লকডাউনের উদ্ভাবন, অঙ্কন চর্চায় মেতেছেন পিয়ালি

শিল্পী পালিতঃঅসমের গুয়াহাটি থেকে আজ আত্মকথা বিভাগে কলম তাঁর শিল্প কর্ম নিয়ে কলম ধরেছেন পিয়ালি আচার্য। ধন্যবাদ তাঁকে। পড়ুন পিয়ালির কথা—

যথারীতি ফাঁকা সময়ে বসে মোবাইল নিয়ে খুটখাট করছিলাম। এমন সময়ে মেসেঞ্জারে একজনের মেসেজ আসে। মেসেজটি খুলতেই দেখি এক দিদি, বীণাপাণি শিল্পী যার নাম, আমার আঁকা নিয়ে কিছু লিখতে বলেন। প্রথমটায় অবাক লাগে। কারণ আমি আঁকা নিয়ে তেমন কিছুই জানিনা। শিখিনি কোনদিন। কিন্তু খুব আনন্দও হয় যে আমায় এমন একটি সুযোগ দিয়ে উনি লিখতে উৎসাহিত করেন। সত্যিই আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমার জন্য এটি অনেক অনেক বড়ো ব্যাপার।

শিলিগুড়ি নিবাসী, ছোট মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে আমি, পিয়ালী। বাবা শ্রী গৌতম আচার্য্য, মা শ্রীমতী পদ্মা আচার্য্য। বাবা সরকারি চাকুরীরত ও আমার মা নিজ সংসারে চাকুরীরত। একমাত্র হবার কারণে আমাকে অনেক আদর ও যথেষ্ট স্বাধীনভাবে বড়ো করেছেন মা। বাবা চাকরি সুত্রে বরাবরই বাইরে থাকতেন। তাই মা ই ছিলেন বাবা ও মা। আমার মায়ের অনেক ইচ্ছে, শখ যা তিনি অনেক কারণে পূরন করতে পারেননি, চেয়েছিলেন সেসব আমি করি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গান। মায়ের ইচ্ছের কতটা সম্মান রাখতে পেরেছি জানিনা তবে চেষ্টা করেছি রাখার।

আঁকার ঝোঁকটা খুব যে ছিল তা নয়। থাকলে হয়তো বাবা মা ঠিকই আঁকার ক্লাসে শিখতে নিয়ে যেতেন। ছোট থাকতে টুকটাক কিছু এঁকে রঙ ভরে দেওয়ালে ঝোলানোও ছিল আমার পরম আনন্দের কাজ। তবে হ্যাঁ লক্ষ্মী পূজোতে, ভাইফোঁটাতে ঘর ভরে আমি আলপনা আঁকতাম। দীপাবলিতে রঙ্গোলী আঁকতে বেশ ভালো লাগতো। অনেক প্রশংসাও কুড়োতাম আর এখনও কুড়োই। কিন্তু এসবই ছিল বাৎসরিক শখ মাত্র। এমনি খাতায় টুকটাক ডিজাইন, রুমালে ফুল এঁকে সেলাই এসব করতেও খুব ভালো লাগতো। সাথে থাকতো গান।যা প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারেই থাকে। একসময় সব কিছুই পড়সশুনোর চাপে থিতিয়ে গেল। ইংরেজি নিয়ে মাস্টার্স শেষ করলাম। তারপর চাকরির পড়াশুনো। সময় করে উঠতে পারতাম না, বা হয়তো চেষ্টাও করিনি সময় বের করার। আর তারপর হলো বিয়ে। বিয়ে করে চলে এলাম আসাম রাজ্যে। কর্তার চাকরিসূত্রে এখানে আসা। দুটি মানুষের সংসার। দৈনন্দিন কাজ সেরে যা সময় পাই তাতে গান চর্চা, নয়তো কোন গল্পের বইতে মুখ গোজা, আর এসব না হলে মোবাইল নামক যন্ত্রটি তো রয়েইছে। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে বেরোনোটা মোটেই উচিত নয়। একদিন মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ করেই মধুবনী আর্টের একটি ভিডিও চোখে পড়ে। ভিডিওতে যে ছবিটি দেখলাম খুব ইচ্ছে হলো আঁকতে। কিন্তু বাড়িতে না আছে কলম, না সাদা কাগজ। থাকার কথাও জোর দিয়ে বলতে পারা যায়না এই কম্পিউটার, মোবাইলের যুগে। আমরা সবাই কিন্তু বড়দের মুখে শুনেছি যে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেই মতো জেরক্সের একটি কাগজের উল্টোদিকে কালো কালির মার্কার পেন দিয়ে সেই মধুবনী আর্টটি করি। বাবা, মা, শাশুড়ি মা, কর্তা ও কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে অনেক বাহবা এবং আগামীতে আরো আঁকার অনুপ্রেরণা পাই। এখানে লকডাউনের জেরে হাতের সামনে সব জিনিস পাওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। তাও পরম উৎসাহের সাথে তিনি (কর্তা) আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস এনে দিল। আর তারপর থেকেই আমার খালি সময় আর আমার মোবাইল, ল্যাপটপ পায়নি। সাদা কাগজে কালো জেল পেনের কালির দাগ আমায় অনেক অনেক মানুষের প্রশংসা পাইয়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে নতুনত্বের ইচ্ছেয় বাড়িতে আসে রঙিন পেন ও পেন্সিল। সাদা কাগজে পরে রঙের দাগ। আজকাল ফেসবুকের মতো একটি মাধ্যম থাকায় সকলের কাছে নিজের কাজ, আর যেকোন প্রতিভা পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ। আমিও সেই মাধ্যমের সাহায্যই নিই। আর তার জেরেই বীণাপাণি শিল্পী দিদি মেসেজ করে লিখতে বলেন। এমনভাবে উৎসাহ পেতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও অনেক অনেক ভালো আঁকবো আমি এই আশাই রাখি। বড়দের আশীর্বাদ ও সমবয়সী আর ছোটদের ভালোবাসা কাম্য। 🙏🏻…

গুয়াহাটি। আসাম