ডিজিটাল যুগেও লন্ঠনের আলোতে পড়াশোনা চালিয়ে সাফল্য দুই যমজ বোনের

নিজস্ব সংবাদদাতা,মালদা,১৯ জুলাই : সলেহা খাতুন ও জান্নাতুন ফিরদৌস, যমজ বোন। তারা একসঙ্গে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে ভালো নম্বর নিয়ে। সলেহা পেয়েছে ৪৬২ এবং জান্নাতুন পেয়েছে ৪৫০ নম্বর। এরা মাধ্যমিকেও প্রথম বিভাগে পাস করেছিল। তাঁদের এই ফলাফলে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি খুশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

সলেহা,জান্নাতুনের বাড়ি মালদার চাঁচল-১ নম্বর ব্লকের মকদমপুর জিপির গৌরিয়া গ্রামে। বাবা সলেমান আলী পেশায় দিনমজুর। মা রোশনারা বিবিও দিনমজুরি করেন। তাঁরা এবছর নয়াটোলা মহানন্দপুর হাই মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। তাঁদের ফলাফলে গ্রামবাসীরা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ খুশি হলেও যমজ বোনের পরিবারে ঠিক উল্টো চিত্র। তারা মোটেও খুশি নয়। দুই মেয়েকে কলেজে কী করে ভরতি করবেন এনিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সলেমান আলীর।

দুই যমজ বোন সলেহা খাতুন ও জান্নাতুন ফিরদৌস জানায়, তাঁদের খুব ইচ্ছে নার্স হওয়ার। কিন্তু নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য অতো টাকা পাবো কোথায়? তাই চাঁচল কলেজে পড়তে চাই। সলেহা ভূগোল বিষয় নিয়ে এবং জান্নাতুন রাষ্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। দুই বোনেরই ইচ্ছে ভবিষ্যতে শিক্ষক বা অধ্যাপক হয়ে সমাজসেবা করার। কিন্তু কলেজে ভরতির টাকা জুটছেনা। এখন কী করবে ভেবে কুল পাচ্ছে না দুই বোনই।সলেহা খাতুন ও জান্নাতুন ফিরদৌস জমজ বোন। তারা একসঙ্গে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে ভালো নম্বর নিয়ে। সলেহা পেয়েছে ৪৬২ এবং জান্নাতুন পেয়েছে ৪৫০ নম্বর। এরা মাধ্যমিকেও প্রথম বিভাগে পাস করেছিল। তাঁদের এই ফলাফলে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি খুশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

সলেমান আলী জানিয়েছেন, মাঠে মাত্র দশ কাঠা চাষের জমি রয়েছে। দু’শতক ভিটে বাড়ি। তার ওপর মাটির দেওয়াল ও উপরে টিনের চালা। মাত্র এক খানা শোওয়ার ঘরেই পরিবারের সকলেই থাকেন। তিন মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। তাই সংসার চালাতে দিন মজুরি করতে হয়।তিনি বলেন, আমার সঙ্গে স্ত্রী রোশনারাও দিনমজুরি করে। তিন মেয়ের মধ্যে বড়ো মেয়ে বিউটি বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। অভাবের সংসার। তাই একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীনই বড়ো মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিই।মা রোশনারা বিবি বলেন, তাঁদের দুই যমজ মেয়ে আরও ভালো ফল করতে পারত। কিন্তু সময় পায়নি পড়ার। আমরা স্বামী-স্ত্রী মাঠে লোকের ধান কাটলে দুই মেয়েও ধান কাটতো আমাদের সঙ্গে। এছাড়াও দুই মেয়ে আমাদের সঙ্গে ধান, পাট নিড়ানিও করত। পয়সার অভাবে মেয়েদের প্রাইভেট টিউশনিও দিতে পারিনি। যেটুকু পড়েছে বাড়িতেই। পয়সার অভাবের কারণে দুই যমজ মেয়েকে ভালো পোশাকও কিনে দিতে পারিনি এই নিয়ে আক্ষেপ হয়। তাই দুই যমজ বোনের উচ্চ শিক্ষার জন্য আর্থিক সাহায্য খুবই দরকার। কোনও সামাজিক সংগঠন,সহৃদয় ব্যক্তি পাশে না দাঁড়ালে দুই যমজ বোনের ভবিষ্যত অন্ধকারের পথে।

নয়াটোলা মহানন্দপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুনজুর আলম বলেন, দুই যমজ বোনকে সবরকম সাহায্য করা হবে। তাঁদের আরও সাফল্য কামনা করেছেন তিনি। বিডিও চাঁচল ১ সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, ওই মেধাবী যমজ বোনকে ব্লক প্রশাসনের তরফে সবরকম সাহায্য করা হবে।