বাবা মাছ বিক্রেতা, মা পরিচারিকা –শিলিগুড়িতে মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল রীতার

নিজস্ব সংবাদদাতা,শিলিগুড়ি, ১৫ জুলাইঃ ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মানল দারিদ্রতা। অদম্য মানসিক জোর-ই মাধ্যমিকে সাফল্য এনে দিল হতদরিদ্র পরিবারের এক মেধাবী ছাত্রীকে। না ছিল গৃহ শিক্ষক, না ছিল বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার সহায়িকা। শুধুমাত্র পাঠ্যবই পড়েই সাফল্যের শিখড়ে পৌঁছে গেল শিলিগুড়ির ইষ্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন উত্তর একটিয়াশালের ক্ষুদিরাম কলোনীর রীতা হালদার। মাধ্যমিকে প্রথম দশে না থাকলেও তার ফল যথেষ্টই ঈর্ষনীয়। নানান আর্থিক প্রতিকূলতা সত্বেও প্রতিটি বিষয়েই লেটার মার্কস নিয়ে এবার মাধ্যমিকে পাশ করেছে রীতা।

শিলিগুড়ি হায়দারপাড়া বুদ্ধভারতী হাই স্কুলের ছাত্রী রীতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো তার পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। বরাবরই অন্য ছাত্রছাত্রীদের পেছনে ফেলে দিয়ে সাফল্যের শীর্ষে থাকত মেধাবী ছাত্রী রীতা হালদার। রীতার বাবা সাইকেলে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করেন, আর মা পরিচারিকার কাজ করেন। এই আর্থিক অনটনের মধ্যে রীতার পক্ষে সম্ভব ছিল না গৃহ শিক্ষক রাখার। ছিল না কোন প্রকাশনী সংস্থার সহায়িকা। রীতার মেধা দেখে তার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা পড়াশুনা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে স্কুলের রানা স্যার ও অন্তরা ম্যাম। রীতার অদম্য মানসিক জোর ও কঠিন পরিশ্রমই তার সাফল্যের অন্যতম মাপ কাঠি। এদিন রীতার মা গীতা হালদার জানান, খুব কষ্ট করে দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে মেয়েকে পড়িয়েছেন। অর্থাভাবে তারা তাদের ছেলের পড়াও চালাতে পারেননি। কিন্তু একমাত্র মেয়েকে শিক্ষিত করার জন্যই চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশুনা।

রীতার বাবা পেশায় ধীরেন হালদার জানিয়েছেন, অনেক কষ্ট করে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারনে মেয়ের পড়াশোনা আদৌ চালাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয়ে। তিনি চাইছেন মেয়ের পড়াশুনার জন্য আর্থিক সাহায্য।

এবার মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে এমন আশা ছিলই রীতা হালদারের। স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এবার প্রতিটি বিষয়েই লেটার মার্ক্স নিয়ে পেয়েছে ৬৩১। বাংলায় রীতার প্রাপ্ত নম্বর ৯০, ইংরেজিতে ৯০, অংক ৯১, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯০, ইতিহাসে ৯৩, ভূগোলে ৯২। রীতা জানিয়েছে, পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও তার অদম্য মানসিক জোর ও অক্লান্ত পরিশ্রম তাকে মাধ্যমিকে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছে। সে এবার আর্টস নিয়েই ভর্তি হতে চায় একাদশে। তার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা শিক্ষকতা করার।

রীতার সাফল্যে খুশি যেমন তার পরিবার, তেমনি খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। বুধবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষনার পর থেকেই এলাকার মানুষজন ভিড় জমান রীতার বাড়ীতে। সকাল থেকে মোবাইলে বিভিন্ন জায়গা থেকে শুভেচ্ছা বার্তা জানান হয় রীতাকে। হত দরিদ্র পরিবারের মেয়ের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে শিলিগুড়ি শহরবাসী।