
বাপি ঘোষ ঃ আপনার মধ্যে সেই শুভ শক্তি রয়েছে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর, নেতিবাচক ভাবনা একদম দূর করুন।চলুন না এই হতভাগ্য, অসহায় এবং সম্ভাবনাময় পরিবারটির কান্না থামাতে আপনার শুভ উদ্যোগ শুরু হোক।সবাই মিলে এগিয়ে এলেই তো এই অসহায় দুঃখী পরিবারটির অন্ধকার দূর হবে। সবাই পাশে দাঁড়ালেইতো এই পরিবারটির কান্না থামবে। কিন্তু কেন এই পরিবারটির কথা বলা হচ্ছে? কি হয়েছে এদের?
তবে শুনুন। এ পরিবারের আলো ত্রিশ বছরের তরুনী, তাপসী সূত্রধর কয়েকবছর ধরে দুরারোগ্য মায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত। হঠাৎ শরীর থেকে শক্তি উধাও হয়ে যায় তাপসীর,চলাফেরা করতে পারে না। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসট্যান্সে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে এম এ পাশ করেছে তাপসী। হ্যারিকেন আর কুপির আলোয় পড়াশোনা চালিয়ে তাপসী স্বপ্ন দেখতো,এম এ পাশ করে একটি চাকরি নিয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাবে।কিন্তু ভয়ঙ্কর মায়োপ্যাথি রোগ ওকে এই বয়সে বিছানায় ফেলে দিয়েছে। বিছানায় বসেই ও এখন শুধু চোখের জল ফেলে আর প্রভু যীশুখ্রিস্ট, স্বামী বিবেকানন্দ সহ অন্য মনিষীদের বই পড়ে মানসিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা করে। বিছানায় শুয়েই ও সামান্য সেলাই এর কাজও করে।
আর তাপসীর ভাই? ২৬ বছরের দীপঙ্কর সূত্রধর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটাতে ছোটখাটো কাজও শুরু করেছিল।কিন্তু মায়োপ্যাথি দীপঙ্করকেও বিছানায় ফেলে দিয়েছে। বিশিষ্ট নিউরো সার্জন তথা প্রতিভাবান চিকিৎসক ডাঃ মলয় চক্রবর্তী বিনা ভিজিটে এই দু-জনের চিকিৎসা করেছেন।তিনি বলেছেন,এ রোগের ওষুধ নেই। এ ধরনের রোগীকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার এবং ফিজিওথেরাপি করতে হবে।
কিন্তু পুষ্টিকর খাবার এরা কোথায় পাবে? তাপসী আর দীপঙ্করের বৃদ্ধ বাবা জীতেন সূত্রধর কোনোমতে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে একটু আধটু রোজগার করছিলেন।কিন্তু করোনা লকডাউনের পর তিনিও পথে বসেন।তারমধ্যে সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে হাত ভেঙেছে। সে চিকিৎসা করার সার্মথ্যও নেই এই বৃদ্ধের।এরপর শ্বাসকষ্ট রয়েছে। ফলে বৃদ্ধ জীতেন সূত্রধর উপার্জনহীন।তাপসীর মা অর্চনা সূত্রধর স্ত্রী রোগে আক্রান্ত। তারপর বিছানাবন্দী ছেলেমেয়েকে স্নান করানো এবং শৌচ কর্ম করতেই সময় পার হয়।
আরও অবাক করার মতো ঘটনা শুনবেন? এই যুগে কোনো শহরে কারও বাড়িতে লন্ঠন আর কুপি জ্বলে? হ্যাঁ,এ বাড়িতে জ্বলে।কান্না জড়ানো এ বাড়িতে কোনো বৈদ্যুতিক আলোই নেই। লন্ঠন আর কুপির আলোতে পড়াশোনা করেই এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাপসী।দীপঙ্করও তাই।
আর রান্নাবান্না? কোনোদিন সে মাটির ঘরে মাটির উনুনে হাঁড়ি চড়ে,কোনোদিন চড়ে না। কোনো গ্যাস নেই সে বাড়িতে। খড়ির উনুনে ধোঁয়ায় চোখমুখের জ্বালা নিয়ে রান্না করেন গৃহকর্ত্রী অর্চনাদেবী।
তবে এই অন্ধকারে এঁরা বেঁচে আছে কিভাবে? আর রোজগারইবা কি? হ্যাঁ,রোজগার বলতে অর্চনাদেবীর লক্ষ্মীর ভান্ডার। মাসে পাঁচশ টাকা। আর আশপাশে কেও দয়া করে কিছু দিলে উনুনে হাঁড়ি চড়ে নতুবা আরেকটা দিন মৃত্যুকে আহ্বান করা।
