পশু-পাখির মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন শিলিগুড়ির এই পরিবেশপ্রেমী

শ্যামা চৌধুরী ঃঃ খবরের ঘন্টার সম্পাদকের আবেদনে সাড়া দিয়ে এই করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করছি। এখন আমার বয়স প্রায় সত্তর। ২০০৪ মানে ১৬ বছর ধরে পরিবেশ বিশেষ করে কুকুর, বিভিন্ন পাখি, সাপ সহ অন্য প্রানী নিয়ে আমি কাজ করি। বলা ভালো এটা আমার নেশা। পেশা নয়। ভালোবাসি এই অবলা প্রানীগুলোকে। তাদের চিকিৎসা, পুর্নবাসন প্রভৃতি সেবার কাজ করতে পেরে বেশ ভালো লাগে। মনে করি, এটাও একরকম ঈশ্বর প্রেম।

করোনা দুর্যোগের পর লকডাউন শুরু হওয়ায় বহু পথ কুকুরকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কিছু কাজ করছি। চিকিৎসা করছি দুটো গোখরো সাপের। দুটো গরুকেও রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছি এরমধ্যে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আর আজকের এই লকডাউন চলতে থাকার মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করছি প্রানী জগতে। আর একটি জিনিস, আবহাওয়ারও কিন্তু পরিবর্তন ঘটছে। এখন এপ্রিল শেষ হয়ে মে মাস পড়তে চললো। অথচ গরম বলা চলে প্রায় নেই। একটা হালকা শীতের আবরন নজরে আসছে। একটা হালকা শীতের হাওয়া রয়ে গেছে। এইসময় অন্যবার সাপ বের হওয়ার অনেক কল পাই। এবার তা নেই। সাপেরা এসময় শীত ঘুম পেরিয়ে বাইরে বের হয়। আর ওরা তখন বেশ ক্ষুধার্ত থাকে।টানা শীত ঘুম কাটানোর পর খাবারের সন্ধানে ওরা এদিক ওদিক ছোটে। গৃহস্থ বাড়িতেও প্রবেশ করে যায়। আমরা সাপ ধরার কল পাই। এবার তা নেই। আর যে সাপ দুটোর চিকিৎসা আমি এসময় করছি তাদেরও তেমন ফোঁসফাঁস নেই। মানুষের লকডাউনে ওরাও সঙ্গ দিচ্ছে কিনা, জানি না। বা প্রকৃতির কোনও বার্তা ওরা দিচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না।
এখন এইসময় পরিস্কার বলা যায়, পরিবেশ বা প্রকৃতি দূষন মুক্ত। বাতাসে কার্বন নেই বলা চলে। প্রকৃতি বোধহয় নিজেই নিজেকে মেরামত করছে। পশুপাখির মধ্যে অদ্ভুত এক পরিবর্তন বা শান্তি লক্ষ্য করছি। কুকুরগুলো আগের মতো অনাবশ্যক চিৎকার করছে না। ওদের মধ্যে একে অপরকে সহ্য করার একটি প্রবনতা লক্ষ্য করছি। এই লকডাউনে মানুষ কতটা নিজের স্বভাব বদলে ফেলেছে জানি না। পথ কুকুরগুলো কিন্তু নিজেদের স্বভাব বদলে ফেলেছে। ত্রান বিলি করতে গিয়ে আমার অন্তত তাই মনে হচ্ছে। কুকুরগুলোর মধ্যে এগ্রেসিভ বা আক্রমনাত্মক ভাব দেখছি না। আর এটা বলবো যে এতদিন কুকুরগুলোর যে আক্রমনাত্মক ভাব তৈরি হয়েছিল তার জন্য কিছু মানুষই দায়ী। মানুষ ওদের ওপর অত্যাচার করছিলো। এখন কিন্তু কুকুরগুলো খেতে না পারলেও চিৎকার করছে না। ওরা ঘুমিয়েই সময় পার করে দেয়। যখন সব খোলা ছিলো, ওরা কখনও বাজারে মুরগি বা পাঁঠার মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। মুরগির পালক, নাড়িভুড়ি টেনে এনে খেতো। কোনও কুকুর আবার চা দোকানের সামনে দাঁড়াতো যদি আধখান বিস্কুট জোটে এই আশায়। কেও আবার হোটেলের সামনে ঘুরঘুর করতো যদি কিছু ভাত জোটে এই আশায়। এখন সব বন্ধ, ওরাও সেই অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য, কিছু মানুষ এখনও কুকুরগুলোকে ঢিল মারে। আমি নিজে দেখেছি। তবে আর একটি বিষয় নজরেও এসেছে। আমার শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম লাগোয়া বাড়িতে পায়রা আছে। একটি কুকুরকে দেখলাম সেই পায়রা ধরে খাচ্ছে। খিদের জন্য কিনা বুঝলাম না।
ওদিকে কুকুর কামড়ানোর খবর কিন্তু আবার পাচ্ছি না।
প্রকৃতি পরিবেশের রাজ্যে আরও পরিবর্তন দেখছি। শব্দ দূষন নেই। বায়ূ দূষন নেই। জল দূষন নেই। প্রকৃতির স্বাস্থ্যের জন্য এসব নিশ্চয়ই ভালো। আর প্রকৃতি ভালো থাকলে মানুষও ভালো থাকবে। এই জীবজগতের সব প্রান প্রকৃতি থেকেই এসেছে। প্রকৃতিতেই সবাই আবার বিলীন হয়ে যাবে। মানুষ এই প্রকৃতির বড় সন্তান। কিন্তু প্রকৃতির সন্তান শুধু মানুষ নয়, আরও বহু সন্তান রয়েছে প্রকৃতির। মানুষের দাদাগিরি বাড়তে থাকায় হয়তো প্রকৃতি ও তার অন্য সন্তানরা বিব্রত বোধ করছিলো। তাই হয়তো প্রকৃতির কাছে শিশু এই মানব সমাজকে ঘর বন্দি করে প্রকৃতি তার নিজের এবং অন্য সন্তানদের একটু শান্তি, স্বস্তি দিচ্ছে। মানুষের দুষ্টুমি কমাতে হয়তো প্রকৃতি আমাদের ঘরবন্দি থেকে আপাতত বিশ্রামের পরামর্শ দিচ্ছে! এই করোনা থেকে আমরা প্রত্যেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে সামনে বড় বিপদ। তাই সাধ,সাবধান!