কোনও একদিন কোদাইকানালে, ভ্রমণ কথা লিখেছেন ক্ষমা রায় ভট্টাচার্য

শিল্পী পালিতঃআজ আমাদের এই ওয়েবপোর্টালে হাওড়া থেকে ক্ষমা রায় ভট্টাচার্য লিখেছেন তাঁর ভ্রমণ কথা কোন একদিন কোদাইকানালে —

*কোন একদিন কোদাইকানালে*
✍️ক্ষমা রায় ভট্টাচার্য্য

ব্যাঙ্গালোর থেকে ঠিক রাত দশটায় বাস ছাড়লো । স্লিপার কোচ । হ্যান্ডব্যাগ জলের বোতল গুছিয়ে রেখে শুয়ে পড়লাম কিন্তু চোখ থাকলো জানলায় । আলো ঝলমল শহরের রূপ দেখতে দেখতে কখন যেন ঘুমের দেশে চলে গিয়েছিলাম । হঠাৎ বিজাতীয় কোলাহলে ঘুম ভেঙে গেল । বাস থেমেছে । কথা বলতে বলতে যাত্রীরা নামছে দেখে ভাবলাম গন্তব্যে এসে গেছি বুঝি । তাড়াতাড়ি ছেলে আর কর্তামশাইকে ডেকে তুললাম । ব্যাগ নিয়ে পায়ে জুতোটা গলাতে যাবো সে সময়ে ছেলে বললো ,
এখনও আসিনি । সকালে পৌঁছাবো ।

তাই ? তাহলে রাতদুপুরে এখানে বাস থেমেছে কেন ? বিস্মিত আমার প্রশ্নে বিঙ্কু (আমার ছেলে) জানালো , এখানে দশমিনিটের ব্রেক আছে । কেউ বাথরুম যদি যায় , তাই । তারপর বললো চা খাবে ? চা পাওয়া যাচ্ছে । বলতেও দেরি নেই চায়ের অর্ডার দিতেও দেরি নেই । ঘড়ি দেখলাম তিনটে বাজে । পাশে তাকিয়ে দেখি কর্তামশাই নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছেন । চা এলে আমরা মা ছেলে গরম চা বেশ তৃপ্তি করে খেলাম । বেশ ঠাণ্ডা । এসিটা বন্ধ করে দিলাম । তারপর ছেলের সিটে কর্তাকে পাঠিয়ে দিলাম । ঘুমোক ওখানে নিরিবিলিতে । আমরা মা পোয়ে গল্প করতে করতে আর জানলা দিয়ে দেখতে দেখতে বাকি রাত কাটিয়ে দেবো ।

আবার অন্ধকার পথের বুক চিরে বাস চলছে । জঙ্গল আরম্ভ হলো । আমরা কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখতে থাকলাম । যদি কোনো পশুর দেখা পাই । কিন্তু থমথমে অন্ধকারে বড় বড় গাছ গুলো যেন মিটিং করছে মনে হচ্ছিল । ছোট ছোট পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বাস চলছে। যাত্রীরা মনে হয় সবাই ঘুমোচ্ছে আমরা দুটিতে ছাড়া । অন্ধকার আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে একসময় ভোরের আলো ফুটে গেল । কিন্তু সূর্যোদয় দেখা গেলনা । ভোরের নরম রোদ গায়ে মেখে গাছপালা জঙ্গলের পাহাড়কে পাশে নিয়ে বাস চলতে চলতে এসে গেল কোদাইকানাল । ঘড়িতে ঠিক সাতটা বাজে । পাহাড়ি শহর জেগে উঠেছে । বাস থেকে নামতেই চারিদিক থেকে মেঘ এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো‌। এক অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে গেলাম । গুগল জানালো আমাদের আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেল একদম সামনেই । তিন মিটার দূরত্বে হোটেল উডস ।

কোদাইকানাল শব্দের অর্থ অরণ‍্যের দান । বাস থেকে নেমেই তার পরিচয় পেয়েছি । জায়গাটা বেশ ঠান্ডা । মে মাসের ২১ তারিখ কিন্তু ফুল স্লিভ শ্রাগ গায়ে দিয়েও শিরশির করছে । আজ সকালে সাড়ে সাতটার একটু আগেই হোটেলে পৌঁছেছি । আমাদের চেকিং টাইম এগারোটা হলেও ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে আর যেহেতু আমাদের বুক করা রুমটা ফাঁকা ছিল তাই আমরা রুমে ঢুকে গেলাম । তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট খেয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে নটা বাজলো । মেঘলা আকাশ , কিন্তু বৃষ্টি নেই । রাস্তায় সকলেই দেখছি টুপি সোয়েটার জ‍্যাকেট পরে রয়েছে । আমরা সদ‍্য কলকাতার গরম থেকে ওখানে গিয়ে ঠাণ্ডাটা বেশ উপভোগ করছিলাম । সব জায়গার নাম মনে নেই । পাহাড় , মেঘ , পাইনে মাখামাখি খুব সুন্দর একটা হিলস্টেশন কোদাইকানাল । আগে থেকেই বুক করা গাড়িতে চললাম ভালোলাগাকে সঙ্গে নিয়ে । সিলভার কাসকেড ফলস , কোয়েকার্স ওয়াক , ডলফীন নোজ , পিলার রক দেখে নানা পোজে ফোটো তুলে অনেকটা সময় কেটে গেল । দুপুরে যখন একটা পাঞ্জাবী ধাবায় লাঞ্চ করছিলাম সে সময় ঝিরিঝিরি একটু বৃষ্টি হয়ে ঠাণ্ডাটা বেশি লাগছিল । আপার লেক ভিউ , ময়ার্স ফয়েন্ট , গ্রীনভ‍্যালি ভিউ , লিরিল ফল্স ( যেখানে লিরিল সাবানের এ্যড হত), কোদাই লেক ঘুরে দেখতে দেখতেই পুরো দিন কেটে গেল।
অনেক নতুন ধরণের ফুল দেখলাম , যার অনেক গুলোই শুধুমাত্র ফেসবুকে বিদেশি পোস্টে দেখেছি । পাহাড়ের গায়ে গায়ে নানা রঙের মর্নিং গ্লোরী , বড় বড় ধুতুরা ফুল , আরও নাম না জানা কত রঙের ফুল যে দেখলাম । মন আনন্দে ভরে গেল । এখানে সন্ধে হয় দেরিতে । সাড়ে পাঁচটায় হোটেলে ফিরে তাই ছেলে আর আমি একটু আশপাশে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম । হাঁটতে হাঁটতে চারিপাশের দোকান পাসার দেখতে দেখতে অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছিলাম । ফেরার সময় চড়াই ভাঙতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল । তারপর হোটেলের প্রায় কাছে চলে এসেছি , ততক্ষনে সূর্যও ডুবে গেছে , সন্ধে সবে নেমেছে , এমন সময় হইহই , লোকজন ছুটছে । কি ব‍্যাপার জানতে দুজনেই দাাঁড়িয়েছি , দেখি নাদুসনুদুস চেহারার এক বাইসন দৌড়ে আসছে । আমরা আর বাইরে থাকিনি বাবা , সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে চলে এসেছি । রাতে রুমসার্ভিস বলে দেবো । কাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় গাড়ি আসবে । কাল আবার মুন্নার যাবো । প্রকৃতি সেখানে আরও কত উপহার নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে !

26th July , Howrah .