শিল্পী পালিত ঃ করোনা দুর্যোগ আর লকডাউনের মধ্যে আমেরিকায় কিভাবে সময় কাটছে একাকী নিঃসঙ্গ ভারতীয়দের সুন্দর করে এই লেখায় মেলে ধরেছেন হুগলি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মঞ্জু মজুমদার–
![](https://www.khabarerghanta.in/wp-content/uploads/2019/05/green-tea.jpg)
বিগত চারবছর ধরে আমার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী। ,এখন ও মিনিয়াপোলিস এ আছে | যেখানে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনাটা ঘটেছিলো | আমি ওর কাছে আগেই খবরটা পেয়েছিলাম , কার্ফিউ জারি হয়ে গেছিলো | কিন্তু ডিটেলস এ আমি এতো জানতাম না, পরে খবরে দেখি | সেসময়ও খুবই চিন্তায় ছিলাম | কিন্তু ছেলে বললো, এতো চিন্তা কোরনা , আমি বাড়ি থেকে একদম বেরোইনা |
বিশ্বব্যাপী এই দুঃসহ করোনা পরিস্থিতিতে ছেলের যে কি মানসিক অবস্থা বা কিভাবে ওর সময় কাটছে ,, মা হয়ে একটু সবাইকে জানাতে ইচ্ছে হলো |
এই যাবৎ সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি আমেরিকাতে | কিন্তু এইজন্য ওই দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও জনগণের বেপরোয়া মনোভাব অনেকাংশে দায়ী | সামাজিক বাধানিষেধ এবং ঘরবন্দি হয়ে থাকাটা তারা এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেনা এবং অবাধে বিচরণ করছে | ছুটির দিনগুলোতে ওরা নানা জায়গায় ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পরছে |
এবার ছেলের ব্যাপারে দু এক কথা বলি। ও কিভাবে এই সময়টা অতিবাহিত করছে | প্রতিদিন ই ওর সাথে কথোপকথন কালে আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করি |পেশাগত বাধ্যবাধকতার জন্য ওকে দিনে প্রায় 10/12 ঘন্টা কাজ করতে হয় | শনি বা রবিবার অফিসিয়াল ছুটি কিন্তু ওদের নিজের কাজ শেষ করা বা এগিয়ে রাখার জন্য কিছুটা সময় ছুটির দিনগুলোতেও যায় | পরবর্তী সময়ে ওকে একেবারেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটাতে হয় | সপ্তাহে একদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও খাবারের রসদ সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিতভাবে নিজের গাড়িতে একবার বেরোতেই হয় | কিন্তু ও সুরক্ষাবিধি সম্বন্ধে অনেক বেশি সচেতন | তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদে আছে |
ওর অবসর যাপন কিভাবে কাটছে তার একটা বিবরণ জানাই | ওখানে তো সব কাজকর্মই নিজেদেরই করতে হয় ,,, রান্না , ওয়াশিং , ঘর পরিষ্কার সবকিছু | সেগুলো করে কিছুটা সময় কাটে , ও রান্নার ব্যাপারে খুব সৌখিন | সব কিছু রান্নাও করতে পারে এবং নিত্য নতুন রিসার্চ ওর খাবার বানানো নিয়ে | এখন বাড়িতে বন্দি থাকার কারণে সময় একটু বেশি পায় তাই নানারকম রান্না করে | এমনিতে ও খুব স্বাস্থ্য সচেতন , সেদ্ধ বা স্যালাড ছাড়া কিছু খায়না | লকডাউনের কারণে বাড়িতে রয়েছে তাই নানারকম রান্না করে সময় কাটানোর জন্য| গানবাজনা খুব ভালোবাসে , গিটার বাজায় , গল্পের বই ভীষণ প্রিয় | রাত কাটিয়ে দেয় বই পড়ে , জিম বন্ধ থাকার কারণে বাড়িতেই ছোটোখাটো জিমখানা করে নিয়েছে | ওতে বেশ খানিকটা সময় যায় | ভোরবেলা কোনসময় সাইক্লিং এ বেরিয়ে যায় একা সুরক্ষিত ভাবেই | কোনসময় রাতে একা লংড্রাইভ এ বেরিয়ে যায় | ভালো ভালো সিনেমার লিংক পাঠাই যেগুলো দেখে একটু সময় কাটাতে পারবে | কিন্তু একা থাকার জন্য এইরকম পরিস্থিতে খুবই মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছে | এক একসময় আমি ঘন্টা ঘন্টা কথা বলি ওকে একটু সঙ্গ দেবার জন্য , অনবরত উৎসাহিত করি | লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েরা চাকরি সূত্রে আমেরিকাতে আছে , প্রায় প্রত্যেকেরই এক অবস্থা | যারা কয়েকজন বন্ধু মিলে বা ফ্যামিলি নিয়ে আছে তাদের সময় তবুও কোনোরকম কাটছে কিন্তু একদম একা যারা থাকে তাদের জীবন সত্যিই দুর্বিসহ |
ওদের কষ্টটা আমাদের থেকে অনেক বেশি , আত্মীয় বন্ধুবান্ধব চেনা পরিবেশ থেকে অনেক দূরে | আমরা এখানে একা থাকলেও , কখনো চেনা একটা মুখ দেখতে পাই বা কথা বলি | ওরা ওখানে ভীষণ একা , অসহায়ের মতো জীবন কাটাচ্ছে | ভারতীয় সংস্কৃতি থাকার কারণে এতটা বেপরোয়া ও নির্বুদ্ধিতা এদের মধ্যে নেই , ছেলেও তো এই সংস্কৃতিতেই মানুষ | তাই সবাই যতটা পারে সাবধানেই থাকে | ওদের সত্যি খুব খারাপ সময় কাটছে ওখানে , বাধ্য হচ্ছে কোনোরকমে নিজেদের মানিয়ে নিতে | শেষ কি জানিনা |
Manju mazumder
21.7.2020
কলকাতা
128 G T Road
Uttarpara , Hooghly