করোনা পরীক্ষার কিয়স্ক বসানোর প্রস্তাবে সমাজসেবী তরুন মাইতি

তরুন মাইতিঃঃঃকরোনা ভাইরাস নিয়ে এখন লকডাউন চলছে। এই অবসরে খবরের ঘন্টার এই নিউজ ওয়েবপোর্টালে কিছু কথা শেয়ার করছি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়েস্টবেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ এসোসিয়েশনের দায়িত্ব নিয়ে উত্তরবঙ্গে এইচ আই ভি পজিটিভ বা এইডস ভাইরাস নিয়ে টানা ২৭ বছর ধরে কাজ করছি।

করোনা যেমন ভাইরাস ঘটিত রোগ। এইডসও তাই। যদিও দুটোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এইডস ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড, উইনডো, মোড অফ ট্রান্সমিশন, রেপ্লিকা কিভাবে বাড়ছে তা জানা গিয়েছে অনেক কিছু। আজ ৩৫ বছর হয়ে গেলো, এখনও এইডস ভাইরাসের সঠিক প্রতিষেধক বা টিকা এলো না। এ আর টি দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে এইডস রোগীকে। এ আর টি দেওয়ার জেরে এইডস বা এইচ আই ভি আক্রান্ত রোগী পঁচিশ ত্রিশ বছর বেঁচে থাকছেন।
করোনার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, এটি দ্রুত সংক্রামিত হয়। এইচ আই ভি অত দ্রুত সংক্রামিত হয় না। তবে দুটো ভাইরাসইকেই আমন্ত্রণ জানালে তারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এখন করোনা নিয়ে অনবরত গবেষণা চলছে। সব কিছু বিশদে জানা সম্ভব হয়নি। তবে করোনা নিয়ে আমাদের দরকার আরও কিছু গাইডলাইন। নাহলে লকডাউনের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকবে। ১৩০ কোটির দেশ ভারতের সকলের গণটেস্টিং করা সহজ কাজ নয়। দেশের সরকার তবুও চেষ্টা করছে।
তবে এজন্য উদাহরণ হিসেবে কেরালার কথা উল্লেখ করতে হয়। কেরালার বিভিন্ন স্থানে টেস্টিং এর জন্য কিয়স্ক খোলা হয়েছে। এইচ আই ভির ক্ষেত্রে শুরুতে আমরা রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডে কিয়স্ক খুলে খুব টেস্টিং করেছি। এইচ আই ভির ক্ষেত্রে লোক ভয় পায় পরীক্ষা করাতে। তবুও এখন সচেতনতা অনেক বেড়েছে। করোনার ক্ষেত্রেও প্রথম, দ্বিতীয় বিভিন্ন পর্যায়ে কিয়স্ক বসিয়ে পরীক্ষা করা যায়। কেরালায় করোনা ধরতে এরকম চল্লিশটি কিয়স্ক বসেছে। নিজের স্টেটাস জানতে অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছে। এইচ আই ভির ক্ষেত্রে পরীক্ষা করাতে ভয় একারনেই হোত যে, লোক জানতে পারলে একঘরে করে দেবে। করোনার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। তবে সুবিধাও আছে, করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জেরে ভালো হয়ে যাচ্ছে। শিলিগুড়িতে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ সীমান্ত বা স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ডে করোনা ধরতে অনেক কিয়স্ক বসানো যেতে পারে।
করোনার জেনেটিক বিশ্লেষণ নিয়েও গবেষণার কাজ চলছে। এরমধ্যে প্রোটিন, গ্লাইকোপ্রোটিন কি আছে তার সব কাজ বিশ্লেষণ হচ্ছে। সব কাজ হলে এই করোনাকে আরও ভালো করে জানা যাবে। তবে এটা যদি আর এন এ ভাইরাস হয় তবে অনেক সময় মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ডি এন এ হয়ে যায়। আবার মানুষের শরীরে আগে থেকেই ডি এন এ রয়েছে। ফলে করোনা প্রবেশের ইনকিউবিশন পর্বের চৌদ্দ দিনের মধ্যে কোনও লক্ষন প্রকাশ করছে না। অর্থাৎ এসিম্পটমটিক বিষয়। যাকে বলা যায় লক্ষন ছাড়া ভাইরাসের উপস্থিতি। বিষয়টি সেক্ষেত্রে খুব কঠিন ও জটিল। এইচ আই ভির ক্ষেত্রে রক্তে তা প্রবেশের দেড় মাসের মধ্যে বোঝা যায়। এই এইচ আই ভি আক্রান্তরা কাওকে রক্ত দিলে বিপদ। তাই কাওকে রক্ত দেওয়ার আগে এইচ আই ভি পরীক্ষা করে নেওয়া একান্ত জরুরি।
সবশেষে বলবো, এই করোনা ভাইরাস আমাদের কাছে এক অশনি সঙ্কেত। ভাইরাসটি চারদিকে ঘুরছে। তাই মানুষকে লকডাউন মেনে সতর্ক থাকা দরকার। এক্ষেত্রে কতগুলো জরুরি পরামর্শ দেবো। এক) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাড়িঘর পরিস্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করলে জামাকাপড়জুতো বাইরে ছেড়ে বারবার হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। হাত না ধুয়ে নাকেমুখেচোখে হাত দেওয়া যাবে না। বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দুই) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হ্যান্ড শেক চলবে না। কিসডে পালনের নামে রাস্তাঘাটে কিস দেওয়ার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। তিন) শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। আসন ব্যায়াম করতে হবে। বিষহীন সব্জি বা জৈব কৃষির টাটকা শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। কীটনাশক বা রাসায়নিক সারের শাকসবজি খেয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে গিয়েছে। শুদ্ধ খাওয়ার খেতে হবে। রংচংয়ের খাওয়ার বন্ধ করতে হবে। চার) ফার্স্ট ফুড খাওয়ার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে।পাঁচ) মাছমাংস খাওয়ার সময় ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে। ছয়)পরিবেশ দূষন কমাতে হবে। গাছ লাগাতে হবে বেশি করে। পরিবেশকে ভালোবাসতে হবে। সাত) মানুষকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সহনশীল হতে হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় দিতে হবে।
( লেখক তরুন মাইতি খবরের ঘন্টার উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য। তাছাড়া তিনি একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী। তিনি বহুদিন ধরে এইচআইভি বা এইডস আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করছেন।)