শিল্পী পালিতঃ আজ আমাদের খবরের ঘন্টার আত্মকথা বিভাগে হালিশহরের মেয়ে ক্ষমা রায়ভট্টাচার্য লিখেছেন তার কথা। চলুন তার কথা পড়ে আমরা সমৃদ্ধ হই—
আমি ক্ষমা রায় ভট্টাচার্য্য । জন্মসূত্রে ভট্টাচার্য্য । বিবাহসূত্রে রায় । হালিশহরে গঙ্গা পাড়ে এক মফস্বলে আমি জন্মেছি । সাধক রামপ্রসাদ সেনের সাধনক্ষেত্র হালিশহর । আবার স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতীর মূল আশ্রমটিও ওখানেই । গাছপালা গঙ্গার সান্নিধ্যে আমার বড় হয়ে ওঠা । ওখানেই স্কুল জীবন কেটেছে । ক্লাস নাইনের আগে পর্যন্ত বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেই নাকেমুখে গুঁজেই ছুটতাম খেলার মাঠে । খুব সুন্দর কেটেছিল সেই সময়টা । চিরসবুজ মনিমালা আসরের সাথে যুক্ত ছিলাম । ভলি কাবাডির সাথে সাথে যোগব্যায়াম , লাঠিখেলা ছিল ভীষণ প্রিয় । বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে প্রভাতফেরী বেরোতো আসর থেকে । ড্রাম বাজিয়ে প্যারেড করতে করতে অনেক রাস্তা ঘুরে আসতাম অনেক আনন্দ নিয়ে । বসন্ত উৎসবে আবৃত্তি করতাম । বাৎসরিক ফাংশন হতো । তাতেও নাটকে বরাবর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটি অভিনয়ের জন্য পেতাম । প্রতিবারই পুরস্কার পেতাম । মনে আছে ডাকঘর নাটকে অমলের ভূমিকায় অভিনয় করে সাতখানা পুরস্কার পেয়েছিলাম । (এবং সেটাই ছিল আমার প্রথম অভিনয় ।) যার মধ্যে একটা বই এখনও আমার কাছে আছে । বড় সুখের ছিল সেই দিন গুলো ।
প্রথম কবিতা লিখি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় । হয়তো বাবার কাছে কবিতা শুনে শুনে মনে যে ছন্দের আনাগোনা চলতো তারই বহিঃপ্রকাশ ছিল ওই কবিতাটা । তারপর পঞ্চম শ্রেনী থেকে প্রতি বছর স্কুল ম্যাগাজিনে আমার একটা কবিতা থাকতো । সেসব এখন আর নেই ।
তারপর ভালোভাবেই মাধ্যমিক পাশ করলাম । উচ্চ মাধ্যমিকেও রেজাল্ট ভালো ছিল ।ইংরেজিতে জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম । কিন্তু কেন জানি না কি মনে করে ফিলোজফি অনার্স নিয়ে নৈহাটি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে ভর্তি হলাম । এবং তিন বছর পর পাশ করার সাথেই বিয়ে হয়ে গেল । তখন আবার নতুন ভালোলাগা এলো । পড়াশোনা শিকেয় তুলে মন দিয়ে সংসার করতে লাগলাম । চারবছর পর সন্তান এলো ।
তখন ছেলেটিই হলো একমাত্র ধ্যানজ্ঞান । ওর শিক্ষার দায়িত্ব পুরোটাই নিজের হাতে রেখে প্রয়োজনে স্কুলের চাকরিটি ছেড়ে দিলাম । বলা হয়নি একটা প্রাইভেট স্কুলে কয়েক বছর পড়িয়েছি শিশুদের । ছেলেকে রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করবো তাই আরো বেশি সময় ওকে দিতে হবে এই ভেবে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম । এবং সফল হলাম । ছেলেও এ্যডমিশন টেস্টে ভালো রেজাল্ট করে মিশনে ভর্তি হলো । ছেলে চলে গেল হোস্টেলে । আমি সময় কাটাতে টিউশন শুরু করলাম । শনি/রবিবার ছেলের সাথে দেখা করতে যেতাম । বাকি দিনগুলো দুই বেলা তিনব্যাচ টিউশন করতাম । মাধ্যমিক পর্যন্ত কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী পড়াতাম । আর ফাঁকে ফাঁকে চলতো কবিতা,গল্প লেখা । ছবছর পর একঘেয়েমির শিকার হয়ে টিউশন সব ছেড়ে দিলাম । তখন ছেলেও মাধ্যমিক পাশ করে হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে । ওর উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আবার ওকে নিয়েই কাটলো আমার সমস্ত সময় । তারপর যখন উচ্চমাধ্যমিকে এবং ট্রিপল-ই তে ভালো রেজাল্ট করে ছেলে বাইরে পড়তে চলে গেল তখনই আবার কবিতারা নতুন করে ধরা দিলো আমার কাছে । স্যোসাল মিডিয়ায় বিভিন্নজনের উৎসাহে পুরোদমে লেখার মধ্যে নিজেকে সঁপে দিলাম । প্রতি বছরই অনেক পত্র পত্রিকায় কবিতা ছাপা হতে লাগলো । এই বছর 20 অক্টোবর 2019 আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রেণুকা’ প্রকাশিত হলো আনন্দ প্রকাশন থেকে ।
এভাবেই চলছে আমার জীবন সদা আনন্দে । আশা করি অনেকদিন পর্যন্ত এভাবেই হেসেখেলে সবাইকে নিয়ে আনন্দে কাটিয়ে দেবো ।