দোল উৎসব থেকে নারায়নের অনন্ত শয্যা পূজা

অভিজিৎ হাজরা: হাওড়ার সোমেশ্বর গ্ৰামের সার্বজনীন শ্রী শ্রী ঁ নারায়ণের অনন্ত শয্যা পূজা শুরু হয়েছে দোল থেকে। তা চলবে সপ্তাহ ব্যাপী।
এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে এলাকার যুবকযুবতীদের নিয়ে বিপ্লবী ঁ ভোলানাথ মাল শিক্ষার উন্নতি ও বিপ্লবী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সোমেশ্বর, সন্তোষনগর,কুমারিয়া প্রভৃতি গ্ৰামের কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতীদের নিয়ে পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত হন।সেইসঙ্গে সোমেশ্বর ঁব্রহ্মাতলা-য় ছয়সাতটি গ্ৰামের যুবকরা আসত যাত্রা শিক্ষার জন্য। ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে এই গ্ৰামের প্রয়াত হরিশচন্দ্র বর পুরিতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। জগন্নাথ ঘাটে তিনি শ্রী শ্রী ঁনারায়ণের অনন্তশয্যা-মুতি দেখে মোহিত হন। তৎক্ষণাৎ তিনি মনে মনে সংকল্প করেন এই ধরণের মুতি তিনি নিজ গ্ৰামে তৈরী করে পূজা করবেন। তাঁর এই সংকল্পের কথা তিনি গ্ৰামে ফিরে এসে ্ঁব্রহ্মাতলা-য় ঁ গোবিন্দ পাত্র,ঁমণীন্দ্র পাত্র,ঁপতাই কোলে,ঁবৈদ্যনাথ কোলে,ঁরতিকান্ত পন্ডিত,ঁপানু মাঝি,ঁঅষ্টম মাঝি,ঁযতীন কোলে,ঁপরেশ মাঝি,ঁসুধাসিন্ধু কোলে,ঁনিরাপদ কোলে,ঁগৌরমোহন ময়ড়া,ঁমুরারী দে,ঁভবতারন হাজরা,ঁতারাপদ মন্ডল,ঁনারায়ন পারাল,ঁবাসুদেব পাত্র,ঁযুগল মাঝি এবং অন্যান্যদের উপস্থিতিতে ঁহরিশচন্দ্র বর পুরিতে দেখে আসা মুর্তির পূজা এই গ্ৰামে করতে চান বলে জানান। সকলে চিন্তা করে শ্রী শ্রী ঁনারায়ণের অনন্তশয্যা-র সেই মূর্তির ছবি দেখতে চান।
প্রয়াত হরিশচন্দ্র বর পরে সেই ছবি এনে দিলে,১৩৫৫ বঙ্গাব্দে থলিয়া গ্ৰামের ঁজয়ন্ত দাশ ছবির মত মূর্তি মাটি দিয়ে তৈরী করেন।১৩৫৫ বঙ্গাব্দে ঁনিরাপদ কোলে-র বাগানে দোল পূর্ণিমায় এই পূজা শুরু হয়।তখন ৭দিনের এই পূজার খরচ হয়েছিল ৪,০০০ টাকা।লাইট,মাইক,প্যান্ডেল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ।
দ্বিতীয় বর্ষে সোমেশ্বর বাঁধ সংলগ্ন উত্তর দিকে অর্থাৎ বর্তমানে যেখানে গোপাল কোলে-র(বাটন ডেকরেটাস) বাড়ি সেই স্থানে পুজা হয়। ১৩৬২ বঙ্গাব্দ পযন্ত ৮ বছর এই পুজা একটানা হয়।
১৩৬৩ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৮০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত আর্থিক অবস্থা ও অন্যান্য সহযোগিতার অভাবের জন্য এই পুজা করা সম্ভবপর হয়নি।
ইতিমধ্যে দামোদর দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল,কালের চাকা গতি পরিবর্তন করেছে। ঁভোলানাথ মাল প্রতিষ্ঠিত সোমেশ্বর সাধারন পাঠাগার ক্রমশ নাম পরিবর্তন করতে করতে শেষে আধুনিক সংঘ নাম নেয়।
১৩৮১ বঙ্গাব্দে আধুনিক সংঘ-র সভ্য-সভ্যাবৃন্দ এই পুনরায় চালু করার মনস্থির করেন।ঁগোবিন্দ্র পাত্র,ঁবরিষন দাসের সঙ্গে আলোচনা করে।
১৩৮১বঙ্গাব্দ থেকে সোমেশ্বর ও অন্যান্য গ্ৰামের গ্ৰামবাসীদের সহোযোগিতায় সোমেশ্বর আধুনিক সংঘ একটানা ৪৬ বৎসর শ্রী শ্রী ঁনারায়ণের অনন্তশয্যা- পুজা করে চলেছেন।
মূল মন্ডপে দেখা যায় সাতটি শেষ নাগের ফনার নীচে ঁনারায়ন পা মিলে বসে আছেন,যার হাতে সুদর্শন চক্র,এক হাতে পদ্মফুল,এক হাতে শঙ্খ,অন্য হাতে গদা, ঁনারায়ণের নাভীকুন্ডল থেকে ঁব্রহ্মার সৃষ্টি। ঁনারায়ণের পদতলে ঁলক্ষী এক হাতে ঁনারায়ণের পদসেবা করছেন,অন্য হাতে পদ্মফুল। ঁলক্ষীর মাথা ছাড়া দিয়েছেন একটি শেষনাগের ফনা‌। মূল মন্ডপ ঘিরে রয়েছে ঁনারায়ণের দশ অবতার। যথাক্রমে মৎস,কুর্ম,বরাহ, নৃসিংহ,বামন,পরুশুরাম, রাধাকৃষ্ণ,রাম-বলরাম,বুদ্ধ, কল্কি। রয়েছে প্যাঁচা,গড়ুর। মূল মন্ডপের সামনে জয়া-বিজয়া।সমস্ত মূর্তি গুলি মাটি দিয়ে নির্মিত।
এই পূজা হাওড়া জেলার আর অন্য কোথাও হয় না।
এই বৎসর ৪৬ তম বর্ষের অনুষ্ঠান বালিতে থাকছে আতস বাজীর বাহার, পুতুল নাচ,প্রতিভা অন্বেষণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান,নরনারায়ন সেবা।এই নরনারায়ন সেবায় সোমেশ্বর গ্ৰামসহ অন্যান্য ৮–১০টি গ্ৰামের প্রায় ১০,০০০(দশহাজার) মানুষ অংশগ্রহণ করে। শেষ দিনে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা সহ প্রতিমা বিভিন্ন গ্ৰাম প্রদীক্ষন করে আধুনিক সংঘ-র পাশ্ববর্তী দামোদর নদীতে বিসর্জিত হয়।

অভিজিৎ হাজরা। সোমেশ্বর , সন্তোষনগর,আমতা, হাওড়া,৭১১৪০১। আলাপন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৭৮৭২১২৩৯৪৫/৭০০১৭২৮৮০৫।