নিজস্ব সংবাদদাতা,মুর্শিদাবাদ, ১৪ সেপ্টেম্বরঃ শারদোৎসবের অনিশ্চয়তায় হতাশার কালো মেঘ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-এর ঢাকি মহল্লায়। শারদোৎসব যতই এগিয়ে আসে, ঢাকি মহল্লায় ততটাই ব্যস্ততার ছবি চোখে পড়ে। পুজোর দুমাস আগে থেকেই সেখানে শোনা যায় ঢাকের ঢ্যাংকুড়া ঢ্যাং আওয়াজ। চলে প্রস্তুতি পর্ব। দুর্গোৎসব মানেই তাদের কাছে ভালো রোজগারের আশা প্রত্যাশা। এই পুজোতেই তারা সবচেয়ে বেশি রোজগার করেন। কিন্তু এবছর ঢাকি মহল্লায় নেই সেই ব্যস্ততা। করোনা আবহে একটা অনিশ্চিত ভাবনা গ্রাস করেছে রঘুনাথগঞ্জ-এর ঢাকি মহল্লার মানুষদের। তাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, এবার শারদোৎসব হবে তো ?
দীর্ঘ কয়েক মাসের লক ডাউনে বন্ধ পুজো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। ফলে তাদের পেশাগত কর্মে ডাক পড়েনি। আর তাতেই বন্ধ রুজি রোজগার। পরিণামে সংসারে নেমে এসেছে অভাব অনটন।
এতদিনে ঢাকে নতুন ছাউনি বা ঢাকের দড়িতে টান দেওয়ার কথা। এবার কিন্তু সেটাও হয়নি। রঘুনাথগঞ্জের কানুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনারপুর গ্রামে ৩০ টি ঢাকি সম্প্রদায়ের পরিবারের বাস। সকলেরই একমাত্র পেশা পুজো বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাদ্য যন্ত্র বাজানো। সেখান থেকে যেটুকু রোজগার হয়, তাই দিয়েই কোনওরকমে চলে তাদের সংসার। এলাকার ঢাকিরা জানান, পুজোর মাস দু’য়েক আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতির পালা। শুরুটা হয় বিশ্ব কর্মা পূজা দিয়ে। তারপর একে একে দুর্গা পুজো, লক্ষ্মী পুজো, কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোতে ঢাক বাজান তারা। তাই এই সময়টাতেই তাদের সবচেয়ে বেশি রোজগার হয় বলে সারাবছর ধরে তারা প্রতীক্ষায় থাকেন। কিন্তু এবার সে প্রতীক্ষার ফলাফল কি হবে তা নিয়ে তারা অনিশ্চিয়তার মুখে।
প্রতিবছর শিলিগুড়ি, কলকাতা, মুম্বাই, আসামের পুজোতে ঢাক বাজাতে যান তারা। পুজোর মাস দুয়েক আগেই বায়না হয়ে যায়। এবছর এখনও তাদের কাছে কোনও খবর এসে পৌঁছায়নি। শুধু পুজো বাজিয়েই নয়, পুজো মন্ডপে ঢাক বাজিয়ে মানুষকে খুশি করিয়ে সাত- থেকে আট হাজার টাকা বকশিস বা পুরস্কার হিসাবে তারা বাড়তি আয় করেন। তাই উৎসবের দিন গুলিতেও পরিবার পরিজনকে ছেড়ে দূরে থাকার দুঃখটাকে তারা ভুলে থাকেন আর ঢাক বাজিয়ে যান। আর সেই ভালো বাজনা উপহার দেওয়ার তাগিদে গভীর রাত পর্যন্ত চলে অনুশীলন।
গত কয়েক মাসের লক ডাউনে তাদের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছেন রঘুনাথগঞ্জ-এর ঢাকি মহল্লার মানুষেরা। ভরসা রেশন থেকে পাওয়া চাল ও আটা। কিন্তু এটুকুতে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই তারা সরকারি সহযোগিতার মুখাপেক্ষী।