করোনার মধ্যে আমেরিকায় কিভাবে দিন কাটছে অনাবাসী নিঃসঙ্গ ভারতীয়দের, জানাচ্ছেন মঞ্জুদেবী

শিল্পী পালিত ঃ করোনা দুর্যোগ আর লকডাউনের মধ্যে আমেরিকায় কিভাবে সময় কাটছে একাকী নিঃসঙ্গ ভারতীয়দের সুন্দর করে এই লেখায় মেলে ধরেছেন হুগলি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মঞ্জু মজুমদার–

বিগত চারবছর ধরে আমার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী। ,এখন ও মিনিয়াপোলিস এ আছে | যেখানে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনাটা ঘটেছিলো | আমি ওর কাছে আগেই খবরটা পেয়েছিলাম , কার্ফিউ জারি হয়ে গেছিলো | কিন্তু ডিটেলস এ আমি এতো জানতাম না, পরে খবরে দেখি | সেসময়ও খুবই চিন্তায় ছিলাম | কিন্তু ছেলে বললো, এতো চিন্তা কোরনা , আমি বাড়ি থেকে একদম বেরোইনা |

বিশ্বব্যাপী এই দুঃসহ করোনা পরিস্থিতিতে ছেলের যে কি মানসিক অবস্থা বা কিভাবে ওর সময় কাটছে ,, মা হয়ে একটু সবাইকে জানাতে ইচ্ছে হলো |

এই যাবৎ সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি আমেরিকাতে | কিন্তু এইজন্য ওই দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও জনগণের বেপরোয়া মনোভাব অনেকাংশে দায়ী | সামাজিক বাধানিষেধ এবং ঘরবন্দি হয়ে থাকাটা তারা এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেনা এবং অবাধে বিচরণ করছে | ছুটির দিনগুলোতে ওরা নানা জায়গায় ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পরছে |

এবার ছেলের ব্যাপারে দু এক কথা বলি। ও কিভাবে এই সময়টা অতিবাহিত করছে | প্রতিদিন ই ওর সাথে কথোপকথন কালে আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করি |পেশাগত বাধ্যবাধকতার জন্য ওকে দিনে প্রায় 10/12 ঘন্টা কাজ করতে হয় | শনি বা রবিবার অফিসিয়াল ছুটি কিন্তু ওদের নিজের কাজ শেষ করা বা এগিয়ে রাখার জন্য কিছুটা সময় ছুটির দিনগুলোতেও যায় | পরবর্তী সময়ে ওকে একেবারেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটাতে হয় | সপ্তাহে একদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও খাবারের রসদ সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিতভাবে নিজের গাড়িতে একবার বেরোতেই হয় | কিন্তু ও সুরক্ষাবিধি সম্বন্ধে অনেক বেশি সচেতন | তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদে আছে |

ওর অবসর যাপন কিভাবে কাটছে তার একটা বিবরণ জানাই | ওখানে তো সব কাজকর্মই নিজেদেরই করতে হয় ,,, রান্না , ওয়াশিং , ঘর পরিষ্কার সবকিছু | সেগুলো করে কিছুটা সময় কাটে , ও রান্নার ব্যাপারে খুব সৌখিন | সব কিছু রান্নাও করতে পারে এবং নিত্য নতুন রিসার্চ ওর খাবার বানানো নিয়ে | এখন বাড়িতে বন্দি থাকার কারণে সময় একটু বেশি পায় তাই নানারকম রান্না করে | এমনিতে ও খুব স্বাস্থ্য সচেতন , সেদ্ধ বা স্যালাড ছাড়া কিছু খায়না | লকডাউনের কারণে বাড়িতে রয়েছে তাই নানারকম রান্না করে সময় কাটানোর জন্য| গানবাজনা খুব ভালোবাসে , গিটার বাজায় , গল্পের বই ভীষণ প্রিয় | রাত কাটিয়ে দেয় বই পড়ে , জিম বন্ধ থাকার কারণে বাড়িতেই ছোটোখাটো জিমখানা করে নিয়েছে | ওতে বেশ খানিকটা সময় যায় | ভোরবেলা কোনসময় সাইক্লিং এ বেরিয়ে যায় একা সুরক্ষিত ভাবেই | কোনসময় রাতে একা লংড্রাইভ এ বেরিয়ে যায় | ভালো ভালো সিনেমার লিংক পাঠাই যেগুলো দেখে একটু সময় কাটাতে পারবে | কিন্তু একা থাকার জন্য এইরকম পরিস্থিতে খুবই মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছে | এক একসময় আমি ঘন্টা ঘন্টা কথা বলি ওকে একটু সঙ্গ দেবার জন্য , অনবরত উৎসাহিত করি | লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েরা চাকরি সূত্রে আমেরিকাতে আছে , প্রায় প্রত্যেকেরই এক অবস্থা | যারা কয়েকজন বন্ধু মিলে বা ফ্যামিলি নিয়ে আছে তাদের সময় তবুও কোনোরকম কাটছে কিন্তু একদম একা যারা থাকে তাদের জীবন সত্যিই দুর্বিসহ |

ওদের কষ্টটা আমাদের থেকে অনেক বেশি , আত্মীয় বন্ধুবান্ধব চেনা পরিবেশ থেকে অনেক দূরে | আমরা এখানে একা থাকলেও , কখনো চেনা একটা মুখ দেখতে পাই বা কথা বলি | ওরা ওখানে ভীষণ একা , অসহায়ের মতো জীবন কাটাচ্ছে | ভারতীয় সংস্কৃতি থাকার কারণে এতটা বেপরোয়া ও নির্বুদ্ধিতা এদের মধ্যে নেই , ছেলেও তো এই সংস্কৃতিতেই মানুষ | তাই সবাই যতটা পারে সাবধানেই থাকে | ওদের সত্যি খুব খারাপ সময় কাটছে ওখানে , বাধ্য হচ্ছে কোনোরকমে নিজেদের মানিয়ে নিতে | শেষ কি জানিনা |

Manju mazumder
21.7.2020
কলকাতা

128 G T Road
Uttarpara , Hooghly