নিজস্ব সংবাদদাতা, হরিশ্চন্দ্রপুর,১৮ জুলাই :বাবা পেশায় চাষি। প্রায় সাত বছর ধরে হৃদয় রোগে আক্রান্ত। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে রয়েছেন। মা গৃহবধু। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। বাড়ির কাজ সেরে পড়াশুনা করে উচ্চমাধ্যমিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির উত্তররামপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা খাতুন। উচ্চমাধ্যমিকে ৪৫০ নম্বর পাওয়া পিপলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চায়। কিন্তু অভাবের সংসারে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার। করোনার জেরে পরিবারের রোজগার বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে স্মার্ট ফোন কিনে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া একপ্রকার দুঃসাধ্য পরিবারের কাছে।
বাড়িতে স্মার্ট ফোন নেই। গ্রামের দাদাদের কাছেই উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট জেনেছেন আয়েশা। অভাবের সংসারে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৫০ নম্বর পেয়েছে। সে আর্টস নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। বাংলা বিষয় নিয়ে অনার্স পড়তে চায়। তাঁর স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়া। উচ্চ মাধ্যমিকের পর লকডাউনের জেরে বাবার রোজগার প্রায় নেই বললেই চলে। মেধাবী ওই ছাত্রী বলেন, বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চাই। কিন্তু সংসারের যা অবস্থা তাতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি।
কাচা রাস্তা পেরিয়ে টালির ছোট্ট বাড়ি। পড়াশুনার প্রতি ছোট থেকেই ঝোঁক মেয়ের। স্কুলে বরাবরই ভালো করে এসেছে আয়েশা। উচ্চমাধ্যমিকের ফল ভালো করার পর শুভেচ্ছা বয়ে আসছে নিরন্তর। কিন্তু সামনের লড়াইটা বড্ড কঠিন। প্রতিকূলতার সেই পথ পেরিয়ে তাঁর মতো মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথকে প্রশস্ত করতে ভবিষ্যতের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্নে মশগুল আয়েশা।
আয়েশার বাবা আসদুল হক জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্বামী-স্ত্রী সহ অভাবের সংসার।সে সাত বছর ধরে হৃদয় রোগ সহ নানা অসুখে ভুগছেন। সামান্য পরিমাণ জমি রয়েছে। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে পারেন না। ছেলে মুতাহির আলিকে বাবার চিকিৎসা,বোনের পড়াশোনা ও সংসারের সমস্ত খরচ বহন করতে হয়।পরিবারের দুঃখ কষ্ট দেখে ছেলে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই সংসারের ভার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।
আয়েশার মা মঞ্জুরা বিবি বলেন, লকডাউনের পর থেকে দিন চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। ওর বাবার রোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। একমাত্র ছেলে মুতাহির আলি সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে।মেয়েকে ভালো কলেজে পড়াশোনা করাতে চাই। কিন্তু সামর্থ না থাকায় এলাকার কোনো এক কলেজে ভর্তি করাবো। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বা স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা বা সরকারি সহযোগিতা পেলে মেয়ের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে ।পিপলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়দেব পান্ডে জানান, এবছর স্কুল থেকে ১০১ জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে আয়েশা ৪৫০ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।