সুনিশ্চিত খাবারের সন্ধান পেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন ফিরে আসতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলে

নিজস্ব সংবাদদাতা,আলিপুরদুয়ারঃ সুনিশ্চিত খাবারের সন্ধান পেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন ফিরে আসতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলে।বাইশ বছর পর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে সিনেরিয়াস অথবা ইউরেশিয়ান প্রজাতির শকুনের দেখা মেলায় প্রচন্ড উচ্ছ্বসিত বনকর্তারা।একসময় যখন গোটা পৃথিবীর আকাশ থেকে শকুনরা বিলীন হতে শুরু করেছিল, তখন কোন্ যাদুতে ডুয়ার্স ও তরাইয়ের জঙ্গলে ভিড় বাড়ছে শকুনদের?এই প্রশ্নের উত্তরে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্যবনপাল উজ্জ্বল ঘোষ জানিয়েছেন “গত এক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা জলদাপাড়া ও বক্সার জঙ্গলে স্বাভাবিকভাবে মৃত বন্যপ্রণিদের দেহ, আকাশ থেকে দৃশ্যমান তৃণভূমিতে ফেলে রাখতে শুরু করি। যা শকুনদের নজর এড়ায়নি।

প্রতিদিন জঙ্গলের ভেতরে বহু বন্যপ্রাণির মৃত্যু হয় প্রকৃতির নিয়মে।এতদিন ওই মৃতদেহগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া অথবা মাটির নিচে পু্ঁতে ফেলার রীতি ছিল। সেই নিয়ম বদলেই শকুনদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, একদিকে যেমন ডাইক্লোফেনাকের প্রভাবে শকুনরা নির্মূল হতে বসেছিল, ঠিক তেমনিভাবে সুনিশ্চিত খাবারের অভাবও ঝাড়ুদার পাখিদের বিলুপ্তির পথে যাওয়ার অন্যতম কারন।”

বনদপ্তরের সমীক্ষা বলছে, এখন ভাগারের সংখ্যা অনেক কমেছে।চিরাচরিত অভ্যাস বদলে মানুষ দূষণ ছড়ানোর ভয়ে এখন আর গবাদি পশুদের দেহ উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে রাখে না।ফলে প্রকৃতিতে শকুনদের চরম খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছিল।বনদপ্তরের দাবি বন্যপ্রাণীদের মৃতদেহ দিয়ে সেই সংকট অনেকটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে।চলতি মাস থেকেই উত্তরবঙ্গের চাপড়ামারি, গরুমারা ও মহানন্দা অভয়ারণ্যেও ওই একই ভাবে বন্যপ্রাণিদের মৃতদেহ ফেলে রাখার কাজ শুরু করা হয়েছে।

অন্যদিকে গতবছর ১৭ ডিসেম্বর বক্সাব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া শকুন সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছিল ছয়টি হিমালয়ান গ্রিফণ প্রজাতির শকুন। উন্মুক্ত হওয়া ওই ছয়টি শকুনের মধ্যে দুটির ডানায় ‘প্ল্যাটফরম ট্রান্সমিটেড টার্মিনাল’ ব্যাকপ্যাক লাগানো হয়েছিল।উপগ্রহ সংযেগের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, কখনও তারা উত্তর ভারতে, আবার কখনও সুদূর পূর্ব ভারতে উড়ে গিয়ে দলবল নিয়ে তারা ফিরেছে বক্সা অথবা জলদাপাড়ায়।ওই হিমালয়ান গ্রিফণদের সাথে সঙ্গী হয়েছে হোয়াইট ব্যাক্ড অথবা স্লেন্ডার বিল্ডের মত হারিয়ে যাওয়া শকুন প্রজাতিরা। এতেই উৎসাহিত হয়ে চলতি বছরের শেষে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে আরও আটটি শকুনকে প্রকৃতিতে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। যে আটটি শকুনকে আকাশে ছেড়ে দেওয়া হবে তাদের প্রত্যেকের ডানাতেই ‘প্ল্যাটফরম ট্রান্সমিটেড টার্মিনাল’ ব্যাকপ্যাক লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি বনদপ্তর ।তাতে প্রত্যেকটি শকুনের গতিবিধির উপর নজর রাখা সম্ভব হবে।যা শকুন সংরক্ষণে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

২০০৬ সালে কৃত্রিম উপায়ে শকুন প্রজননের লক্ষ্য নিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়ায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় শকুন প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পথ চলা শুরু করেছিল শকুন প্রজনন কেন্দ্রটি।বর্তমানে হরিয়ানার পিঞ্জর, রাজাভাতখাওয়া ও অসমের রাণীতে দেশের মধ্যে তিনটি শকুন প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট রাজ্য বনদপ্তরের সাথে সহযোগিতায় দেখভাল করে বম্বে হিস্ট্রি সোসাইটি নামের দেশের এক মাত্র শকুন সংরক্ষণ সংস্থা। দেশের ওই তিন শকুন প্রজনন কেন্দ্রর মধ্যে রাজাভাতখাওয়ায় শকুনদের প্রজননের হার সব থেকে বেশি হওয়ায়, ওই প্রজনন কেন্দ্রে গুরুত্ব এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে।
এখানকার প্রজাতি ও সংখ্যার গ্রাফিক্সঃ
স্লেন্ডার বিল্ড ১৭টি
হোয়াইট ব্যাকড ৮৭টি
লংবিল্ড ২৭টি
হিমালয়ান গ্রিফন ৭০টি।