নিজস্ব সংবাদদাতাঃমনের জেদের কাছে যক্ষার মতো মারণ রোগ দমাতে পারেনি হাদি উস জাহানকে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও মনের জোরে মাধ্যমিকে নজর কাড়া সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিবারের সকলে। বুধবার সকাল থেকেই হাতে স্মার্টফোন নিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় বসেছিলো হাদি। ঘড়ির কাঁটায় দশটা বাজতেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। মুখ ভরা হাসি নিয়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, এবার তাহলে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে।
হাদি উস জাহান মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের তালগাছি গ্রামের বাসিন্দা। হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নম্বর ব্লকের দৌলতপুর জিপির বেজপুরা কালিকাপুর হাই স্কুলের দশম শ্রেণির পরিক্ষার্থী। কিন্তু সে বেসরকারি কড়িয়ালি টেলেন্ট সার্চ মিশনে পড়াশোনা করতো। মাধ্যমিকে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬১৭। বাংলা বিষয়ে পেয়েছে ৯১, ইংরেজিতে ৯২, অঙ্কে ৯৮,ভৌত বিজ্ঞানে ৮৩,জীবন বিজ্ঞানে ৮০, ইতিহাসে ৮৭ ও ভূগোলে ৮৬।
হাদি জানায়, ৮৮ শতাংশ নম্বর পেলেও তার আশানুরূপ ফলাফল হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তার বাবা মা তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করাতে পারবে কি ? এই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে।
বাবা মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন জানান, তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে এবং স্বামী স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের অভাবের পরিবার। দিন মজুর করে কোনোরকমভাবে সংসার চলে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে প্রতিদিন দিন মজুরি করতে হয়। বড়ো মেয়ে নাসরিন আক্তার জাহান ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে মালদা জেলায় প্রথম ও পশ্চিমবঙ্গে ১৮ তম স্থান অধিকার করেছিলো। সে এখন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছোটো মেয়ে এবার দশম শ্রেণিতে পাঠরত।তিনি আরো জানান, ছেলে খুব পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতো। কিন্তু মিশনে ভর্তি হওয়ার দুই মাস যেতে না যেতেই যক্ষা,ডায়াবেটিস ও কিডনিতে পাথর সহ নানা অসুখে আক্রান্ত হয়ে পরে। বাড়িতে দিদির কাছে পড়াশোনা করে আজ যথেষ্ট ভালো রেজাল্ট করেছে। এতে সকলেই খুশি। ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবেই বলে আশাবাদী। বর্তমানে বিহারের কাটিহারে চিকিৎসা চলছে বলে জানান।
বেজপুরা কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ রাহনুল হক জানান, এবার স্কুল থেকে ৮৫ জন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকে বসেছিল। সংবাদ প্রতিনিধিদের মারফত তার ভালো রেজাল্টের কথা জানতে পেরে খুব খুশি।অন লাইনে রেজাল্ট শুধু বেরিয়েছে। মার্কশিট আসতে এখনও কয়েকদিন দেরি রয়েছে।