করোনা ও লকডাউন নিয়ে কি বললেন বিদ্যাসাগরের প্রদৌহিত্র

বাপি ঘোষঃ করোনা দুর্যোগের জেরে লকডাউন শুরু হয়েছে। এইসময় খবরের ঘন্টার কাছে কি বললেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রদৌহিত্র ডাঃ ভাস্কর ভট্টাচার্য , পড়ুন নিচের বক্তব্যে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরের ভাই ছিলেন ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঈশানচন্দ্রের মেজ মেয়ে ছিলেন চারুশীলাদেবী। আবার চারুশীলাদেবী হলেন ডাক্তার ভাস্কর ভট্টাচার্যের বাবা দ্বিজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ঠাকুরমা। সেই হিসাবে ভাস্করবাবু হলেন বিদ্যাসাগরের প্রদৌহিত্র। ভাস্করবাবু এখন শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক। তিনি এই করোনা দুর্যোগ এবং লকডাউন নিয়ে কি বললেন, চলুন পড়া যাক —–

” নিজের প্রোটেকটিভ ব্যবস্থা নিয়েই আমি এই সময় নকশালবাড়ি হাসপাতালে রোগী দেখছি। এই দুর্যোগের সময় বলবো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একেবারেই সংস্কারমুক্ত একজন মানুষ। সব সংস্কারের উর্ধ্বে উঠে তিনি অনেক কাজ করেছিলেন। অনেক কাজেই তিনি সফল হয়েছিলেন। আজ এই যে করোনা নিয়ে কখনও কখনও কুসংস্কার কাজ করে, সেই সব সংস্কার কাটিয়ে উঠতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানকে নিয়ে চলতে হবে। যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং লকডাউন মেনে ঘর বন্দি থাকলে আমরা কিন্তু একটা নতুন সুস্থ, সবল ও স্বচ্ছ সুন্দর ভোর পাবো।
ছোট ছেলেমেয়েদের বলবো, এখনতো প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। গল্প পড়ার অনেক সুযোগ আছে তাতে। প্রতিলিপি নামে একটি এপ্লিকেশন আছে। সেখানে গিয়ে কিন্তু অনেক গল্প পড়া যায়। প্রায় দেড় লক্ষ গল্প আছে তাতে। সেটা ছাড়াও অনেকের বাড়িতে অনেক গল্পের বই আছে। বই কিন্তু কারোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। বই পড়লে চিন্তার খোরাক বাড়ে। আর চিন্তার খোরাক বাড়লে সমাজজীবন আরও পরিচ্ছন্ন হবে। তাই বলবো ছেলেমেয়েরা এখন প্রচুর পড়ুক, প্রচুর ভাবুক। তারা যত চিন্তা করবে সমাজের তত ভালো হবে। এছাড়া তাঁরা এইসময় প্রচুর ধাঁধা বা বুদ্ধির খেলাও বের করতে পারে।
এখন বিদ্যাসাগরের জন্মের দুশো বছর চলছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় ওইটুকু সময়ের মধ্যে যেসব শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন তা আমাদের হজম করতে আরও ৫০০ বছর সময় লাগবে। বিদ্যাসাগর আজও আমাদের সমাজজীবনে প্রাসঙ্গিক। তিনি এতবড় সংস্কারমুক্ত মনের মানুষ ছিলেন যে ভাবা যায় না। ওই সময় সমাজের সংস্কার চিন্তার কাজে তিনি এত ব্রতী হয়েছিলেন যে তাঁর পরিবারে পর্যন্ত তাঁর বিরোধিতা হয়েছিল। তারপরও তিনি সমাজ সংস্কারের কাজ থেকে পিছু হটেননি। আজকের নারীরতো আইকন হওয়া উচিত বিদ্যাসাগর।
বিদ্যাসাগর ছিলেন দয়ার সাগরও। গরিব মানুষের দুঃখ দেখলে তিনি কেঁদে উঠতেন। গরিব মানুষের দুঃখ দেখলে কিভাবে সেই দুঃখ দূর করা যায় তারজন্য তিনি সেবায় ব্রতী হতেন। আজ করোনার এই লকডাউনের সময়ও গরিবের কাছে ত্রান পৌছানোর যে প্রয়াস চলছে সেখানেও দয়ারসাগরের ভাবনা আমাদের বাড়তি উদ্দীপনা জাগাতেই পারে। আজ এই সময় যেসব মানুষ অভুক্ত আর যাদের আছে তারা একটু কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধভাবে আরও বেশি বেশি করে অভুক্তদের সেবায় কাজে নামলে সুন্দর এক সমাজ তৈরি হতে পারে। যাদের আছে তারা আজ একটু বেশি করে কষ্ট ত্যাগ স্বীকার করলে সামনেই আমরা খানিকটা হলেও বৈষম্যমুক্ত এক নতুন সমাজ পেতে পারি। ”