বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই সঙ্গীত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন অভিজিৎ

শিল্পী পালিতঃ আজ আত্মকথা বিভাগে শিলিগুড়ি উত্তর সুকান্তনগরের অভিজিৎ চৌধুরী লিখেছেন তাঁর সঙ্গীত জীবনের লড়াইয়ের কথা —

আমি অভিজিৎ চৌধুরী, শিলিগুড়ির বাসিন্দা।ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে খুব ভালোবাসতাম । যে গান আমি একবার শুনতাম ,সেই গানই আমার কেনো জানি না মুখস্থ হয়ে যেতো এবং সেই গান আমি অনায়াসে গাইতে পারতাম । জানি না কেনো, গানের প্রতি আমার একটা আলাদা অনুভূতি ছিল । খুব ভালোবাসতাম গান বাজনাকে । ছোটবেলায় একটি অসুস্থতার কারণে আমি গান বাজনা তেমন শিখতে পারিনি তবে ছোটবেলা থেকেই গান গাইতাম ।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করতাম ।আগে আমরা ময়নাগুলিতে থাকতাম এখন শিলিগুড়িরনিবাসী । গান বাজনা করতাম ,অনুষ্ঠান এ যেতাম , বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতাম । শ্রোতারা খুব ভালোভাবে সাড়া দিতেন , আমার গান শুনতেন, আবার অনেকেই আমাকে আশীর্বাদ করতেন আর বলতেন যে “তুই অনেক বড়ো হবি ” ।

জানি না কেনো গান বাজনাটাকে এতটাই ভালোবেসেছিলাম । আমার নার্ভের অসুবিধার জন্যে আমি ছোটবেলার থেকেই হাত দিয়ে লিখতে পারতাম না , হাত পা কিছুই আমার তেমনভাবে চলতো না। সেই কারণে আমার পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি । আড়াই বছর বয়েসে আমি কথা বলা শিখেছি , তার আগে আমি অবশ্য বাকশক্তি পাইনি , আর এমন করেই আমাকে লড়াই করে চলতে হয়েছে জীবন যুদ্ধে যা আজও বর্তমান কিন্তু বর্তমানের লড়াইটি যেনো আরো বড়ো ; গান বাজনাকে নিয়ে আমার লড়াই । আমার ভালবাসা, আমার ধ্যান , জ্ঞান সব কিছু এই গান । গানই আমার সর্ব শ্রেষ্ঠ সাধনা । গানকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম , এখনো তা পরিবর্তিত নয় । একবেলা যদি আহার না গ্রহণ করি তাও আমার চলবে কিন্তু একবেলা যদি আমি গানের অনুশীলন না করি , তাহলে আমার তৃপ্তি ঘটবে না।

ষোল বছর বয়স থেকে আমি গান শেখা শুরু করে থাকি । আমার প্রথম গুরু আমার বাবা, শ্রী অমিত চৌধুরী । পরবর্তীতে আমার বাবার প্রিয় সখা গোপাল বোস , তার কাছে আমি শিলিগুড়িতে গান শিখি । এছাড়া আশিস কংশ বণিক , শ্রদ্ধেয় সঙ্গীত শিল্পী, খেয়াল আর্টিস্ট যিনি বর্ণালী বসু, তার কাছে আমি শিখেছি। শ্রদ্ধেয় বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদার , শ্রদ্ধেয় সৌমেন নন্দী, শ্রদ্ধেয় সুব্রত পঞ্চম , শ্রদ্ধেয় রথিজিত দা, তাদের কাছে আমি গান শিখেছি, এখনো শিখছি,শ্রদ্ধেয় বর্ণালী বোসের কাছে।

আমি অনেক প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করেছিলাম, যেখান থেকে বহুবার পুরস্কারও আমি পেয়েছি । কলকাতা থেকে আমি একবার পুরষ্কার নিয়ে এসেছিলাম যা নবরত্ন ,যেটা আনন্দ মার্গে যে প্রতিযোগিতা হয়েছিল ২০১৭ তে, আমি যেখানে শিলিগুড়িতে প্রথম স্থান অধিকার করে কলকাতাতে গিয়ে ওখানেও আমি নবরত্ন পুরষ্কার অর্জন করি । এখন আমি গান শেখাই এবং নিজেও শিখি, বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করি , এছাড়াও সি সি এন , রেডিও মিষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে আমি অনুষ্ঠান করি । বিভিন্ন ফেসবুক, ইউটিউব চ্যানেল এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কসতেও আমি অনুষ্ঠান করেছি।

২০১৬ তে সা রে গা মা পা তে আমি অডিশন দিয়েছিলাম সেই সময় অডিশনে সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু কিছু অসুবিধার জন্যে আমি যেতে পারি নি ; আমার বাবার পা ভেঙে যাওয়ার কারণবশত । তবে এখনো লড়াই করে যাচ্ছি গান বাজনা নিয়ে । এখনো শিখে যাচ্ছি, জানিনা কতটা শিখতে পারবো বা কত দিন গান বাজনাটাকে এমন করেই ধরে রাখতে পারবো, আশা করি সকল দর্শকদের আশীর্বাদে, আমার পিতা মাতার আশীর্বাদে, আমার গুরুজনদের আশীর্বাদে হয়ত আমি একদিন বড়ো হবো । আর কিছুই বলার নেই, এই ভাবেই আমার গান বাজনা শুরু হয় এবং এই ভাবেই আমার গান বাজনার লড়াই আমি করে যাচ্ছি, জানি না কতটা কি করতে পারবো কিন্তু আশা করি আপনারা সকলেই আমাকে আশীর্বাদ করবেন আমি যাতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি।

নমস্কার ধন্যবাদ । 🙏🏻🙏🏻

৩৮ নম্বর ওয়ার্ড। উত্তর সুকান্ত নগর। আলোকসঙ্ঘ ক্লাবের নিকটে। শিলিগুড়ি