্কা করছেন, লকডাউনের জেরে পেটে টান পড়লে চুরি ছিনতাই বেড়ে যাবে। দোকানের শাটার ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। আর সেই আশঙ্কা যাতে বাস্তবায়িত না হয় তারজন্য দিনরাত একদল পুলিশ কর্মী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভক্তিনগর থানা সূত্রে খবর, লকডাউনের পর থেকে থানায় আর আগের মতো পুলিশের কাছে মারামারি বা অন্য কোনও অভিযোগ প্রায় নেই। থানাতে আইনশৃঙ্খলাজনিত অন্য অনেক কাজও কমেছে। রাস্তায় লোকজন কম থাকায় ছিনতাই, পকেটমারি, লিফটিংও কমেছে। পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণ করার কাজের চাপও অনেকটা কমেছে। ফলে পুলিশের ভূমিকা এখন অন্যরকম। মানবিক ও সমাজসেবার বিরাট ভূমিকা নিয়ে এই দুর্যোগে কাজ করছেন পুলিশ কর্মীরা। সেসব পুলিশ কর্মীও মানুষ, তাদেরও পরিবার রয়েছে। কিন্তু পরিবার ভুলে ছুটি না নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করছেন তা সত্যি স্যালুট জানানোর মতো। ভক্তিনগর থানার চারটে ভ্যানের চারটেই এখন এদিক ওদিক ত্রান পৌঁছে দিচ্ছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে এখন প্রতিদিন দুবেলা রান্না হচ্ছে। সেখান থেকে দুবেলা খাবার প্যাকেট পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন অসহায় গরিব মানুষের বাড়িতে।
কোথাও কোনও গোলমাল বা অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ভ্যান পৌঁছাতোা। আর পুলিশ দেখে সবাই পালাতো। কিন্ত করোনার এই দুর্যোগে পুলিশ ভ্যান পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। শুধু অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত নয়, কোনও বাড়িতে হয়তো বয়স্ক বুড়োবুড়ি আছেন, লকডাউনের জেরে বাজার যেতে পারছেন না। বা ওষুধ দরকার, ওষুধ কিনতে পারছেন না, পুলিশ খবর নিয়ে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে। ওষুধ কিনে দিচ্ছে বা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রান্তিক বস্তিগুলোতেও পুলিশ পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাস্তার ভবঘুরে কেও যেন অভুক্ত না থাকে। সেদিকেও নজর রাখছেন পুলিশ কর্মীরা। রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ত্রান হিসাবে চাল, ডাল, আটা, লবন পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। কোথাও বাইরে থেকে আসা কেও আটকে আছেন কিনা, কোনও ছাত্রছাত্রী কোথাও আটকে পড়েছেন কিনা, তারা খাবার খাচ্ছেন কিনা, কারও জ্বর হয়েছে কিনা সেসবও খোঁজ নিয়ে নিচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। আবার হাসপাতালে কারও রক্তের দরকার হলে রক্ত দানও করছেন পুলিশ কর্মীরা। সবমিলিয়ে এই দুর্যোগে পুলিশের এই মানবিক মুখ,সমাজসেবা, মূল্যবোধ এক নতুন দিশা তৈরি করছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত।