রায়গঞ্জ কর্নজোড়ার স্কুল শিক্ষকের আবিস্কার, ম্যাজিক ক্যালেন্ডার

শিল্পী পালিত ঃআজ আত্মকথায় রায়গঞ্জ কর্নজোড়ার স্কুল শিক্ষক প্রবীর কুমার মন্ডল ম্যাজিক ক্যালেন্ডার আবিস্কারের কথা লিখেছেন। তার সঙ্গে তার আরও অনেক সাহিত্য চর্চার কথা মেলে ধরেছেন–

“নমস্কার। আমি প্রবীর কুমার মন্ডল, কর্ণজোড়া( হাটখোলা)
, কর্ণজোড়া,রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর। জন্ম আমার প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ পরিবারে। কত না বসন্তের প্রাণ- প্রাচুর্য থেকে আমি ছিলাম দূরে- বহুদূরে। আমার মাথার উপর ছিল সূর্যের আগুন জ্বালা মুখ, হৃদয়ে ভালোবাসার অর্ধদগ্ধ চাঁদ, জীবনের বাঁকে বাঁকে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার ব্যারিকেড। তাই বুক থেকে সরিয়ে দিতে হয়েছিল অনায়াস স্বপ্নের বাতাস। তবুও আকন্ঠ জ্ঞান পিপাসা নিয়ে জেগে থেকেছি অনেক পূর্ণিমার রাত। তার ফলেই হয়তো জীবনে পেয়েছি সামান্য সফলতার স্বাদ।

আমার জীবনের ঊষর মরুভূমি মায়ের স্নেহ-ভালবাসার শীতল ধারা বেশিদিন সরস করতে পারেনি। মাকে হারানোর পর বড় দাদা- বৌদির আশ্রয়ে ধুরইল, খলশী, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করি। জীবনে কোনোদিন টিউশন পড়িনি বরং ছাত্র জীবন থেকেই টিউশন পড়িয়েছি। অনেক গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা পয়সায় শিক্ষাদান করেছি। তাদের অনেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষাদানের এটাই বড় সার্থকতা।

আমি ১৯৯১ সালে রায়গঞ্জ মোহনবাটি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, সুদর্শনপুর দ্বারিকা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যা চক্র থেকে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৯৭ সালে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করি। তারপর পাঁচ বছর বেকারত্বের জ্বালা বহন করার পর ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহান কাজে যোগদান করবার সৌভাগ্য লাভ করি। বর্তমানে কর্ণজোড়ায় স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা নিয়ে বসবাস করছি।

আমার জীবন বারবার ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে আমার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এক ভয়ানক ঝড়। মেয়ের বয়স তখন এক বছর। ওর মা ফুসফুস সংক্রমণ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে নার্সিংহোমে ICU-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে থাকে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের আর্থিক সহযোগিতায় দেড় মাস পর মৃত্যু হার মানে।

ছোটবেলা থেকেই মাথার যন্ত্রণা আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। তাই পড়াশোনায় বেশিদূর এগুতে পারিনি। তবে অভিনয়, সাহিত্যচর্চার প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল প্রবল। মাত্র ৬ বছর বয়সে যাত্রায় অভিনয় শুরু করি। তারপর থেকে অনেক যাত্রা ও নাটকে অভিনয় করেছি। নিজে কয়েকটি নাটক রচনা করে তাতে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছি। লিখেছি অনেক সাহিত্য সমৃদ্ধ চিঠি। এইসব চিঠি কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্র, আকাশবাণী শিলিগুড়ি, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, রেডিও রাশিয়া, জার্মান বেতার কোলন, রেডিও ভেরিতাস এশিয়া ফিলিপাইন থেকে বিভিন্ন সময়ে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করেছে। আমার লেখা কবিতা ও ছোট গল্প বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। আকাশবাণী শিলিগুড়ি কেন্দ্রের স্বরচিত কবিতা পাঠের যুব অনুষ্ঠানে যোগদান করেছি কয়েকবার। আমার লেখা প্রবন্ধ ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, রেডিও রাশিয়া, জার্মান বেতার কোলন,রেডিও ভেরিতাস এশিয়া ফিলিপাইন থেকে অনেকবার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে।

এছাড়া দীর্ঘ ১০ বছরের চেষ্টায় ২০০০ সালে আমি “ম‍্যাজিক ক‍্যালেন্ডার” নামে একটি ইংরেজি ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করি যা থেকে লক্ষ লক্ষ বছরের দিন ও তারিখ নির্ণয় করা যায়। তবে এখনো তার কোন মূল্য পাইনি।

সবশেষে বলবো, আমার জীবনের দুঃখ-বেদনার কণ্টকময় পথে মানুষের ভালোবাসা আর ঈশ্বরের আশীর্বাদের সুগন্ধি ফুল ঝরে পড়ে তৈরি করে কোমল গালিচা। সেই গালিচা পাতা পথ ধরে আমি যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে পারি।

*****