![20200514_163908](https://www.khabarerghanta.in/wp-content/uploads/2020/05/20200514_163908-678x255.jpg)
বাপি ঘোষঃ বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি যেন না করি ভয়। চরম এই করোনা বিপদের সময় আমরা নিঃশঙ্ক বা ভয়হীনভাবে থাকবো, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে এই বানীটি এখন আমাদের বারবার স্মরন করতে হবে। খবরের ঘন্টার মুখোমুখি হয়ে কবি পক্ষ স্মরনে এই কথাগুলো জানালেন শিলিগুড়ির বিশিষ্ট সাহিত্যিক ডঃ গৌরমোহন রায়। দার্জিলিংএর লরেটো কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ গৌরমোহন রায়। তিনি দার্জিলিং এর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধ্যক্ষও। তিনি কবি পক্ষ এবং করোনা নিয়ে আরও অনেক কথাই জানালেন। পড়ুন তাঁর কথা —
![](https://www.khabarerghanta.in/wp-content/uploads/2019/05/green-tea.jpg)
” সবদিক থেকে আমরা এখন খুব বিপন্ন। ধনে প্রানে মারা যাওয়ার অবস্থা। এতবড় বিপদের সামনে সমগ্র মানবসমাজকে কখনও দাঁড়াতে হয়নি। অনেক মহামারী অতীতে এসেছে। কিন্তু সেসব মহামারীর ব্যাপকতা আজকের করোনার মতো ছিলো না। আমার মনে হয়, এখন এটা চরম দুঃসময়। এই দুঃসময়ের মধ্যে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মহামানব, মহাপুরুষকে স্মরন করা আবশ্যক। তিনি যে কালজয়ী। তারমধ্যে যে দৈবী সত্ত্বা ছিলো তাতো চিরসত্য হয়ে আছে। তাঁর মধ্যে একটি অবিনাশী ভাব ছিলো। সত্যের মধ্যে যে সত্য আছে তা ছিলো কবির জীবনাশ্রয়ী। তাই তার কথা আজ খুব অন্তরঙ্গভাবে আজকে মনে করতে হবে। কোন সে শক্তি যার দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে তিনি মৃত্যুকেও পার হয়ে গিয়েছেন। তিনি মৃত্যুকে বলতেন জীবনান্তরে যাওয়ার একটি দ্বার মাত্র। অর্থাৎ তিনি অনন্ত জীবনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনিতো সব লেখাই লিখেছেন। কোনও লেখাতো লিখতে বাকি রাখেননি। বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি যেন না করি ভয়। এই যে চরম বিপন্নতার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা নিঃশঙ্ক থাকবো, এই বানীটি আমাদের রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে নিতে হবে। সেই যে ঐশী শক্তি যার দ্বারা প্রনোদিত হয়ে তিনি সব কষ্ট দুঃখকে, তার পারিবারিক দুঃখশোক থেকে জগতের দুঃখ, ভারতের দুঃখ এই বড় অন্তরেতো বহন করে গেছেন। তাহলে তার কাছ থেকে সেই মহাশক্তির একটুখানি খন্ডাংশ যাতে লাভ করতে পারি সেটাই হোক প্রার্থনা। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মাঝখানে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। তিনি আমাদের চির সত্যের বানী বাহক।
তিনি যেন আমাদের ধ্যানের বস্তু হয়ে ওঠেন। তাঁর সত্বা আমাদের অনুধ্যানের বিষয়। এখন ঘরবন্দি অবস্থায় তাই যেন একটু বেশি করে আমরা রবীন্দ্র চর্চা করে যেতে পারি।
ঘরবন্দি অবস্থায় বিশ্ব কবিও অনেক সৃজন কাজ করেছেন।তাঁর পুত্রের মৃত্যুর পর তিনি শোকে দুঃখে অনেকটা সময় ঘরবন্দি ছিলেন। একদম বাইরে বের হননি, কারও সামনে আসেননি। পরে আবার পূর্ব জীবনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছেন। শোক তাঁকে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় কাবু করতে পারেনি। তিনি তার থেকে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন মহাশক্তির আঁধার। আমরা সাধারণ মানুষ অত শক্তির কথা ভাবতে পারি না।
তবে এই করোনা মহামারীর সময় দেখছি অনেক ইতিবাচক শক্তি কাজ করছে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এতো এক নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। কিছু বিপরীতধর্মী শক্তি কাজ করলেও একট বিরাট অংশের মানুষ অভুক্তদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন, এটা অবশ্যই শুভ দিক। পৃথিবীর বৃহৎ দেশগুলোর কর্নধারেরা বলছেন, তারা কোনোভাবে করোনার প্রতিষেধক আবিস্কার করতে পারলে সব দেশে ছড়িয়ে দেবেন। এতো মানবতারই জয়জয়কার। আর এই ইতিবাচক ভাবনায় যে শক্তি তৈরি হয় তা অন্য কোনও শক্তিতে পাওয়া যায় না। ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে এখন মানুষ যত এগিয়ে যেতে পারবে করোনা ততই একটু একটু করে পিছু হটতে থাকবে। ”