যারা লিখতে পড়তে পারেন না, তাদের গান শিখিয়ে ভালো ফল পেয়েছেন অপরাজিতা

শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের ওয়েবপোর্টাল নিউজে সঙ্গীত শিল্পী অপরাজিত চন্দের কথা মেলে ধরা হলো–

আমি অপরাজিতা চন্দ। বাবার নাম অখিল কুমার চন্দ। মা আলপনা চন্দ। জন্ম , পড়াশোনা, কর্ম, সবই শিলিগুড়ি । শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে বাংলায় অনার্স নিয়ে পাশ করে রবীন্দ্র ভারতী থেকে বাংলা ও সঙ্গীত নিয়ে এম, এ পাশ করি। সঙ্গীতে আমার বিষয় ছিল বাংলা গান। রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদী, রজনীকান্ত,লোকগীতি, পল্লীগীতি বাংলার সব গানই ছিল।

দুই বছর বয়স থেকে পিসির হারমোনিয়াম নিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা দিয়ে শুরু। মায়ের কাছে শিখেছি প্রাথমিক পর্যায়ে। তারপরে তৃতীয় শ্রেনীর থেকে স্বপন দের কাছে গান শেখা শুরু । বর্নালী বসুর কাছে ক্লাসিক্যাল গানের তালিম নিয়েছি। বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদারের কাছে আধুনিক গানের তালিম নিয়েছি। গান শেখার সবচেয়ে বেশী উৎসাহ পেয়েছি মা, বাবা, দাদু , দিদার সাথে আমাদের গুরুদেব স্বামী নিগমানন্দ দেবের সংঘে যোগদান করতাম প্রায় প্রতি সপ্তাহে। সেখানে ব্রহ্ম সংগীত, ভক্তিগীতি আমাকে খুব আকর্ষন করত। তখন থেকেই যেকোন বাংলা গানের প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ে। মহিলা কলেজের উৎসবে গান গেয়েছি। কলেজের বৃক্ষরোপন উৎসবেও গান গেয়েছি। উত্তরবঙ্গ উৎসবে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৯ এ গান গাই। ২০০৮ এ যুব উৎসবে জেলা স্তরে আধুনিক গানে প্রথম হই ও রাজ্যস্তরে অংশগ্রহণ করি। ২০১০ এও রজনীকান্তের গানে যুব উৎসবে প্রথম হই ও রাজ্যস্তরে গান গাই। নর্থ পয়েন্ন্টের রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে কিছুদিন মিউজিক টিচার হিসেবে কাজ করেছি। বইমেলা, হস্তশিল্পমেলায় গান গাই। বৃক্ষরোপণ উৎসবে কর্পোরেশনের ডাকে গান গাই। রেডিও মিষ্টিতে অংশগ্রহণ করেছি গানগেয়ে। সি, সি, এন এ মাঝে মাঝে গান গাওয়ার সুযোগ পাই।”প্রথম আলো “অনুষ্ঠানে চার পাঁচবার অংশগ্রহন করেছি। আমার ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও একবার “প্রথম আলো “ তে অনুষ্ঠান করি। এই লকডাউনের সময়েও ঘরে থেকেই “ প্রথম আলোর “ অনুষ্ঠান করি। সি,সি,এন বিনোদনে “ আমি যে জলসাঘরে” অনুষ্ঠানে আমি দেড়ঘন্টার প্রোগ্রাম করি। সি, সি, এন এর পূজো বৈঠকীতে অংশগ্রহন করি।২০২০ তে পৌষমেলাতেও গান গেয়েছি।

সুভাষপল্লী হাতিমোড়ে আমার বাড়িতেই আমার গানের স্কুল “ সুর মল্লার” । ক্ল্যাসিক্যাল গানই শেখানো হয় চণ্ডীগড় ঘরানার। এছাড়া রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, অতুলপ্রসাদী, বা অন্যান্য গানও শেখানো হয়। পরীক্ষার ব্যবস্হাও আছে। আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রিহান ব্যানার্জি ও পূজা বসাক দুজনেই খুব সম্ভাবনাময় । আমাদের ১৮ নং ওয়ার্ড উৎসবে রিহান ব্যানার্জি প্রথম হয়েছে। আমার “ সুর মল্লারের “ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে লেক্সপো মেলায় অনুষ্ঠান করি। বসুন্ধরার বসন্ত উৎসবে ইচ্ছে ডানার আহ্বানে “ সুর মল্লারের “ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করি। সামাজিক কাজ হিসেবে কাকিমা, জ্যেঠিমা, মাসীমা স্হানীয়েরা যারা সংসারের চাপে নিজেদের ইচ্ছেগুলো হারিয়ে ফেলেছিলেন বা এখন তাদের গান শেখার ইচ্ছে হয় তাদেরকে গান শেখাই , তাদের নিয়ে নানান অনুষ্ঠান করি ,ওয়ার্ড উৎসবেও অনুষ্ঠান করি। তাদের আনন্দ দেখে আমি নিজেকে খুব ধন্য মনে করি। অনেকে লিখতে পড়তে পারেননা তাদেরকেও গান শিখিয়ে খুব ভাল ফল পেয়েছি। এই উপলব্ধি আমার আসে আমার গুরুদেবের সংঘের থেকেই। মায়েদের ভক্তি নিবেদনের অদম্য ইচ্ছে দেখেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই কাজ যেন চালিয়ে যেতে পারি। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাংলা গানের প্রচার যাতে বেশী করে করতে পারি এই দুটোই আমার লক্ষ্য। আমি গান নিয়েই থাকতে ভালবাসি।