শিলিগুড়ির শালবাড়িতে ঈশ্বর তত্বের ওপর পড়াশোনার পর ডিগ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন ঃঈশ্বর কে, ঈশ্বরের রুপ কেমন তা নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা এবং ডিগ্রী পাওয়া যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ি শালবাড়ির বেথেল ইন্সটিটিউট ফর থিওলজিক্যাল স্টাডিজে ঈশ্বর তত্ব নিয়ে পড়াশোনা হচ্ছে নিঃশব্দে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অধ্যাপকরা এসে সেখানে ক্লাসও করিয়ে যাচ্ছেন। ঈশ্বরের কাছে পৌছনোর বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে কিন্ত ঈশ্বর একজনই, এই বিষয়কে সামনে রেখে ওই কলেজ থেকে ডিগ্রী নেওয়ার জন্য হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ সকলেই ভিড় আকরছেন।

এই থিওলজিক্যাল স্টাডিজের অধিকর্তা স্বদীপ্ত স্যামুয়েলড জানাচ্ছেন,২০০৬ সাল থেকে তাদের এই বিশেষ পাঠ্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ছয় মাস, তারপর এক বছরের কোর্স হয়। আগামী বছর মে মাসের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হবে তিন বছরের কোর্স। যে কোনও শাখার ছেলেমেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এই কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশ৷ ফর থিওলজিকাল এক্রিডিটেশনের অনুমোদন নিয়ে এই ব্যাচেলর অফ থিওলজিকাল স্টাডিজের কোর্স ফী ধার্য হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। স্নাতক স্তরের এই পাঠ্যক্রমে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়া হয়। বাইবেল থেকে আধ্যাত্মিক পাঠ দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য তথ্য ও তত্ব দিয়ে পড়ানো হয় ঈশ্বর কে, ঈশ্বরের স্বরুপ কি, মানুষ কে, মানুষের অস্তিত্ব কীভাবে এলো, মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি, কীভাবে আমরা আমাদেরকে ধ্বংস করছি প্রভৃতি বিষয়ে। খুব গভীরভাবেই সেখানে পড়ানো হয়, ঈশ্বর এক। কিন্তু বিভিন্ন জন বিভিন্ন মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌছন। স্বদীপ্তবাবু বলেন, আমরা এখন কে কোন ধর্মের মানুষ সেটা বেশি করে বুঝতে চাইছি। কিন্তু পরম ঈশ্বরকে আমরা বুঝতে চাইছি না।
গত বছর এই কেন্দ্র থেকে ১৮ জন বিভিন্ন ধর্মের ছাত্রছাত্রী এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ভুটানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জিগমে থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুরের মুসলিম ধর্মাবলম্বী জিশান্ত, বিহারের হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজকুমার মারাইয়া, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আলফ্রেড হেরংক, তমাস লেপচা সহ আরও অনেকে ধর্ম নয়, স্রেফ ঈশ্বরকে জানার জন্য এখান থেকে থিওলজির ওপর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সবাই ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সেখানে পড়াশোনা করছেন। আজ যখন চারদিকে ধর্মের নামে হানাহানি তখন ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে কিছু ছাত্রছাত্রীর কাছে এই থিওলজিক্যাল স্টাডিজের গুরুত্ব বাড়ছে। নৈতিকতার মান বৃদ্ধিতেও এই পড়াশোনা বাড়তি গুরুত্ব এনে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্বদীপ্তবাবু। তার স্ত্রী প্রেমলতা স্যামুয়েল সেখানে অধ্যক্ষা হিসাবে কাজ করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৫ জন শিক্ষক সেখানে এসে তাদের পাঠদদা করেন। আগামী বছরে নতুন তিন বছরের কোর্সের জন্য এখন পর্যন্ত ২৫ জন ছাত্রছাত্রী সেখানে নাম লিখিয়েছেন। ঈশ্বর তত্বের পাঠদানে সম্প্রীতি ও শান্তির পাঠদানও সেখানে একটি উল্লেখ করার মতো দিক।