করোনা দুর্যোগ, পর্যটন আর হোটেল শিল্পের কি হবে, বাড়ছে চরম উদ্বেগ

সুকুমার ঘোষ ঃঃ কী হবে আমাদের পর্যটন এবং হোটেল শিল্পের তা নিয়েই আমরা এখন চরম দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগে রয়েছি। করোনার লকডাউন যেভাবে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থাবা বসিয়েছে তার বাইরে নেই পর্যটন ও হোটেল শিল্প। আর দার্জিলিং পাহাড়, সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান ভিত হলো পর্যটন। ফলে সবার মধ্যে চিন্তা।

সিকিমতো পুরোপুরি পর্যটন নির্ভর। সিকিম থেকে দার্জিলিং, শিলিগুড়ি সমতল প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসেন । দেশের বিভিন্ন প্রান্ততো বটেই বিদেশ থেকে প্রতিদিন এই এলাকায় প্রচুর পর্যটক আসেন স্রেফ পাহাড়, নদী, জঙ্গলের টানে। পর্যটকরা উত্তরবঙ্গে আসায় শুধু স্থানীয় অর্থনীতি নয়, দেশের অর্থনীতিও মজবুত হয়। বিদেশি পর্যটকদের আগমনের জেরে দেশের রাজস্ব ভান্ডারও মজবুত হয়।
এখন করোনা লকডাউনের জেরে যানবাহন চলছে না। দূষন কমছে। পরিবেশ প্রকৃতি আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। বাতাস নির্মল হচ্ছে। দার্জিলিং পাহাড়, সিকিম, ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নতুনভাবে ফুটে উঠছে। সব ঠিক। কিন্তু আমাদের উত্তরবঙ্গের পর্যটন বা হোটেল শিল্পের কি হবে? পর্যটন শিল্পের সঙ্গে প্রচুর গাড়ি চালক ও মালিক নির্ভর করে আছেন। সকলের ঋন রয়েছে। ই এম আই টানা শুরু হয়েছে। অথচ কোনও রোজগার নেই। সব হোটেল মালিক বসে পড়েছেন। কোনও রোজগার নেই। অথচ শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।
কবে সব কিছু স্বাভাবিক হবে জানা নেই। এখন কাল যদি ধরে নিই লকডাউন উঠে যাচ্ছে তবুও আমাদের হোটেল বা পর্যটন শিল্পে চটজলদি লকডাউন উঠছে না বলেই ধরে নিচ্ছি। কারন লকডাউন উঠলেও চট করে কেও এই এলাকায় ঘুরতে আসার পরিকল্পনা নেবেন না। কারন বেশ কিছু দিন সব মানুষের মধ্যেই বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়ে একটি করোনা ভীতি কাজ করবে। ফলে কেও এখনই ভ্রমনে বের হওয়ার কর্মসূচি গ্রহন করছেন না। বিমান, ট্রেন যোগাযোগও দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে না। ফলে হোটেল, পর্যটনে শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো এই মুহুর্তে হচ্ছে না। সামনে আবার বর্ষা আসছে। বর্ষা, করোনা দুর্যোগ, ডেঙ্গু সবমিলিয়ে সামনে কিন্তু আরও লড়াই রয়েছে। ফলে ধরেই নেওয়া যেতে পারে আগামী একবছর অন্তত হোটেল, পর্যটন শিল্পে অফ সিজনই চলবে। দার্জিলিং পাহাড়ে বাংলাদেশের প্রচুর পর্যটক আসেন। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে উত্তরবঙ্গে পড়াশোনাই করতে আসে। তাদের কেও এখন দেশে ফিরে গিয়েছে। কেও আবার হস্টেলের মধ্যে আটকে আছে। ফলে সেখানেও আড্ডা। কবে সব কিছু সুস্থ, স্বাভাবিক হবে, সীমান্ত আবার কবে খুলবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় আমরা অন্তত হোটেল শিল্পের তরফে রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের কাছে হোটেল শিল্প ও পর্যটন শিল্পের জন্য কিছু বিশেষ প্যাকেজ গ্রহনের প্রস্তাব দেবো। বহু ছোট ছোট হোটেল মালিক ঋন নিয়ে হোটেল খুলেছেন। তাদের অবস্থাও খুব খারাপ। হোটেলগুলো সব বন্ধ হয়ে গেলে বহু শ্রমিক কাজ হারাবেন আর ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পেরও ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল হবে। অথচ করোনা লকডাউনের জেরে দূষনহীন পাহাড়ে যে নতুন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তা উপভোগ করতে আগামী দিনে বহ পর্যটক আসবেন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে সাজানো হোটেল ও পর্যটন শিল্পের মেরুদণ্ড যাতে ভেঙে না পড়ে সেদিক গভীরভাবে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। পর্যটন ও হোটেল শিল্প যত তাড়াতাড়ি এই দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সরকারেরও অর্থনৈতিক ভিত ততই মজবুত হবে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সবশেষে সকলকে মে দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবার এসেছে মে দিবস। করোনা লকডাউন দুর্যোগ কাটলে শ্রমিকদের আট ঘন্টার কাজের পরিবর্তে আরও বেশি বেশি করে কাজ করতে হবে বলে আমি মনে করি। কেননা পরিশ্রম বেশি হলেই এই করোনার বিরাট ক্ষতি মেরামত করা সম্ভব।
সবাই ভালো থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মুখে মাস্ক বেঁধে রাখুন। জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়াই উচিত। ঘরে থেকেই হারাতে হবে করোনাকে।