লেখালেখি, সঙ্গীত আর হাঁটাহাটি করেই বেশ আছেন গৌরিশঙ্কর

নিজস্ব প্রতিবেদন,শিলিগুড়ি ঃ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই তিনি লিখতে বসে যান।আর লেখার সময় আপন মনে শুনতে থাকেন রবীন্দ্র সঙ্গীত,নজরুল গীতি বা ভজন।তার কথায়,গান শোনার ফাঁকে লেখালেখি বাড়তি এক উৎসাহ এনে দেয়। আর শহরে কোনও কাজে বের হলেই হাঁটতে থাকেন। ফলে এই ৭২ বছর বয়সে তিনি একদম ফিট। নো সুগার, নো প্রেসার। শুধু কদিন আগে দুর্ঘটনায় হাতের একটি আঙুল খুইয়েছেন। তবুও তার হাতের কলম থামেনি।
গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য। শিলিগুড়িতো বটেই গোটা উত্তরবঙ্গে ভ্রমণ লেখক হিসাবে তিনি বিখ্যাত। আজ যে গাজলডোবা পর্যটন নিয়ে আমরা মাতামাতি করছি, আশির দশকে তিস্তা চরে জঙ্গল আর বালুকাময় জায়গার সেই গাজলডোবা নিয়ে তিনিই প্রথম লেখালেখি শুরু করেন। আজ আমরা যে লাটাগুড়িকে চিনি সেই লাটাগুড়িকে নিয়ে তিনিই প্রথম আশির দশকের শুরুতে কলকাতার একটি ভ্রমন পত্রিকায় মেলে ধরেন।তিনি লাটাগুড়ির নেওড়া নদী পেরিয়ে কান্তিদীঘি কুমোরপাড়ায় পরান গোপের বাড়ি যান। তিনি তার বর্ননায় উল্লেখ করেছিলেন সুন্দর পরিবেশের লাটাগুড়িতে কারও একদুদিন থাকার ইচ্ছে হলে পরান গোপের বাড়িতে থাকতে পারেন। ভ্রমণ পত্রিকায় তার লেখা পড়ে ধানবাদের এক শিক্ষিকা সপরিবারে লাটাগুড়ি থাকার জন্য চলে আসেন।এভাবে পাথরঝোরা, মূর্তি নিয়ে লেখালেখি করে উত্তরবঙ্গের পর্যটনকে তিনিই প্রথম কলকাতায় মেলে ধরেন।
১৯৭৯-১৯৮০ থেকে ২০১৭, এপর্যন্ত তার ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় সবগুলোই ভ্রমনের ওপর। বেড়াতে চলুন ডুয়ার্স, উত্তরবঙ্গের পথে পথে, ডুয়ার্সের বনরোমাঞ্চ,চলো বেড়াই ডুয়ার্স তরাই প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য বই। প্রথম বই ভ্রমনং যত্রতত্র, শেষ বই প্রকাশিত হয়েছে গত বই মেলায়, বন মহল।
১৯৭১ সালে তিনি শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলে শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দেন। অবসর গ্রহন করেছেন ২০০৫ সালে। শিক্ষকতার চাকরির পাশাপাশি দিনের পর দিন এদিক ওদিকে তিনি ভ্রমণ করেছেন আর লেখালেখি করেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম এ পাস করেন। আর তার ছেলেবেলায় বাবামার হাত ধরে শিলিগুড়ি চলে আসা চল্লিশের দশকে। বাংলাদেশে দেশের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহর মুক্তাগাছায়। তারা তিন ভাই,তিন বোন। সকলের বড় তিনি। বোনেদের মধ্যে একজন প্রয়াত হয়েছেন।তার বাবা প্রয়াত জগদীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ষাটের দশকের শুরুতে শিলিগুড়ি পৌরসভায় কংগ্রেস বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।১৯৬২ সালে তিনি শিলিগুড়ির বিধায়কও ছিলেন। তার এক খুড়তুতো ভাই অশোক ভট্টাচার্য শিলিগুড়ির বর্তমান মেয়র ও বিধায়ক। পরিবারে রাজনীতির ঘরানা থাকলেও গৌরীশঙ্করবাবু কখনওই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হননি। সহজসরল অনাড়ম্বর ও অহঙ্কারহীনভাবে জীবনের এতটা সময় পার করে দিয়েছেন। অন্য অনেক শিক্ষকের মতো প্রাইভেট টিউশন করেও অর্থের পিছনে ছোটেননি। তার স্ত্রী ঝর্ণা ভট্টাচার্য তাকে সবসময় প্রেরনা দিয়ে চলেছেন।আজ বহু ক্ষেত্রে তিনি ব্রাত্য থাকলেও সেসবের বিষয়ে তার কোনও বক্তব্য নেই। রবীন্দ্র সঙ্গীত,ভজন শোনার সঙ্গে সঙ্গে রোজ দুকলম লেখা আর হাঁটাহাটি এই করেই এই বার্ধক্যেও মনকে তরুন করে রেখেছেন তিনি।