পুষ্টিকর খাদ্য এ পরিবার পাবে কোথায়? দীপঙ্কর তাঁর বুকে মা সারদার ছবি আঁকড়ে রেখেছে। বুকে ধরে রেখেছে বাইবেল। সে সব মনোবল বৃদ্ধির জন্য দরকার। কিন্তু বাকিটা? দীপঙ্করের এক পুরনো শিক্ষক পুরনো দিনের একটি ছোট্ট মোবাইল ফোন দীপঙ্করকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন। কিন্তু সে ফোনের ব্যাটারিও তাদের অন্ধকার ঘরে চার্জ দেওয়া যায় না।পাশের বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনের ব্যটারি চার্জ করিয়ে আনতে হয়।
এসবতো শুনলেন।ভাবছেন চারদিকে যখন আলোর রোশনাই তখন আমাদের সমাজেই এমন একটি সম্ভাবনাময় পরিবার তিলে তিলে মৃত্যুকে আহ্বান করছে। আমার আপনার কোনো দায়িত্ব নেই? মান হুঁশ, বলে আমাদের কি কিছু নেই?
আছে, আমাদের সমাজে কিছু কিছু ভালো মানুষ আছেন যাঁরা এখনো অন্যের দুঃখকে আপন করে নেয়। যেমন স্কুল শিক্ষিকা পৃথা সেন দেব বিভিন্ন ভাবে এই পরিবারের কান্না থামাতে ধারাবাহিক মানবিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।সোমবার খবরের ঘন্টার এই প্রতিবেদককে পৃথাদেবীই খবর দেন। তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে খবরের ঘন্টার এই প্রতিবেদক সুকান্ত নগর জনকল্যাণ আশ্রমের পিছনে ঘোঘোমালি ফল বাজার রোডের বাড়িতে উপস্থিত হন। প্রতিবেদক সেখানে বিভিন্ন ছবি ক্যামেরাবন্দি করার পর মানবিকতার টানেই স্থানীয় চয়নপাড়ার সমাজসেবী টোটোন সাহার কাছে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান।প্রতিবেদকের আবেদনে সাড়া দিয়ে টোটোনবাবু ওই পরিবারকে নিয়মিত দুধ,সয়াবিন,ডাল সহ অন্য পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন। শিলিগুড়ি এন্ড স্মাইল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বিশিষ্ট সমাজসেবী নবকুমার বসাক এই প্রতিবেদকের কাছে খবর পেয়ে এদিনই ওই পরিবারের হাতে চাল,ডিম,দুধ পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতি মাসেই তাঁরা এন্ড স্মাইলের তরফে এই পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেবেন বলে নবকুমারবাবু জানিয়েছেন। নবকুমারবাবুদের সঙ্গে যোগাযোগ নম্বর 079088 46581। বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শীর্ষেন্দু পালও এদিন এই প্রতিবেদকের কাছে খবর পেয়ে ওই পরিবারকে নিয়মিত ভিটামিন ও পুষ্টিকর টনিক,ট্যাবলেট উপহার হিসাবে তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন। বিশিষ্ট এঙ্কার জুঁই ভট্টাচার্য এদিন ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আরও বিভিন্ন মানুষের কাছে মানবিক আবেদন জানান জুইদেবী।
শিক্ষিকা পৃথাদেবী বলেন,সবাই মিলে পুষ্টিকর খাদ্য এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিলে অন্ধকার থেকে আবারও আলোর পথে পা বাড়াতে পারে এই পরিবারটি।
এই অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করুন এই ব্যাঙ্ক একাউন্টে —
Central Bank of India
,Ghogomali Branch
Name and address of account holder: Mr. Jiten Sutradhar
Chayan para,Falbazar Road
Account no: 3832328819
IFSC code : CBIN0284223
যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর :9434826307
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শিলিগুড়ি প্রধাননগর শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রমের সহ সম্পাদক স্বামী রাঘবানন্দ মহারাজ এবং সমাজসেবী ও তৃনমুল নেতা বেদব্রত দত্ত বেশ কিছু দিন আগে ওই পরিবারের হাতে কিছু খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন।

ভিডিওর মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন —